রবার্ট ক্রেনের ইসলাম গ্রহণ। ছবি : সংগৃহীত

হার্ভার্ড সোসাইটি অব ইন্টারন্যাশনাল ল’-এর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি, হোয়াইট হাউজের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের সাবেক উপ-পরিচালক ও মার্কিন যুক্তরাষ্টের খ্যাতিমান রাজনীতিবিদদের অন্যতম। ১৯৬৩ থেকে ১৯৬৮ পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকা রিচার্ড মার্কিন প্রেসিডেন্ট নিক্সনের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা, পাবলিক ও আন্তর্জাতিক আইন এবং তুলনামূলক আইনে ডক্টরেট ডিগ্রিধারী, ছয়টি ভাষায় পারদর্শী ড. রবার্ট ক্রেন ১৯৮০ সালে ইসলাম গ্রহণ করেন। পরে নিজের নাম পরিবর্তন করে রাখেন ফারুক আবদুল হক।

ইসলাম গ্রহনের কাহিনি
রবার্ট ক্রেন হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তুলনামূলক আইনি ব্যবস্থা’য় মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জনের পর আর্ন্তজাতিক ম্যাগাজিন ‘হার্ভার্ড জার্নাল ফর ইন্টারন্যাশনাশ ল’ প্রতিষ্ঠা করেন। ‘হার্ভার্ড সোসাইটি ফর ইন্টারন্যাশনাল ল’-এর প্রথম সভাপতি। তিনি ওয়াশিংটনে অবস্থিত মার্কিন পররাষ্ট্রনীতি নির্ধারণ অ্যাডভাইজারি সেন্টারে প্রায় এক দশক ধরে কর্মরত ছিল।

১৯৬১ সালে আন্তর্জাতিক স্ট্রাটেজিক গবেষণাকেন্দ্র প্রতিষ্ঠায় অংশগ্রহণ করেন। ১৯৬৩-১৯৬৮ পর্যন্ত মার্কিন প্রেসিডেন্ট নিক্সনের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করেন। ১৯৬৯ সালে প্রেসিডেন্ট নিক্সন তাকে হোয়াইট হাউজের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের উপ-পরিচালক নিযুক্ত করেন। প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রিগ্যান ১৯৮১ সালে তাকে সংযুক্ত আরব আমিরাতের রাষ্ট্রদূত নিয়োগ করেন।

প্রেসিডেন্ট নিক্সনের নির্দেশে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থাগুলো ‘ইসলামি মৌলবাদ’ ও ইসলামবিষয়ক একটি দীর্ঘ  প্রতিবেদন তৈরি করে। কিন্তু প্রেসিডেন্টের সময়ের অভাবে তিনি রবার্ট ক্রেনকে এ প্রতিবেদন সংক্ষিপ্ত করার দায়িত্ব দেন। মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদন সংক্ষিপ্ত করতে গিয়ে তিনি অভিভূত হয়ে পড়েন। ইসলাম সম্পর্কে তাদের মূল্যায়ন তাকে মুগ্ধ করে। এভাবে ইসলামের প্রতি তার প্রাথমিক আকর্ষণ ও মুগ্ধতার শুরু।

১৯৮০ সাল থেকে সরকারের নির্দেশে তিনি বিভিন্ন ইসলামি সেমিনার ও সিম্পোজিয়ামে অংশগ্রহণ করেন। এছাড়াও বিভিন্ন ইসলামি স্কলার ও দাঈদের সঙ্গে মতবিনিময় শুরু করেন। তন্মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- সুদানের প্রখ্যাত মুসলিম স্কলার ড. হাসান তুরাবি।

