ইসলাম যেভাবে আমাকে বদলে দিয়েছে
ছবি : সংগৃহীত
আমি এই গ্রহের বড় একজন মুসলিমবিদ্বেষী ছিলাম। কেন? এর কারণটা কী— সেটা আমি বিস্তারিত বলবো। যাইহোক, আমি আমেরিকাতে জন্ম গ্রহণ করি। সেখানেই আমার বেড়ে ওঠা। যখন ৯/১১ সংঘটিত হয়, তখন আমার বয়স ২৩ ছিল। আর এই সময়টার আগে আমি কখনো ইসলাম সম্পর্কে শুনিনি। এমনকি মুসলিম বিশ্ব সম্পর্কেও আমার ন্যূনতম ধারণা ছিল না।
টুইন টাওয়ার হামলার ঘটনায় আমি বেশ আতঙ্কিত হয়ে পড়েছিলাম। অবশ্য একজন খ্রিস্টান হিসেবে এমনটা হওয়া স্বাভাবিক ছিল। এরপরের রবিবার (আমি জানি, একজন খ্রিস্টান হিসেবে এটার তাৎপর্য কতটুকু; কিন্তু আমি কখনো এটা গ্রহণ করিনি) আমি আমার তিন বছর ও ছয় বছর বয়সী সন্তানকে সঙ্গে নিয়ে যাচ্ছিলাম এবং বলছিলাম- আমাদের সবাইকে এক্ষুনি খ্রিস্টান বানিয়ে দাও। যদি এই উদ্ভ্রান্ত লোকেরা এখানে চলে আসে এবং আমাদের উপর বোমা নিক্ষেপ করে! আমার নিশ্চিত হওয়া উচিত যে, আমরা ‘নিরাপদ’ রয়েছি।
বিজ্ঞাপন
ইরাকে যে মার্কিন আগ্রাসন চলেছিল, আমি সেটাকে সমর্থন করেছি। বলতে গেলে, রীতিমতো এটার জন্য উচ্চ স্বরে উকিলগিরি করেছি। এমনকি যে রাতে আফগানিস্তানে আমরা বোমা বর্ষণ করেছিলাম, সে রাতে আমি আমার আমার সন্তানদের কোলে বসিয়ে সেসব লোমহর্ষক ও মর্মন্তুদ দৃশ্য দেখছিলাম এবং বলছিলাম, আমরা যেটা করছি সেটা খুবই ভালো ও উচিত কাজ।
অথচ এর আগে আমি জানতামও না যে মধ্যপ্রাচ্য নামে কিছু আছে। আমি যা কিছু জানতাম, তা ছিল কেবল জার্মানি কেন্দ্রিক। এছাড়া পরবর্তীতে ইরাক, ইরান, আফগানিস্তান ও ফিলিস্তিন ছাড়া আর কিছুর ব্যাপারে আমি জানতাম না। কিন্তু আমি বহু বছর কিছু মানুষ, স্থান ও একটি ধর্ম সম্পর্কে ঘৃণা ও ভয়াবহ মিথ্যা ছড়িয়ে কাটিয়েছি। অথচ আমি তাদের সম্পর্কে তেমন একটা জানতামও না। উপরন্তু তাদের দুর্দশা ও তাদের ওপর বোমা বর্ষণ দেখে আমি নিতান্ত খুশি হতাম।
বিজ্ঞাপন
যখন ওবামা প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করছিলেল, আমি শপথ করেছিলাম যে- তখন আমি কোনোভাবেই এটি হতে দেব না। কারণ, সে একজন ‘মুসলিম’ ছিল (অন্তত যেটা সবাই বলে বেড়াতো)।
তখন আমি শুধু কোরআনের ৫-৬টি ‘ঘৃণ্য’ আয়াত দেখেছিলাম। কেউ আমাকে এরচেয়ে বেশি জ্ঞান দিতে সক্ষম ছিল না। অতঃপর কোনোভাবে আমি একটি কোরআন হস্তগত করতে পারি। এরপর সেটা পড়তে শুরু করি। আমি মূলত সেখানে গোলা-বারুদ সংক্রান্ত কথা খুঁজছিলাম। কিন্তু সামান্যও তেমন কিছু পাইনি।
