প্রতীকী ছবি

কিছুদিন পরেই রমজান শুরু হয়ে যাচ্ছে। রমজান একমাত্র মাস— যে মাসের কথা পবিত্র কোরআনে কারিমে উল্লেখ করা হয়েছে। অন্য কোনো মাসের নাম সরাসরি কোরআনে আসেনি, নাম ধরে বলা হয়নি। তবে রমজান নামসহ সরাসরি কোরআনে উল্লেখ রয়েছে।

আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন-

شَهْرُ رَمَضَانَ الَّذِي أُنزِلَ فِيهِ الْقُرْآنُ هُدًى لِّلنَّاسِ وَبَيِّنَاتٍ مِّنَ الْهُدَىٰ وَالْفُرْقَانِ

অর্থ : ‘রমজান মাস! যে মাসে কোরআন নাজিল হয়েছে— মানুষের জন্য পথপ্রদর্শকরূপে ও হিদায়াতের সুস্পষ্ট বর্ণনা ও সত্যাসত্যের পার্থক্য নির্ণয়কারী হিসেবে।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ১৮৫)

কাজেই যে মাসের নাম আল্লাহ নিজেই উল্লেখ করেছেন, সে মাস কতই গুরুত্বপূর্ণ তা আমরা নিজেই অনুভব করতে পারি।
আর এ মাসকে আল্লাহ কেন গুরুত্ব দিয়েছেন? তাও বলে দিয়েছেন যে— الَّذِي أُنزِلَ فِيهِ الْقُرْآنُ মানে এই মাসে আল্লাহ কোরআন নাজিল করেছেন, এজন্য রমজানের গুরুত্ব অনেক বেশি।

রমজানের গুরুত্ব এসেছে, কোরআন অবর্তীণ হওয়ার কারণে। আমরা দেখি— কোরআনের সাথে যার সংশ্লিষ্টতা যত বেশি, তার মর্যাদা তত বেশি। কোরআনে কারিম লাইলাতুল কদরে অবতীর্ণ হয়েছে, আর লাইলাতুল কদর একটি রাত; কিন্তু হাজার মাসের চেয়ে শ্রেষ্ঠ। পবিত্র রমজানে কোরআন নাজিল হয়েছে, তাই এই রমজানে যদি কেউ একটি আমল করে, তবে সত্তর গুণ বেশি সওয়াব তাকে দেওয়া হয়। ফলে এই মাস অত্যন্ত মর্যাদাবান।

পবিত্র কোরআন মক্কা-মদিনায় নাজিল হয়েছে বিধায়— মক্কা-মদিনা শ্রেষ্ঠ। যে নবীর উপর নাজিল হয়েছে, তিনি সব নবীর সর্দার এবং যে ফেরেশতা নিয়ে এসেছেন, তিনিও সকল ফেরেশতাদের প্রধান। এর মাধ্যমে আমরা দেখতে পাই যে, কোরআন যে জায়গায় যায়— সেটার মর্যাদা বেড়ে যায়। যে রাতে নাজিল হয়েছে, সে রাতের মর্যাদা বেড়ে গেছে। যে রাসুলের মাধ্যমে নাজিল হয়েছে, তার মর্যাদা বেশি। যে ফেরেশতার মাধ্যমে এসেছে, তার মর্যাদা বেশি। তাহলে এই কোরআন যদি আমাদের অন্তরে আসে, আমাদের মর্যাদাও বেশি হয়ে যাবে।

এই জন্য পবিত্র রমজানের জন্য আমরা প্রস্তুতি নেব। আর সবচেয়ে বড় প্রস্তুতি হলো- পবিত্র কোরআনের সাথে সংশ্লিষ্টতা ও সংযুক্তি বাড়ানো। এজন্য রমজানে শুধু রোজা বা তারাবি পড়েই ক্ষান্ত হব না, বরং কোরআনে কারিমের তেলাওয়াত আমরা বাড়াব, কোরআনে কারিমের চর্চাকে আমরা বাড়াব। কোরআনে কারিমের আমলকে আমরা বাড়াব। অর্থাৎ কোরআন কারিম হিফজ করা বা সুরা মুখস্থ করার চেষ্টা করব। কোরআন তেলাওয়াত শুদ্ধ করার চেষ্টা করব। বেশি পরিমাণে তেলাওয়াত ও কোরআন খতম করার চেষ্টা করব।


রমজান সাওয়াব অর্জনের এত বড় মৌসুম, আধ্যাত্মিক উন্নতি সাধনের এত বড় এক সুযোগ, এটাকে কাজে লাগানোর জন্য আমাদের যে ঐচ্ছিক ছুটি রয়ে গেছে— সেগুলো যদি আমরা রমজানে নিতে পারি, অথবা অন্তত শেষ দশ রাত যদি বেশি করে ইবাদত করার জন্য ছুটি নিতে পারি; তাহলে অনেক বড় পুণ্যের কাজ হবে।

আমরা সাধারণত বার্ষিক ছুটিগুলো হলিডে করার জন্য নিয়ে থাকি। কিন্তু ইবাদতের জন্য যে ছুটি নেওয়া দরকার— এই বিষয়ে আমরা লক্ষ্য করি না। এজন্য যারা চাকুরি করেন আর তাদের ছুটি জমা আছে, তাদের আমরা অনুরোধ করব— রমজানে ছুটি কাটানোর জন্য চেষ্টা করা। অর্থাৎ ইবাদতে নিমগ্ন হওয়ার জন্য সময় বের করা। আপনি যদি চাকুরিতে না যান— তাহলে আপনি বেশি তেলাওয়াত করতে পারবেন, বেশি সদকা করতে পারবেন, বেশি নামাজ আদায় করতে পারবেন, বেশি সদকা আদায় করতে পারবেন।

এজন্য আমরা সবাই চেষ্টা করব, যাতে রমজানের প্রথম দিন থেকেই রমজানের যে বৈশিষ্ট্য, গুরুত্ব ও ইবাদত রয়েছে— সেগুলো যেনো করতে পারি। এজন্য নিজেদের প্রস্তুত করে নেওয়া জরুরি।

শেষ দশ দিনের জন্য তো বিশেষ প্রস্তুতি থাকবেই। তবে প্রথম দিন থেকে যেন আমরা প্রস্তুত থাকি— সারাদিন আমরা রোজা রাখব, কোরআন তেলাওয়াত করব এবং রাতে তারাবি ও তাহাজ্জুদ পড়ব। আল্লাহ আমাদের তাওফিক দান করুন।

সূত্র: সুরা বাকারা, আয়াত ১৮৫; সহিহ মুসলিম, হাদিস : ৭৫৯; সুনানে তিরমিজ, হাদিস : ৬৬৩