চলমান করোনা অর্থনৈতিক সংকট পুনরুদ্ধারে ২০২২ সালের মধ্যে ৬ লাখ বিদেশি কর্মীর প্রয়োজন মালয়েশিয়ায়। ফেডারেশন অফ মালয়েশিয়ান ম্যানুফ্যাকচারার্স (এফএমএম) শনিবার এক বিবৃতিতে বলেছে, দেশের শিল্প খাত, বিশেষ করে রফতানি খাতগুলো বর্তমান পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠতে আগামী বছরের মধ্যে ৬ লাখেরও বেশি বিদেশি কর্মী পূরণ করতে হবে। ব্যবসাগুলোকে প্রাক-মহামারি স্তরে ফিরিয়ে আনার জন্য তীব্র জনবল সংকটের সম্মুখীন হচ্ছে।

অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার ও ব্যবসা পুনরুজ্জীবনে সহায়তা করতে বিদেশি কর্মীদের ওপর বর্তমান স্থবিরতা প্রত্যাহারের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে এফএমএম।

এফএমএমর সভাপতি তান শ্রী সোহ থিয়ান লাই বলেন, যদি জরুরি জনবলের প্রয়োজনীয়তার দ্রুত সমাধান না হলে উৎপাদন শিল্পগুলোর পুনরুদ্ধার বিঘ্নিত হতে পারে।

জনশক্তি ঘাটতির বিষয়টি দুটি সাম্প্রতিক সমীক্ষায় উঠে এসেছে উল্লেখ করে সোহ বলেন, অক্টোবরের শুরুতে ২৫২ জন উৎপাদকের জনবলের চাহিদার উপর সমীক্ষা করে প্রায় ২২ হাজার শ্রমিকের ঘাটতি খুঁজে পেয়েছে।

সমীক্ষায় নিম্ন/অদক্ষ সাধারণ কর্মী বিভাগে প্রায় ১৪ হাজার এবং প্রায় ৭ হাজার দক্ষ সাধারণ কর্মী, প্রযুক্তিবিদ, যন্ত্রবিদ ও প্রকৌশলীর ঘাটতি পাওয়া গেছে। এছাড়া খাদ্য ও পানীয়, রাসায়নিক ও রাসায়নিক পণ্য, তৈরি ধাতু এবং রাবার পণ্য শীর্ষ পাঁচটি উত্পাদনকারী উপ-খাতের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ঘাটতি রয়েছে।

সোহ বলেন, দেশব্যাপী শ্রমিকের ঘাটতির সংখ্যা শুধুমাত্র ২৫২টি কোম্পানির তথ্য, কিন্তু এফএমএমর ৩ হাজার ৫০০টিরও বেশি উত্পাদনকারী কোম্পানির সদস্যপদ রয়েছে। অর্থাৎ সামগ্রিকভাবে কর্মীর ঘাটতি রয়েছে।

তিনি আরও উল্লেখ করেন, একই ধরনের আরেকটি সমীক্ষা করে ন্যাশনাল চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি মালয়েশিয়ার সদস্য ৮৩৫টি কোম্পানির ওপর। এতে ৭৭ হাজার ৭২১ জন শ্রমিকের ঘাটতি খুঁজে পেয়েছিল। যাদের একা উৎপাদনকারীর জন্য ৭৭.১ শতাংশ, ১১.২ শতাংশ নির্মাণ কাজে এবং অন্যান্য পরিষেবা খাতে ৮.৯ শতাংশ।

সেক্টর অনুসারে বিদেশি কর্মীদের কর্মসংস্থানের প্রবণতার ওপর ভিত্তি করে সোহ বলেন, উৎপাদন খাতে ৪৪ শতাংশ কমে এখন ৩ লাখ ৯১ হাজার ৮৩১ বিদেশি কর্মী হয়েছে, যেখানে ২০১৯ সালে ৬ লাখ ৯৭ হাজার ১২৪ জন বিদেশি কর্মী ছিল। 

তিনি বলেন, এই ড্রপটি মূলত শ্রমিকদের কারণে যাদের পারমিট ও কর্মসংস্থানের শর্তাদি মহামারি চলাকালীন মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় কর্মীরা নিজ দেশে ফিরে গিয়েছে।

দীর্ঘমেয়াদে বিদেশি কর্মীদের নির্ভরতা কমাতে কাঠামোগত নীতি পরিবর্তনসহ সমন্বিত প্রচেষ্টা গ্রহণের উপর জোর দেন তিনি। 

এদিকে বিদেশি কর্মীদের নতুন নিয়োগে স্থবিরতার ফলে কর্মীর ঘাটতি পূরণে স্থানীয়দের কাজে নিয়োগের জন্য সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে, ২০২০ সালের চতুর্থ ত্রৈমাসিকের (কিউ ৪ ২০২০) উত্পাদন খাতই ছিল একমাত্র অর্থনৈতিক খাত যার ৩ শতাংশ ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি ছিল এবং এই কর্মক্ষমতা ২০২১ সালের প্রথম প্রান্তিকে আরও শক্তিশালী প্রবৃদ্ধির সঙ্গে অব্যাহত ছিল, যার বৃদ্ধির সঙ্গে উত্পাদন খাত নেতৃত্ব দিয়েছিল যা ৬.৬ শতাংশ।

২০২১ সালের দ্বিতীয় প্রান্তিকে ২৬.৬ শতাংশ বৃদ্ধির সঙ্গে সেক্টরটি ২০২১ সালের তৃতীয় প্রান্তিকে একটি ছোট সংকোচন মোকাবিলা করছে। ২০২০ সালে এই খাতটি রফতানিতে একটি উল্লেখযোগ্য অবদান রাখে। ইলেকট্রনিক পণ্য ২০২০ সালে মালয়েশিয়ার মোট রফতানির  ৩৯.৪ শতাংশ বা ৩৮৬.১১ বিলিয়ন রিঙ্গিত আয় করে যা সব থেকে বেশি।

শিল্পগুলোর উৎপাদনে বিদেশি কর্মীদের ওপর নির্ভর করা ছাড়া কোনো বিকল্প নেই, কারণ স্থানীয়রা এসব থ্রি ডি সেক্টরে কাজ করতে আগ্রহী নয়। বর্তমানে স্বল্পমেয়াদী ব্যবসা ও অর্থনীতির পুনরুজ্জীবনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এসব সমস্যা সমাধানে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন এফএমএমর সভাপতি তান শ্রী সোহ থিয়ান লাই।

ওএফ