দৈনিক পাঁচবার নামাজ আদায় ফরজ করেছেন আল্লাহ তায়ালা। জামাতের সঙ্গে সময় মতো নামাজ পড়ার প্রতি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে কোরআন ও হাদিসে। তবে কেউ যদি সময় মতো নামাজ আদায় করতে না পারে, পরবর্তীতে কাজা আদায়ের সময় জামাত করে এই নামাজ আদায় করতে পারবে কিনা?

ইসলামী সমাধান

এ বিষয়ে ইসলামী সমাধান হলো, কেউ ইচ্ছাকৃত সময়মতো নামাজ আদায় না করলে, তাকে গুনাহগার হতে হবে(সহিহ বুখারি, হাদিস : ৪৯৬)

তবে নিতান্ত ভুলবশত, অপারগ হয়ে কিংবা অতি বিশেষ কারণে কোনও ওয়াক্তের নামাজ আদায় করতে না পারলে— পরবর্তী সময়ে এই নামাজ আদায় করে নিতে হয়। আর এই নামাজ আদায়কে কাজা নামাজ বলা হয়। 

কেউ যদি সময় মতো নামাজ আদায় করতে না পারে, পরবর্তীতে কাজা আদায়ের সময় জামাতের সঙ্গে আদায় করতে চাইলে শর্ত হচ্ছে; তার সঙ্গে যদি একই ওয়াক্তের নামাজ আদায় করতে না পারা অনেক মানুষ থাকে তাহলে জামাত করে এই কাজা নামাজ আদায় করা যাবে।

আর কখনো যদি একসঙ্গে একাধিক ব্যক্তির নামাজ কাজা হয়ে যায় তাহলে সেই নামাজ জামাতের সঙ্গেই পড়া উচিত। কাজা নামাজ জামাতে আদায় করলে উচ্চস্বরে কেরাতবিশিষ্ট নামাজে ইমামকে উচ্চস্বরেই কেরাত পড়তে হবে।

হাদিস শরিফে এসেছে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবাদেরকে নিয়ে সূর্যোদয়ের পর ফজরের কাজা আদায় করেছেন এবং তাতে উচ্চস্বরে কেরাত পড়েছেন।

কাজা নামাজের জামাত নির্জনে

তবে ফেকাহবিদ আলেমরা বলেন, কাজা নামাজ জামাতে আদায় করলে তা নির্জন স্থানে করা উচিত। যেন অন্য লোকজন নামাজ কাজা হওয়ার বিষয়টি জানতে না পারে।

-(কিতাবুল আসার, ইমাম মুহাম্মাদ (রহ.) হাদিস : ১৬৮, ফাতহুল কাদির : ১/১৮৫; ফাতাওয়া হিন্দিয়া : ১/৭২; আদ্দুররুল মুখতার : ১/৫৩৩)

নামাজের সময়ের বিষয়ে যা বলেছেন নবীজি

নামাজের সময়ের বিষয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, নামাজের প্রথম ও শেষ সময় রয়েছে। যোহরের নামাজের প্রথম সময় হচ্ছে যখন সূর্য হেলে যাবে। আর শেষ সময় হচ্ছে, আসরের ওয়াক্ত প্রবেশ করা পর্যন্ত।

অনুরূপভাবে আসরের প্রথম ওয়াক্ত হচ্ছে, যখন এর ওয়াক্ত হবে। আর তার শেষ ওয়াক্ত হচ্ছে সূর্য হলুদ বর্ণ ধারণ করা পর্যন্ত। তদ্রুপ মাগরিবের প্রথম সময় হচ্ছে যখন সূর্য ডুবে যায়। তার শেষ সময় হচ্ছে, যখন দিগন্ত রেখা চলে যায়।

আর এশার প্রথম ওয়াক্ত হচ্ছে, যখন দিগন্ত রেখা চলে যায়। আর শেষ ওয়াক্ত হচ্ছে, মধ্য রাত পর্যন্ত। ফজরের প্রথম ওয়াক্ত হচ্ছে, যখন সুবহে সাদিক উদিত হয়। আর শেষ ওয়াক্ত হচ্ছে, যখন সূর্য উদিত হয়। -(তিরমিজি, ১৫)

কোরআন-হাদিসে জামাতে নামাজের গুরুত্ব ও হুঁশিয়ারি

সময়মতো নামাজ আদায় করতে না পারলে ‍যদিও কাজা নামাজ পড়ার বিধান রয়েছে, তবে একজন মুমিনের উচিত সময় মতো জামাতের সঙ্গে নামাজ আদায়ের যথাসম্ভব চেষ্টা করা। আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনুল কারিমে ইরশাদ করেন, ‘নামাজ মুমিনের জন্য নির্দিষ্ট সময়ে ফরজ।’ -(সুরা নিসা, আয়াত : ১০৩)

এই আয়াতে নামাজকে নির্ধারিত সময়ে পড়ার প্রতি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এ থেকে প্রতীয়মান হয় যে, কোন শরয়ী কারণ ছাড়া দুই নামাজকে একত্রে (জমা করে) পড়া শুদ্ধ নয়। কেননা, (একত্রে পড়লে) কম-সে কম একটি নামাজকে তার সময় ছাড়াই পড়া হবে যা এই আয়াতের পরিপন্থী।

রাসুল (সা.) জামাতে নামাজ আদায়ের ব্যাপারে বিভিন্ন হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। এক হাদিসে নবী (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি আজান শুনল এবং তার কোনো অপারগতা না থাকা সত্ত্বেও জামাতে উপস্থিত হলো না, তার সালাত হবে না। ’ -(ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৭৯৩)

এছাড়া জামাতে নামাজ আদায় করলে পুরস্কারের কথাও এসেছে হাদিসে। জামাতের সওয়াব সম্পর্কে রাসুল (সা.) বলেন, ‘জামাতের সঙ্গে নামাজ পড়া একাকী নামাজ পড়ার চেয়ে ২৭ গুণ বেশি মর্যাদার। ’ -(বুখারি, হাদিস : ৬৪৫, মুসলিম,  হাদিস : ৬৪০)

এনটি