প্রত্যাশা আর প্রাপ্তির সমীকরণে প্রতিনিয়ত যুদ্ধে টিকে থাকতে হচ্ছে প্রবাসীদের। সুখের আশায় বিদেশে পড়ে থাকতে হয় তাদের। দেশে থাকা পরিবারের চাওয়া-পাওয়ার অনেকটাই নির্ভর করে তাদের উপার্জনের ওপর। কেউ কেউ পরিবারের মুখে হাসি আনতে পারলেও অনেকেই প্রবাসে অসহায়ত্বের গ্লানি টানছেন। ফাঁদ পেতে থাকা প্রতারকদের প্রতারণার শিকার হচ্ছেন তারা।

বিদেশে কোনো নাগরিকের ভিসা না থাকলে, ভিসার মেয়াদ না বাড়ানো হলে বা ভিসার অপব্যবহার হলে তাকে গ্রেফতার করা হয়। শাস্তি দেওয়া হয় এবং নিজ দেশে ফেরত পাঠিয়ে দেয় সরকার। সে দেশের আইন, রীতি-নীতি, ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতিকে কটাক্ষ করলে বা সামাজিক উৎপাত সৃষ্টি করলে তাকে সে দেশে অবস্থান করতে দেওয়া হয় না। এমনকি সে দেশের স্থানীয় রাজনীতিতে জড়িত হলে বা সরকারের কোন নীতির সমালোচনা করলে বা মিছিল মিটিং ইত্যাদিতে অংশ নিলেও তাকে দেশে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।

গোপনে অবৈধ ব্যবসা, পণ্য পাচার, মানব পাচার বা পতিতা বৃত্তিতে বাধ্য করা হলে সেটাও আইন বিরোধী এবং সেদেশে থাকার সুযোগ নাই। অর্থাৎ অপরাধ কাজে জড়িত হলে আইনের আওতায় আসতেই হবে। অনেকে অজান্তে বা জেনে বুঝেই অনেক অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে যান। চুরি, ছিনতাই, অপহরণ, ডাকাতি, সন্ত্রাস কর্ম, মেয়েদের উত্যক্ত করা ইত্যাদি কাজে জড়িয়ে সেদেশে অবস্থান করার সুযোগ নষ্ট করে এবং নিজ দেশের ইমেজ নষ্ট করে। কোনো দেশে প্রবেশের বিশেষ শর্ত থাকে। সে শর্ত মেনেই ভিসার জন্য আবেদন করা হয় এবং সে অনুযায়ী ভিসা ইস্যু করে। এই ভিসার শর্ত ভঙ্গ হলেই সেদেশে অবস্থান করার সুযোগ হারিয়ে যায়।

মালয়েশিয়ায় বৈধ ও অবৈধভাবে অন্তত ৮ থেকে সাড়ে ৮ লাখের মতো বাংলাদেশি রয়েছেন। দেশটির ১৩টি প্রদেশের পামওয়েল আর রাবার প্ল্যান্ট, মেটাল, ম্যানুফ্যাকচারিং, কন্সট্রাকশন, হাই স্কিলড স্পেসিফিক ওয়ার্ক, তেল-গ্যাস ও রিসাইক্লিং ইন্ডাস্ট্রি সবজায়গাই বাংলাদেশিরা দক্ষতার সঙ্গে কাজ করছেন, কুড়াচ্ছেন সম্মানও। স্বাধীনতার পর থেকে বন্ধু প্রতীমদেশ মালয়েশিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশের রয়েছে নিবিড় সম্পর্ক। এ সম্পর্কের ধারা বজায় রেখে শ্রম রফতানি, ব্যবসা বাণিজ্য পর্যটনে দুই দেশ এগিয়ে যাচ্ছে।

