হজ ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। ইসলামের মূল ভিত্তির পঞ্চমটি হল হজ। তবে নামাজ, রোজা থেকে হজের বিধানটি সম্পূর্ণ ভিন্ন। কেননা, এটি মুসলমানের ওপর প্রতিদিন অথবা প্রতি বছর ফরজ হয় না; বরং জীবনে মাত্র একবারই ফরজ হয়ে থাকে। 

হজ সফরের পূর্ণ সময়টা মূলত মানুষের জীবনে তাকওয়া ও খোদাভীতি অর্জনের এক মোক্ষম সময়। এ স্বল্প সময়ের প্রশিক্ষণে একজন মানুষ নিজেকে পরিপূর্ণ মুত্তাকী হিসেবে গড়ে তোলে। তাই দেশে ফিরেও যেন সেই তাকওয়া অটুট থাকে সেদিকে লক্ষ রাখা আবশ্যক।

হজ সফরের আগে থেকে পেশাগত অথবা অন্য কোনো কারণে কোনো গুনাহর কাজে জড়িত থাকলে হজ সফরের আগেই তা থেকে সম্পূর্ণভাবে নিজেকে সরিয়ে নেওয়া এবং হজের সময় জুড়ে আল্লাহর কাছে কায়মনোবাক্যে ক্ষমা প্রার্থনা করতে থাকা জরুরি। আর হজ শেষে দেশে ফিরে সব রকমের গুনাহ থেকে বেঁচে থাকা আবশ্যক।

এজন্য আল্লাহ ওয়ালাদের সংস্পর্শে থাকা উচিত। এ সম্পর্কে কোরআনে ইরশাদ হয়েছে- ‘হে ঈমানদারগণ, তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং সত্যনিষ্ঠদের সঙ্গে থাক।’ (সূরা তাওবা : ১১৯)

এ আয়াতে প্রথমত মুমিনদেরকে সম্বোধন করে বলা হয়েছে যে, হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় কর। আর এই ভয় করার উদ্দেশ্য হল, আল্লাহর অবাধ্যতা না করা ও গুনাহ থেকে বেঁচে থাকা।

কুরআনের একটি নীতি এই যে, যখনই আল্লাহ তায়ালা এমন কোনো হুকুম প্রদান করেন, যা পালন করা কষ্টসাধ্য তখন পাশাপাশি অন্য এমন একটি আদেশ প্রদান করে থাকেন যার উপর আমল করলে প্রথম হুকুমের ওপর আমল করা সহজ হয়ে যায়। আর তাই আল্লাহ ওয়ালাদের সাথে থাকা, তাদের সাথে সম্পর্ক গড়া, তাদের কথা মান্য করা ইত্যাদির মাধ্যমে গুনাহ থেকে সহজেই বেঁচে থাকা সম্ভব।

কেননা, মানুষ স্বভাবগতভাবেই পরিবেশের প্রভাবে প্রভাবিত হয়ে থাকে। ফলে গুনাহর পরিবেশ বর্জন করে নেক ও সৎ লোকদের পরিবেশে নিজেকে অভ্যস্ত করে বাকি জীবন গুনাহমুক্তভাবে কাটিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা অপরিহার্য।

এছাড়া নিম্নোক্ত আমলগুলো নিয়মিতভাবে করে যাওয়া উচিত

১। প্রতিদিন নিয়মিতভাবে কিছু পরিমাণ কোরআন তেলাওয়াত করা।

হাদিসে কোরআন তেলাওয়াত সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘যে ব্যক্তি কোরআনের একটি অক্ষর পড়বে, সে একটি নেকি পাবে। আর একটি নেকি ১০টি নেকির সমপরিমাণ।’ (তিরমিজি)

২। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ মসজিদে গিয়ে তাকবীরে উলার সাথে আদায়ের চেষ্টা করা।

তাকবিরে উলার ফজিলত সম্পর্কে হজরত আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি ৪০ দিন প্রত্যেক নামাজ নিয়মিতভাবে জামাতের সঙ্গে এমনভাবে আদায় করবে যে, তার প্রথম তাকবির ছুটে যাবে না, তার জন্য দু’টি জিনিস থেকে অব্যহতির ফয়সালা করা হয়। এক. জাহান্নামের আগুন থেকে অব্যাহতি; দুই. মুনাফিকি থেকে অব্যাহতি ও হিফাজত।’ (তিরমিজি)

৩। প্রতিদিনের ফরজ ও সুন্নত নামাজের পাশাপাশি কিছু পরিমাণ নফল নামাজেরও অভ্যাস গড়ে তোলা।

রবিয়া আসলামি (রা.) বলেন, আমি (কখনো কখনো) রাতে নবীজির সঙ্গে থাকতাম। এক রাতে আমি তার জন্য অজু-ইস্তেঞ্জার পানির ব্যবস্থা করলাম। তিনি (খুশি হলেন) বললেন, রবিয়া! তুমি যা খুশি চাইতে পার। রবিয়া বলেন, তখন আমি বললাম, ‘জান্নাতে আপনার সঙ্গে থাকতে চাই।’ নবী কারিম (সা.) বললেন, আর কী চাও? (এবারও রবিয়ার একই উত্তর, তিনি বলেন) আমি তখন বললাম, আমার ওই একটাই চাওয়া। একথা শুনে নবী কারিম (সা.) বললেন, তাহলে ‘কাসরাতুস সুজুদ’ তথা বেশি বেশি নফল নামাজের মাধ্যমে আমাকে এ বিষয়ে সাহায্য করো। (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ৪৮৯)

৪। প্রত্যহ তাহাজ্জুদ নামাজ পড়তে চেষ্টা করা।

মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন প্রিয় নবীজি (সা.)-এর উদ্দেশে কোরআন কারিমে বলেন, ‘এবং রাত্রির কিছু অংশ তাহাজ্জত কায়েম করো, ইহা তোমার এক অতিরিক্ত কর্তব্য। আশা করা যায় তোমার প্রতিপালক তোমাকে প্রতিষ্ঠিত করবেন প্রশংসিত স্থানে—মাকামে মাহমুদে।’ (সুরা-১৭ ইসরা, আয়াত: ৭৯)।

৫। প্রতিদিন ইস্তেগফার, দুরুদ শরিফ ও অন্যান্য দোয়া-জিকির ইত্যাদি পাঠ করা।

আল্লাহ তায়ালা বান্দার গুনাহসমূহ ক্ষমা করে দিতে ভালোবাসেন। আল্লাহ তায়ালার কাছে ক্ষমা চাওয়ার গুরুত্ব সম্পর্কে কোরআনে কারিমে বহু আয়াত পাওয়া যায়। 

আল্লাহ তায়ালা বলেন, (হে নবী! আপনি) আমার বান্দাদের বলে দিন– নিশ্চয়ই আমি অতি ক্ষমাশীল ও অসীম দয়ালু। (সুরা হিজর: ৪৯)

অন্যত্র আল্লাহ বলেন, যারা অজ্ঞাতবশত পাপাচার করে, অতঃপর তওবা করে ও সৎকর্ম করে, তাদের প্রতি আপনার প্রভু অতি ক্ষমাশীল ও অসীম দয়ালু। (সুরা নাহল: ১১৯)

অন্য আয়াতে আল্লাহতায়ালা বলেন, (হে নবী! আপনি) বলুন, হে আমার রব! আমাকে মাফ করে দিন ও আমার ওপর আপনার রহমত বর্ষণ করুন। নিশ্চয়ই আপনি সর্বাধিক দয়ালু। (সুরা মুমিনুন: ১১৮)

এনটি/