সশস্ত্র বাহিনী দিবস উদযাপন করেছে মালয়েশিয়ার বাংলাদেশ হাইকমিশন। এ উপলক্ষে বৃহস্পতিবার (২৫ নভেম্বর) মালয়েশিয়ার হোটেল রয়েল চুলান কুয়ালালামপুরে বাংলাদেশ হাইকমিশনের প্রতিরক্ষা শাখার সার্বিক ব্যবস্থাপনায় একটি সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। 

অনুষ্ঠানে মালয়েশিয়া আমর্ড ফোর্সেসের সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল তানশ্রী দাতুক জমরুজ বিন মোহাম্মদ জেইন প্রধান অতিথি হিসেবে সস্ত্রীক উপস্থিত ছিলেন। এছাড়াও বিভিন্ন দেশের প্রতিরক্ষা উপদেষ্টা, মালয়েশিয়ার সশস্ত্র বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, সুশীল সমাজ ও বাংলাদেশ কমিউনিটির বিশিষ্টজনেরা উপস্থিত ছিলেন।

কমান্ডার রাজনে ইবনে ওয়াহিদের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানের শুরুতে বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়ার জাতীয় সংগীত পরিবেশিত হয়। এরপর মালয়েশিয়াতে প্রতিরক্ষা উপদেষ্টা কমোডোর মোস্তাক আহমেদ তার স্বাগত ভাষণে সশস্ত্র বাহিনী দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরেন।

এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আহ্বানে সাড়া দিয়ে বাঙালি মুক্তিকামী মানুষ যখন সশস্ত্র স্বাধীনতা সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ে, তাদের সঙ্গে সশস্ত্র বাহিনীর বীর সদস্যরাও যোগ দেন। দীর্ঘ ৯ মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের শেষ পর্যায়ে ১৯৭১ সালের ২১ নভেম্বর প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনী একযোগে দখলদার পাকিস্তান বাহিনীর বিরুদ্ধে সুসংগঠিত আক্রমণ রচনা করে, যার ফলশ্রুতিতে ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ পৃথিবীর মানচিত্রে একটি স্বাধীন দেশ হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত হয়। 

প্রতিরক্ষা উপদেষ্টা বলেন, ফোর্সেস গো-২০৩০ অনুযায়ী সশস্ত্র বাহিনীর আধুনিকায়ন প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে বর্তমান সরকারের এক বলিষ্ঠ পদক্ষেপ, যা জাতির পিতার স্বপ্নের আলোকে অগ্রসরমান। প্রতিরক্ষা উপদেষ্টা মালয়েশিয়া সশস্ত্র বাহিনীর সঙ্গে বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর সম্পর্ক উন্নয়নে মালয়েশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের আন্তরিক সহযোগিতার প্রশংসা করেন এবং এ সম্পর্ক আরও সুগভীর করার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। পাশাপাশি তিনি বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় যৌথ অনুশীলন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও বিভিন্ন সামরিক প্রশিক্ষণে সৌহার্দ্য ও অংশগ্রহণ বৃদ্ধির ব্যাপারে বিভিন্ন দেশের সশস্ত্র বাহিনীর সঙ্গে কাজ করতে বাংলাদেশের আগ্রহের কথা পুনর্ব্যক্ত করেন।

তিনি আরও করেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তি ও জাতির জনকের জন্মশতবার্ষিকী এক অভূতপূর্ব সমন্বয় এ বছরের সশস্ত্র বাহিনী দিবসকে বিশেষ মহিমায় উদ্ভাসিত করেছে। একই সঙ্গে এই বছর বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়ার সুদীর্ঘ ৫০ বছরের কূটনৈতিক বন্ধনকে সমুজ্জ্বল করেছে।

অনুষ্ঠানে মালয়েশিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার মো. গোলাম সারোয়ার তার বক্তব্যে বিশ্বের বুকে বাংলাদেশের জাগরণ এবং প্রধানমন্ত্রীর বলিষ্ঠ নেতৃত্বের কথা ব্যক্ত করেন। বিশেষ করে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির পাশাপাশি আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক সম্পর্ক উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে বাংলাদেশের আত্মপ্রকাশ আজ সর্বজন স্বীকৃত। এই অপার সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে তিনি উপস্থিত সবাইকে বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান জানান।

তার বক্তব্যে বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে সাময়িক আশ্রয় দেওয়ার মাধ্যমে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ও সরকারের উদার মানবিকতার বিষয়টি ফুটে ওঠে। করোনা মহামারির দুর্যোগ মোকাবিলায় বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়ার দৃঢ় প্রত্যয়ের বিষয়টিও তিনি উল্লেখ করেন।

তিনি মালয়েশিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশের নিবিড় সৌহার্দ্য ও সহযোগিতাপূর্ণ সম্পর্কের কথা তুলে ধরেন এবং ভ্রাতৃত্বপূর্ণ এই সম্পর্ক ভবিষ্যৎ দিনগুলোতে আরও অগ্রগতির পাথেয় হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন। 

জাতির জনকের জন্মশতবার্ষিকী এবং মালয়েশিয়া-বাংলাদেশের কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তির এই মাহেন্দ্রক্ষণে বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনীর গর্বিত ভূমিকার কথাও উল্লেখ করেন হাইকমিশনার গোলাম সারোয়ার।

অনুষ্ঠানে অতিথিরা এক নৈশভোজে অংশগ্রহণ করেন। নৈশভোজ চলাকালীন উদীয়মান বাংলাদেশ এবং সশস্ত্র বাহিনীর উন্নয়ন, সশস্ত্র বাহিনীর যৌথ অনুশীলন এবং সশস্ত্র বাহিনী দিবস-২০২১ উপলক্ষে নির্মিত বিভিন্ন ভিডিও প্রদর্শন করা হয়।

ওএফ