মানুষের মাঝে বিভিন্ন স্বভাব থাকে। এর কোনওটি প্রশংসনীয় আবার কোনওটি নিন্দনীয়। যা থেকে বেঁচে থাকার কথা বলেছেন নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। কোরআনেও আল্লাহ তায়ালা কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন কিছু কিছু স্বভাবের বিষয়ে। এমন একটি স্বভাব হলো মুনাফিকি। 

মুনাফিকি বা দ্বিমুখী আচরণ ঈমানদারের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। কারণ, নিফাক মুমিন থেকে ঈমান বের করে দেয়। মুমিনদের এ থেকে বেঁচে থাকা উচিত

পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, ‘আর মানুষের মধ্যে এমন কতিপয় লোক আছে, যারা বলে আমরা আল্লাহ ও আখিরাতে ঈমান এনেছি, অথচ তারা মুমিন নয়।’-(সুরা বাকারা, আয়াত : ৮)

আল্লাহ তায়ালা আরও বলেছেন, ‘তাদের হৃদয়ে রয়েছে ব্যাধি। অতঃপর আল্লাহ সে ব্যাধিকে আরো বাড়িয়ে দিয়েছেন, তাদের মিথ্যাচারের দরুন তাদের জন্য রয়েছে অত্যন্ত যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি।’ -(সুরা : আল বাকারা, আয়াত : ১০)

এ আয়াতে বলা হয়েছে যে, মুনাফিকদের অন্তর রোগাক্রান্ত বা অসুস্থ। তাই আল্লাহ তায়ালা তাদের এ রোগকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছেন। এখানে এ কথাও বলা হয়েছে, দুনিয়ার হীন উদ্দেশ্য হাসিল করার জন্য সত্যকে গোপন করা এবং স্বীয় অন্তরের কথাকে প্রকাশ করার হিম্মত না করা মানবসভ্যতার জন্যও অত্যন্ত ঘৃণ্য দোষ। তাই এ থেকে বেঁচে থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।  

তবে এ থেকে নিজেকে রক্ষা করতে চাইলে প্রথমে মুনাফিকের স্বভাবগুলো জানা আবশ্যক।

হাদিসের ভাষায় মুনাফিক বলা হয়েছে এমন ব্যক্তিকে যার মাঝে চারটি স্বভাব থাকবে। হাদিসের আলোকে সেগুলো হলো, ‘যখন তাকে বিশ্বাস করা হয়, সে বিশ্বাস ভঙ্গ করে। কথা বললে, মিথ্যা বলে। অঙ্গিকার করলে ভঙ্গ করে এবং বিবাদ-বিতর্কে উপনীত হলে অন্যায় পথ অবলম্বন করে। -(বুখারি, হাদিস : ৩৪; মুসলিম, হাদিস : ১০৬) এসব স্বভাব কারও মধ্যে থেকে থাকলে অবশ্যই বর্জন করতে হবে।

আমানতের খেয়ানত করা

কারও কাছে কোনো অর্থ-সম্পদ গচ্ছিত রাখার নাম আমানত। যিনি গচ্ছিত সম্পদ যথাযথভাবে সংরক্ষণ করেন এবং এর প্রকৃত মালিক চাওয়ামাত্র তা অক্ষত অবস্থায় ফিরিয়ে দেন, তিনি আমানতদার। আর গচ্ছিত সম্পদ যথাযথভাবে মালিকের কাছে ফেরত না দিয়ে আত্মসাৎ করা আমানতের খেয়ানত।

আল্লাহ তায়ালা মানুষকে আমানত রক্ষার নির্দেশ দিয়ে বলেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের আদেশ দিচ্ছেন যে, তোমরা আমানত তার মালিককে ফেরত দেবে।’ (সুরা নিসা : ৫৮)। আমানতের খেয়ানত প্রসঙ্গে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যার মধ্যে আমানতদারি নেই, সে মুমিন মুসলমান নয়।’ (মুসনাদে আহমাদ : ১১৯৩৫)

ওয়াদা দিয়ে ভঙ্গ করা 

কারও সঙ্গে কেউ কোনো অঙ্গীকার করলে, কাউকে কোনো কথা দিলে বা লিখিত চুক্তি করলে তা পালন করার নাম ওয়াদা।  এই ওয়াদা পালন করা মুমিনের অন্যতম বৈশিষ্ট্য ও ইমানের অঙ্গ। ইসলামে ওয়াদা ভঙ্গকারীকে মুনাফিকের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে; যাদের জন্য পরকালে রয়েছে কঠোর শাস্তি। ওয়াদা ভঙ্গ করা মারাত্মক অপরাধ। 

ওয়াদা পালনের প্রতি জোরালো তাগিদ দিয়ে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘এবং তোমরা ওয়াদা পালন করবে, ওয়াদা সম্পর্কে তোমাদের কাছে কৈফিয়ত চাওয়া হবে।’ (সুরা বনি ইসরাইল : ৩৪)। 

কথায় কথায় মিথ্যা বলা 

কোরআন ও হাদিসে মিথ্যাবাদীর ভয়ানক পরিণতির কথা বলা হয়েছে। একটি মিথ্যাকে সত্য বলে প্রমাণ করার জন্য হাজারও ছলচাতুরী এবং আরও অনেক মিথ্যা বলার প্রয়োজন হয়। এরপরও মিথ্যা কখনও সত্য হয় না। মিথ্যা মিথ্যাই থেকে যায়। যারা মিথ্যাচার করে বেড়ায় তারা সংসারে, সমাজে এবং দেশে মহাদুর্যোগ সৃষ্টি করতে পারে। মিথ্যাবাদীর ওপর আল্লাহ তায়ালার অভিশাপ বর্ষিত হয়। 

 আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘মিথ্যা তো তারাই বানায়, যারা আল্লাহর নিদর্শনগুলোর ওপর ইমান রাখে না। বস্তুত তারাই মিথ্যাবাদী।’ -(সুরা নাহাল : ১০৫)

ঝগড়া বাধলে গালাগাল করা

যাপিত জীবনে কত রকম মানুষের সঙ্গেই মেলামেশা ও লেনদেন করতে হয়। এতে কখনও কখনও মতের অমিল দেখা দেয় এবং মাঝেমধ্যে তা কলহ-বিবাদ পর্যন্ত গড়ায়। কিন্তু একজন প্রকৃত মুমিন কোনো অবস্থাতেই মুখ খারাপ করতে পারে না। সবসময় সে নিজ ভদ্রতা, নৈতিকতা ও মূল্যবোধের ব্যাপারে সচেতন থাকবে। দৃষ্টিভঙ্গিগত মতভেদ হোক, চিন্তা-চেতনার অমিল হোক, রাজনৈতিক কিংবা ব্যবসায়িক বিরোধ হোক, কোনো অবস্থাতেই একজন মুমিন তার মুখ দিয়ে মন্দ বাক্য উচ্চারণ করবে না। হাদিসের দৃষ্টিতে এরূপ করাটা মুনাফিকের আলামত। অতএব ঈমানদার হতে হলে আমাদের অবশ্যই এসব মুনাফিকি স্বভাব পরিত্যাগ করতে হবে।

এনটি