ছবি : সংগৃহীত

কিয়ামতের দিন হবে বিভীষিকাময়। সেদিন কেউ কারো হবে না। প্রত্যেকে ‘ইয়া নাফসি, ইয়া নাফসি’ বলে চিন্তিত হবে। পবিত্র কোরআনে এই  এসেছে, ‘সেদিন মানুষ নিজের ভাই, নিজের মা, নিজের পিতা, নিজের স্ত্রী ও সন্তানাদি থেকে পালাবে। তাদের মধ্যে প্রত্যেক ব্যক্তির ওপর সেদিন এমন সময় এসে পড়বে, সে নিজেকে ছাড়া আর কারো প্রতি লক্ষ করার মতো অবস্থা থাকবে না।’ (সুরা : আবাসা, আয়াত : ৩৪-৩৭)

হাদিসে এসেছে, কিয়ামতের দিন হাশরের ময়দানে মানুষ তিন অবস্থায় উত্থিত হবে— এক. একদল বাহনে করে, দুই. আরেকদল পায়ে হেঁটে, তিন. অন্য দল মাথায় হেঁটে। মহানবী (সা.) বলেন—

অবশ্যই মানুষ তিনটি দলে বিভক্ত হবে। একদল আরোহী স্বাদগ্রহণকারী ও মর্যাদাবান। আরেকদল রয়েছে, ফেরেশতারা চেহারায় হাঁটিয়ে যাদের দোজখে নিয়ে যাবেন। আরেকদল পায়ে হেঁটে হাশরে উত্থিত হবে।

(নাসায়ি, মিশকাত, পৃষ্ঠা : ৪৮৪)

কিয়ামতের দিনের ভয়াবহতা ও বিভীষকার কথা অনেক হাদিসে এসেছে। এক হাদিসে রয়েছে, ‘হাশরের মাঠে ভয়ে প্রত্যেকে বলতে থাকবে— আমাকে বাঁচান, আমাকে বাঁচান। শুধু মুহাম্মদ (সা.) উম্মত নিয়ে [নিজেকে ছাড়া] চিন্তা করবেন।’ (বুখারি, হাদিস : ২৭১২)

হাশরের মাঠের ভয়াবহতার কথা জানলে ভয়ে লোমকুপ দাঁড়িয়ে যায়। কিন্তু কঠিন এই অবস্থাতেও কিছু মানুষের সেদিন বিচার হবে না। তারা হিসাব দেওয়া ছাড়া জান্নাতে যাবে। কারা সেই সৌভাগ্যবান— এই বিষয়ে আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিস শরিফে এসেছে, একদিন রাসুল (সা.) বলেন, ‘আমার কাছে সব উম্মতের লোকদের উপস্থাপন করা হলো। আমি দেখলাম, কোনো নবীর সঙ্গে মাত্র সামান্য কয়জন (তিন থেকে সাতজন অনুসারী) আছে। কোনো নবীর সঙ্গে একজন অথবা দুজন লোক রয়েছে। কোনো নবীকে দেখলাম তার সঙ্গে কেউ নেই। ইতোমধ্যে বিরাট একটি জামাত আমার সামনে পেশ করা হলো। আমি মনে করলাম, এরাই বুঝি আমার উম্মত। কিন্তু আমাকে বলা হলো— এটা মুসা আলাইহিস সালাম ও তার উম্মতের জামাত। কিন্তু আপনি অন্য দিগন্তে দেখুন।

অতঃপর আমি সেই দিকে তাকাতেই আরো একটি বিরাট জামাত দেখতে পেলাম। আমাকে বলা হলো- এটি আপনার উম্মত। আর তাদের সঙ্গে এমন ৭০ হাজার লোক আছে, যারা বিনা হিসাবে ও বিনা আজাবে সরাসরি জান্নাতে প্রবেশ করবে। এ কথা বলে তিনি (আল্লাহর রাসুল) উঠে নিজ ঘরে প্রবেশ করলেন। এদিকে লোকেরা (উপস্থিত সাহাবিরা) ওই সব জান্নাতি লোকদের ব্যাপারে বিভিন্ন আলোচনা শুরু করে দিল যে, (কারা হবে সেই লোক) যারা বিনা হিসাবে ও বিনা আজাবে জান্নাতে প্রবেশ করবে?!

কেউ কেউ বলল- সম্ভবত ওই লোকেরা হবে আল্লাহর রাসুল (সা.)-এর সাহাবা। আবার কেউ বলল, বরং সম্ভবত ওরা হলো- যারা মুসলিম হিসেবে জন্মগ্রহণ করেছে এবং আল্লাহর সঙ্গে কখনো কাউকে শরিক করেনি। আরো অনেকে অনেক কিছু বলল।

কিছুক্ষণ পরে আল্লাহর রাসুল (সা.) তাদের কাছে বের হয়ে এসে বলেন, তোমরা কী ব্যাপারে আলোচনা করছ? তারা ব্যাপারটি খুলে বললে আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেন, (বিনা হিসাবে জান্নাতি লোক) হলো যারা— (ক) দাগ কেটে রোগের চিকিৎসা করায় না। (খ) অন্যের কাছে রুকইয়া বা ঝাড়ফুঁক করে দিতে বলে না। (গ) কোনো জিনিসকে অশুভ লক্ষণ বলে মনে করে না। (ঘ) বরং তারা শুধু আল্লাহর ওপর ভরসা রাখে।

এ কথা শুনে উক্কাশাহ ইবনু মিহসান নামক একজন সাহাবি উঠে দাঁড়িয়ে বললেন, (হে আল্লাহর রাসুল!) আপনি আমার জন্য দোয়া করুন, আল্লাহ যেন আমাকে তাদের দলভুক্ত করে দেন!

তিনি বলেন, তুমি তাদের মধ্যে একজন। অতঃপর আরো এক ব্যক্তি উঠে দাঁড়িয়ে বলল, আপনি আমার জন্যও দোয়া করুন, যেন আল্লাহ আমাকেও তাদের দলভুক্ত করে দেন। তিনি বলেন, (এ ক্ষেত্রে) উক্কাশাহ তোমার ছাড়িয়ে গেছে।’ (বুখারি, হাদিস : ৫৭০৫; তিরমিজি, হাদিস : ২৪৪৬)