রোগাক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর পর মালয়েশিয়ার হাসপাতালের মর্গে পড়ে থাকা প্রবাসী গাইবান্ধার মো. জহিরুল ইসলাম জবুরের (৫৫) মরদেহ আড়াই মাস পর গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর রাত ৯টার দিকে একটি ফ্লাইটে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছে। লাশটি গ্রহণ করেন জহিরুল ইসলামের ভাতিজী মোছা. রোমানা আক্তার।

এর পরের দিন ১ জানুয়ারি জহিরের গ্রামের বাড়ি গাইবান্ধা সদর উপজেলার বিষ্ণুপুর গ্রামে দাফন সম্পন্ন করা হয়। জহিরুল ইসলাম জবু গাইবান্ধা সদর বিষ্ণুপুর গ্রামের কবির পাড়ার মৃত হোসেন আলী মুন্সির পুত্র। জহির ২৭ বছর আগে চাকরি নিয়ে মালয়েশিয়ায় গিয়েছিলেন। দেশে বিয়ে না করায় তার কোনো স্ত্রী-সন্তান ছিল না। বাবা-মা আগেই মারা গেছেন।

গত বছরের ১৬ অক্টোবর জন্ডিস ও লিভারের রোগে আক্রান্ত হয়ে মালয়েশিয়ার ইপুহ এলাকার রাজা হাসপাতালে মারা যান। তার লাশ দেশে নেওয়ার সামর্থ পরিবারের না থাকায় হাসপাতালের মর্গে পড়েছিল ১৭ দিন। এ সময় বাংলাদেশের বিভিন্ন দৈনিক ও অনলাইন পোর্টালে ২ নভেম্বর সংবাদ প্রকাশিত হয়েছিল। মরদেহ দেশে ফেরত পাঠাতে মালয়েশিয়ার কোনো কমিউনিটি বা সংগঠন এগিয়ে না আসায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ মালয়েশিয়ায় দাফন করার জন্য সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় ছিল।

সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার পর মানবিক সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে এগিয়ে আসে মালয়েশিয়ার বাংলাদেশ চেম্বারস অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ, লন্ডনের ভয়েস ফর গ্লোবাল বাংলাদেশি সংগঠন এবং জনহিতৈষী প্রবাসীরা। জহিরের মরদেহ দেশে পাঠাতে অর্থের যোগানসহ অন্যান্যরা সহযোগিতায় এগিয়ে আসেন মালয়েশিয়া বাংলাদেশ চেম্বারস অ্যান্ড কমার্স ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি মাহবুব আলম শাহ। জহিরের তথ্য ও উপাত্তসহ দেশের মন্ত্রণালয় থেকে ক্লিয়ারেন্স সংগ্রহ করেন কুয়ালালামপুরের বাংলাদেশ দূতাবাসের সংশ্লিষ্টরা।

লাশটি দেশে পাঠাতে নানা জটিলতায় পড়তে হয়েছে প্রবাসী নেতাদের। প্রবাসীদের লাশ দেশে পাঠানোর প্রক্রিয়া সহজের দাবি জানিয়ে বলেন, শুধুমাত্র বাংলাদেশের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় থেকে ক্লিয়ারেন্স নিতেই ২ মাস সময় লেগেছে। এ দিকে জহির মরদেহ মর্গে থাকার পরও পচে-গলে গেছে। দেশের বাড়িতে নিয়ে দাফনের আগে লাশের মুখ দেখতে পারেনি স্বজনরা। দ্রুত সময়ের মধ্যে দাফন সম্পন্ন করতে হয়েছে।

লাশ দেশে প্রেরণ বিলম্বের কারণ জানতে চাইলে কুয়ালালামপুরের বাংলাদেশ দূতাবাসের সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, জহিরের বৈধ বা ভ্যালিড কোনো পাসপোর্ট ও ভিসা ছিল না, এমনকি মৃত্যুর সময় তার সঙ্গে যে পাসপোর্টের ফটোকপি পাওয়া গিয়েছিল সেটা ছিল নরসিংদী জেলার অন্য এক ব্যক্তির, পরে অনেক খোঁজাখুঁজির পর জানা গেল জহিরের আসল ঠিকানা গাইবান্ধা জেলার সদরে। 

তিনি আরও বলেন, তার যথাযথ ডকুমেন্টস না থাকার কারণে সরকারের যথাযথ কর্তৃপক্ষের ক্লিয়ারেন্স নিতে এত সময় লেগেছে।

এ দিকে লন্ডনের ভয়েস ফর গ্লোবাল বাংলাদেশি সংগঠন থেকে জহিরের পরিবারকে আর্থিক সহায়তা প্রদানের আশ্বাসও পাওয়া গেছে। সম্প্রতি সংগঠনের নেতারা এ বিষয়ে ভার্চুয়ালি আলোচনাও করেছেন।  

ওএফ