এক সেমিনারে শায়খ তুরাবি ইসলামের পরিচয়মূলক দীর্ঘ বক্তব্য রাখেন। এরপর শাইখকে তিনি নামাজে সিজদারত অবস্থায় দেখে প্রথমে ভাবলেন, এভাবে বিনয় ও অসহায়ত্ব  প্রকাশ— ব্যক্তি ও মানবতার জন্য চরম অবমানাকর। কিন্তু যখনই তিনি  চিন্তা করলেন, শাইখ হাসান তুরাবি তো আল্লাহর জন্য ঝুঁকছে। আল্লাহর দরবারে সিজদা করছে। তখন নিশ্চিত হলেন, এটাই সঠিক কাজ।

উপরন্তু দামেস্কের অধ্যাপক রোজিয়া গ্যারৌদির সঙ্গে সাক্ষাতে ইসলাম নিয়ে আলোচনা করেন। রোজিয়ার চিন্তাধারায় প্রভাবিত হয়ে তিনি স্থির করেন, ইসলামই সব সমস্যার সমাধান। ইসলামি শরিয়তের বিধি-বিধান, সামগ্রিক, সামষ্টিক ও ব্যষ্টিক— সবক্ষেত্রে ন্যায়বিচার ও ন্যায়নীতি বিদ্যমান।

আইনের ছাত্র হিসেবে আমি যেসব আইন অধ্যয়ন করেছি, তার সবকিছু আমি ইসলামে পেয়েছি। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে ৩ বছরের অধ্যয়ন সময়ে আইনের বইগুলোতে সামগ্রিক অর্থে ‘আদালত’ বা ন্যায়বিচার-ন্যায়নীতির খোঁজ পাইনি। অথচ ইসলামি বিচার ব্যবস্থা এ শব্দের ওপর আবর্তিত। ইসলামের সবক্ষেত্রে এর ব্যাপক চর্চা আমি দেখেছি। আর তাতে মুগ্ধ হয়ে আমি ইসলাম গ্রহণ করেছি।

ইসলাম গ্রহণের কারণ সম্পর্কে রবার্ট ক্রেন

একজন আইনজীবি হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে মানবরচিত আইনের অসারতা দেখে তিনি এরকম মূলনীতির পিছনে ছুটছেন। গবেষণায় দেখলেন, তার প্রত্যাশিত সবকিছুই ইসলামে বিদ্যমান। এভাবে ইসলামের প্রতি তিনি প্রাণিত হতে থাকেন। সবশেষে ১৯৮০ সালে তিনি ইসলাম গ্রহণ করেন এবং আগের নাম ত্যাগ করে নিজের পছন্দের নাম ‘ফারুক আবদুল হক’ রাখেন।

সে দিন থেকে ড. ফারুক আবদুল হক (প্রাক্তন রবার্ট ক্রেন) আমেরিকায় ইসলামের ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবতে শুরু করেন। দক্ষিণ আমেরিকায় ইসলামের ভবিষৎ নিয়ে আলোচনার লক্ষ্যে ২৯ আগস্ট থেকে ১লা সেপ্টেম্বর ১৯৮৬-তে অনুষ্ঠিত দক্ষিণ আমেরিকার ইত্তেহাদে ইসলামির ২৪ তম কনফারেন্সে তিনি গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তবনা পেশ করেন।

ইসলাম নিয়ে পক্ষপাত ও বিদ্বেষপূর্ণ দৃষ্টিভঙ্গির কারণে তিনি যেভাবে পশ্চিমাদের সমালোচনা করেন, ঠিক তেমনিভাবে প্রাচ্য বা প্রতীচ্যের যেসব মুসলমান ইসলামি বিধান বুঝে না বা বুঝেও বাস্তবায়ন করে না— তাদেরও কঠোর সমালোচনা করেন। তার ভাষায়, পশ্চিমে বসবাসরত অনেক মুসলমান ইসলামের নিয়ম-কানুন মেনে জীবন যাপন করে না। তাই অমুসলিমরা ইসলাম সম্পর্কে ভুল ধারনা পোষণ করে।

-কুয়েত থেকে প্রকাশিত আরবি ম্যাগাজিন ‘আল-মুজতামা’ অবলম্বনে