মালয়েশিয়ায় ডিটেনশন ক্যাম্পে ১০৫ জন বিদেশি মৃত্যুবরণ করেছেন। দেশটির অভিবাসন বিভাগের রেকর্ড অনুযায়ী, ২০২০ সাল থেকে চলতি বছরের ২৩ আগস্ট পর্যন্ত অভিবাসন আটক কেন্দ্র, পুলিশ লকআপ এবং কারাগারে বন্দি অবস্থায় এসব বিদেশির মৃত্যু হয়েছে। সম্প্রতি দেশটির সংসদে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী দাতুক সেরি হামজা জয়নুদ্দিন এ তথ্য জানিয়েছেন।

সবচেয়ে বেশি সংখ্যক মারা গেছেন ইন্দোনেশিয়ান নাগরিক। তারপরে ভারত, মিয়ানমার, বাংলাদেশ, কম্বোডিয়া, নাইজেরিয়া এবং ভিয়েতনামের নাগরিক রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছেন তিন জন বাংলাদেশি।

চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ২৩ আগস্ট পর্যন্ত ইমিগ্রেশন ডিটেনশন সেন্টারে ৬৫ জন বন্দি মারা যান। এর মধ্যে ২০ জন ফিলিপাইনের নাগরিক, দুই জন ভারতের এবং দুই জন ভিয়েতনামের নাগরিক। বতসোয়ানা, ইন্দোনেশিয়া, ইরান এবং মিয়ানমারের একজন করে নাগরিক মারা গেছেন।

বন্দি শিবিরে ১০৫ জন বিদেশির মৃত্যুর বিষয়ে ১ অক্টোবর অভিবাসন বিভাগের মহাপরিচালক খায়রুল জাজাইমি দাউদ এক বিবৃতিতে এসব তথ্য জানিয়েছেন।

এদিকে মালয়েশিয়ায় বিভিন্ন কারণে অবৈধ হয়ে আটক এবং অভিবাসন আইন লঙ্ঘনের দায়ে সাজা ভোগ করছেন প্রায় ১৬৭৮ জন বাংলাদেশি। অনেকে সাজা শেষে বিভিন্ন ডিটেনশন ক্যাম্পে দেশে ফেরার অপেক্ষায় রয়েছেন। তবে বন্দির সংখ্যা দুই হাজারের বেশি হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

বন্দিদের সঙ্গে স্বজনদের সাক্ষাতের কোনো সুযোগ নেই। যতদিন বন্দি থাকবে ততদিন বাইরের পৃথিবীর সঙ্গে তাদের যোগাযোগ করার কোনো সুযোগ থাকে না। ভেতরে বন্দিদের সঙ্গে আসলে কি হচ্ছে তা বাইরে এসে কেউ প্রকাশ করতে চান না। সাজার মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও অনেকে নানা জটিলতায় নিজ দেশে ফেরত যেতে পারছেন না। পর্যাপ্ত তথ্য প্রমাণের অভাব, মেয়াদহীন পাসপোর্ট, বিমানের টিকিট করার অর্থ না থাকা, দূতাবাস থেকে ডকুমেন্ট (টিপি) পাঠাতে বিলম্ব এসব কারণে নিজ দেশে ফিরতে জটিলতায় পড়েন অনেকে। তাছাড়া অনেকের সঙ্গে কোনো ডকুমেন্টই থাকে না। এসব ক্ষেত্রে দীর্ঘ জটিলতার মুখে পড়তে হয়।

দূতাবাস সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেরি হওয়ার মূল কারণ হচ্ছে যারা পাসপোর্ট ছাড়া আটক হন তাদের তথ্য ডিটেনশন সেন্টারে পাঠাতে হলে আগে দেশ থেকে তথ্য আসতে হয়। সেক্ষেত্রে ওই ব্যক্তির নিজ এলাকার প্রশাসন থেকে তথ্য-প্রমাণ জোগাড় করতে অনেক সময় লেগে যায়। আবার দেখা গেছে, সব ডকুমেন্ট আছে কিন্তু টিকিট কেনার অর্থ নেই।

বন্দিদের স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মালয়েশিয়ায় আটকের পর সাজা হলে ঘাটে ঘাটে ভোগান্তিতে পড়তে হয়। ডকুমেন্ট সংগ্রহসহ নিজ দেশে ফেরা পর্যন্ত এ ভোগান্তির কোনো শেষ নেই। কারণ যে জেলে বন্দি আছে, মালয়েশিয়ায় তার কোনো স্বজন নেই এবং বাইরের পৃথিবীর সঙ্গে তাদের কোনো সংযোগ নেই। সে কীভাবে দূতাবাস থেকে তার ডকুমেন্ট সংগ্রহ করবে? আবার বিমান টিকিট ক্রয় করবে? এসব অসঙ্গতির কারণেই নিজ দেশে প্রত্যাবর্তনে মাসের পর মাস বছর পর্যন্ত গড়ায়। যখন সে খালি হাতে ধরা পড়ল সে কোথায় পাবে টিকিট কেনার হাজার রিঙ্গিত?

তাদের স্বজনরা দাবি করেছেন, বন্দিদের যেন সরকারি খরচে নিজ দেশে নেওয়া হয়। যেমনটি করেছেন গত সপ্তাহে মায়ানমারের জান্তা সরকার। জান্তা সরকার সামরিক বিমান পাঠিয়ে নিজ দেশের জেলবন্দিদের ফিরিয়ে নিয়ে গেছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, অবৈধ হয়ে কিংবা অভিবাসন আইন লঙ্ঘনের দায়ে আটক হলে প্রথমে তাদের ১৪ দিনের রিমান্ডে রাখা হয়।  তারপর ১৪ দিন শেষে আদালতে হাজির করে সাজা ঘোষণা করার পর জেলখানায় সাজা ভোগ করতে হয়। জেলখানার সাজা শেষ হলেই ডিটেনশন সেন্টারে রাখা হয়। তারপর অনির্দিষ্ট সময় দেশে ফেরার অপেক্ষায় থাকতে হয়।

দূতাবাসের সংশ্লিষ্টরা বলছেন, যাবতীয় প্রক্রিয়া মালয়েশিয়ার ইমিগ্রেশন সম্পন্ন করে। যাদের বৈধ পাসপোর্ট আছে তাদের ইমিগ্রেশন সরাসরি দেশে ফেরত পাঠিয়ে দেয়। এক্ষেত্রে হাইকমিশনের কোনো কাজ নেই। এরমধ্যে কেবল যাদের বৈধ ট্রাভেল ডকুমেন্ট নেই বা পাসপোর্টের মেয়াদ শেষ হওয়ার ফলে ট্রাভেল পারমিট দরকার, তাদের আবেদনের প্রেক্ষিতে ট্রাভেল পারমিট (টিপি) ইস্যু করা হয়।

এক্ষেত্রে ব্যক্তি যে ক্যাম্পে থাকেন সেই ক্যাম্পের মাধ্যমে টিপি আবেদন হাইকমিশনে পাঠাতে হয়। এরপর হাইকমিশন আবেদনে উল্লেখিত তথ্য, পাসপোর্ট তথ্য-যাচাই করে নাগরিকত্ব নিশ্চিত হয়ে টিপি ইস্যু করে। হাইকমিশন থেকে নিয়মিত ক্যাম্প ভিজিট করে বাংলাদেশি নাগরিকের সাক্ষাৎকার নিয়ে দ্রুত দেশে পাঠানো নিশ্চিত করা হয়।

এসএসএইচ