সেই কোরআন আমার হৃদয় পরিবর্তন করে দেয়। বদলে দেয় আমার পুরো জীবন। আমি অনুভব করতে শুরু করি- কোরআন ঘৃণার শিক্ষা দেয় না— যেমনটা আমাকে বিশ্বাস করানো হয়েছিল। উপরন্তু একজন খ্রিস্টান হিসেবে বাইবেলের যে চারটি সংস্করণ আমি পড়েছি, সেগুলোর অনেক গল্প আমি কোরআনে দেখতে পেয়েছি।
দেখা গেলো- এভাবে কোরআন আমার কাছে ওই লোকদের আরো নিখুঁত ও প্রকৃত করে তুললো— যাদের ব্যাপারে আমি কখনো ভাবি নি যে এমনটা হতে পারে। ফলে এখন আমি তাদের এমনভাবে ভালবাসি— যেটা আমি আগে কখনও করিনি।
সুতরাং, সেই জায়গাগুলোতে আসলে কী চলছে (এবং সব ধর্ম ও খ্রিস্টান, ইহুদি ধর্ম ইত্যাদি) কীভাবে আত্মপ্রকাশ করেছে ... এবং কীভাবে বাইবেল ও এই পুরো ‘ইসরায়েলের সঙ্গে দাঁড়াও নতুবা জাহান্নামে যাও’ বিষয়টি অস্তিত্বে এসেছে— তা অনুসন্ধান করার জন্য আমি অধ্যয়ন শুরু করি। এভাবে আমি মধ্য প্রাচ্যে কী চলছে এবং কেন চলছে— তার সত্যতা জানতে পারি।
যখন আমি সত্যটা শিখে ও জেনে নিয়েছি; বিশেষত আমার সরকারের সম্পৃক্ততা ও আমাদের এখানে সংবাদ কীভাবে পরিচালতি হয়— ইত্যাদি জানতে পেরেছি, তখন আমি কয়েকদিনের জন্য অসুস্থত হয়ে পড়েছিলাম। আমি অনেক বেশি কান্নাকাটি করেছি। কাঁদতে কাঁদতে আমার চোখ শুষ্ক হয়ে গিয়েছিল। কারণ, আমার মিথ্যা বলার কারণে ওইসব নিরীহ লোক প্রাণ হারিয়েছিল। আর এটি ছিল আমার মুখোমুখি হওয়া সবচেয়ে কঠিন সমস্যা। এমনকি আয়নায় নিজেকে দেখাও আমার জন্য কষ্টদায়ক ছিল।
আমার হাতে রক্তছোপ থাকার ভাবনাটি চিরকাল আমার হৃদয়ে ভারী হয়ে থাকবে। আসলে এটা আমি কখনো বরদাশ করতে পারি না। তবে, আমি তখনই সত্য প্রচার শুরু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। এই আশাতেই যে, অন্য মানুষের হৃদয়ে সত্য জেগে উঠবে। কারণ, আমাদের কাছে যেটা মিথ্যা বলে প্রচার করা হয়েছে এবং যারা আমাদের শত্রু নয় তাদের প্রতি যে বিদ্বেষ ছড়ানো হয়েছে— সেটা উন্মোচন হওয়া জরুরি। আর এটা করা হয়েছে কেবল তাদের দেশগুলোতে আক্রমণের জন্য সরকারকে আমরা সমর্থন করার জন্য।
এখন আমি মনে-প্রাণে কামনা ও প্রার্থনা করি যে, আরো বেশি লোকের কাছে সত্যতা পৌঁছে যাক। কারণ, আমি এর চেয়েও বেশি—মিথ্যা ছড়িয়ে ছিলাম।
ডিসকভারিং ইসলাম আর্কাইভ থেকে অনুবাদ করেছেন মুফতি মুহাম্মদ মিনহাজ উদ্দিন