সম্প্রতি মালয়েশিয়ায় করোনাভাইরাসের বিস্তার রোধে সরকারের দেওয়া বিধিনিষেধ অমান্য করে অধিক সংখ্যক লোক জমায়েত হয়ে ঈদের নামাজ আদায় করাকে মালয়েশিয়ার নাগরিকরা ভালোভাবে নেয়নি। তাদের ধারণা মালয়েশিয়াকে তোয়াক্কা করেনি বিদেশি নাগরিকরা। বর্তমানে এটি জাতীয় ইস্যুতে পরিণত হয়েছে। ফলে একটি প্রাদেশিক পুলিশ প্রধান জাতির কাছে ক্ষমা চেয়েছেন। পুলিশ কঠোর অবস্থানে গিয়ে বিধি নিষেধ অমান্যকারীদের গ্রেফতার করেছে।

একইভাবে ঈদের রাতে নিয়ম অমান্য করে ঘর থেকে বের হয়ে আনন্দ করে কয়েকজন প্রবাসী। এতে শঙ্কিত প্রতিবেশী পুলিশে খবর দিলে তাদের গ্রেফতার করা হয়। মালয়েশিয়া সরকার বলেছে যারা এস ও পি মানেনি তাদের শাস্তি দেওয়া হবে। তাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠিয়ে দেওয়া হবে।

এই ধরনের নানান কর্মকাণ্ড বিদেশে থাকা অন্যান্য পেশার নাগরিকদের জীবন কঠিন করে তুলছে। কেননা বিদেশে যেকোনো ব্যক্তির ক্ষেত্রে আগে দেশ দেখা হয়। ভালো বা মন্দ কাজের জন্য মুহূর্তে সেদেশ সম্পর্কে ধারণা তৈরি হয়। তাই বিদেশে নাগরিকের যেকোনো কাজ দেশের ইমেজের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ।

ভুলে বা ইচ্ছায় বিধিভঙ্গ করে বিপদে পড়ছেন প্রবাসীরা। ইমিগ্রেশন আইন বলে, বিদেশিদের অধিকার হলো ভিসা। এই ভিসার শর্ত মেনে চললেই অধিকার সুরক্ষিত থাকে। বিদেশি ব্যক্তি সুরক্ষিত থাকবেন কি না নিজেকে ঠিক করতে হবে। ফলে সেদেশ সম্পর্কে ধারণা নিয়েই বিদেশে যাওয়া হয়। 

নন রেসিডেন্ট বাংলাদেশি সেন্টারের প্রেসিডেন্ট এস এম শেকিল চৌধূরী বলেন, প্রবাসে যেই হোক না কেনো শর্ত মেনে না চললে সেদেশ সহ্য করে না। তাকে আইনের আওতায় নিয়ে আসে, শাস্তি দেয় এবং বহিষ্কার করে। পরে বিদেশে অবস্থান করে আয় রোজগার করা যায় না, খালি হাতে ফিরতে হয়। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এমনকি যেদেশ বিদেশিদের আশ্রয় দেয় সেখানেও নিয়মের বাইরে কিছু করার সুযোগ নেই।

অভিবাসন বিষয়ক সাংবাদিক মিরাজ হোসেন গাজী বলেন, বিদেশে সবচেয়ে বেশি মানুষ বাংলাদেশ থেকে যায়। তারা নিয়োগ চুক্তি সম্পাদনের পর সেদেশ সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা নিয়েই যায়। বিদেশের মাটিতে অধিকাংশ প্রবাসীর সুনাম আছে। সামান্য অংশ নানান ধরনের প্রলোভনে বা নিজ ইচ্ছায় এমন কিছু করে, যার ফলে নিজেকে রক্ষা করতে পারে না। এতে সেদেশে লোক পাঠানো কঠিন হয়ে যায়। যারা সেদেশে অবস্থান করে, তাদের জন্যও অনেক কঠিন হয়। তাই এসব বুঝে বিদেশে অবস্থান করতে হবে। যে সুযোগ পেয়েছে, সেটার সঠিক ব্যবহার করতে হবে। কোনো সমস্যা হলে নিয়োগকর্তা এবং সেদেশে অবস্থিত দূতাবাসকে জানাতে হবে।

এমএইচএস