সংস্কারের অভাবে সৌন্দর্য ও অবকাঠামো হারাতে বসেছে মোঘল আমলে নির্মিত সাতক্ষীরা জেলার তালা উপজেলার তেঁতুলিয়া শাহী জামে মসজিদ। কালের বিবর্তনে ধীরে ধীরে ‘মিয়া মসজিদ’ নামে পরিচিতি লাভ করেছে মসজিদটি। 

মসজিদটির সঙ্গে সাদৃশ্য রয়েছে কলকাতার ধর্মতলার টিপু সুলতান মসজিদের। তবে সঠিক তদারকি, সংস্কার ও যথাযথ পরিচ্ছন্নতার অভাবে দক্ষিণ অঞ্চলের মুসলমানদের সর্ববৃহৎ ইবাদতগাহটির সৌন্দর্য এখন প্রায় বিলুপ্তির পথে।

জানা গেছে, ষোল'শ শতাব্দীর প্রথম দিকে মোঘল আমলে ধার্মিক মুসলিম জমিদার কাজী সালামতুল্লাহ খান বাহাদুর এই মসজিদটি নির্মাণ করেন। মসজিদটির নকশা ও কারু কাজের প্রধান দায়িত্বে ছিলেন তৎকালীন ভারতীয় উপমহাদেশের বিহারের এক বাসিন্দা।

সরেজমিনে দেখা গেছে, এক একর জমির উপর নির্মিত মসজিদটির উত্তর পার্শ্বে দুই একর জায়গাজুড়ে রয়েছে একটি দিঘি আছে। মসজিদটিতে সাতটি দরজা, ১৫ ফুট উচ্চতাবিশিষ্ট ছয়টি বড় গম্বুজ, আট ফুট উচ্চতাবিশিষ্ট ১৪টি মিনার ও ২৫ ফুট উচ্চতা বিশিষ্ট ৪টি মিনার রয়েছে। 

সুপরিকল্পিতভাবে নির্মিত হলেও সঠিক তদারকির অভাবে সৌন্দর্য হারিয়েছে মসজিদটি। বর্তমানে ভবনটির রং চটে গেলেও সংস্কারের কোনও উদ্যোগ নেই। বিভিন্ন মিনারের কোণ থেকে বালু ধ্বসে পড়ছে। ভবটির মুল অবকাঠামোতেও বড় বড় ফাটল ধরেছে। মসজিদ সংলগ্ন দিঘিটিও সৌন্দর্য হারিয়েছে। 

প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতরের গাফিলতির কারণে মিয়া মসজিদের সৌন্দর্য বিলুপ্তির পথে বলে অভিযোগ করেছেন মসজিদের ইমাম মো. আব্দুল জর্দ্দার। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের একটি ঐতিহ্যবাহী মসজিদ তেঁতুলিয়া শাহী জামে মসজিদ। দীর্ঘদিন সংস্কার না হওয়ায় ঐতিহ্য ধ্বংস হতে চলেছে মসজিদটির। 

তিনি বলেন, প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতরের কাজ হলো পূরার্কীতিগুলো সংরক্ষণ করা। কিন্তু তারা নিজেরাও কাজ করে না, আমাদেরও কাজ করতে দেয় না। ৪০০ বছরের ঐতিহ্যবাহী মসজিদটি সংস্কারে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাই সরকারের কাছে। 

মসজিদের খাদেম মো. মাসুদুর রহমান জানান, সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসাইন মোহাম্মদ এরশাদের আমলে সর্বশেষ সংস্কার ও রং করা হয়েছিল এই মসজিদ। গত ২৬ বছরে কোনও সংস্কার হয়নি। আমরা সংস্কারের উদ্যোগ নিলে প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতর এসে বাঁধা দেয় এবং বলে, বাজেট পাশ হলে সরকারিভাবে সংস্কার করা হবে।

মসজিদের খতিব আব্দুর রব জানান, মোঘল আমলের এই মসজিদটি দেশের গৌরব। প্রতিদিন অনেক দর্শনার্থী আসেন। তবে মসজিদের পাঁচালি ও মিনারের অংশগুলো লোনা ধরে ধ্বসে পড়ছে। বিভিন্ন অংশে বড় বড় ফাঁটল ধরেছে। ভবনটি কিছু অংশ দুর্বল হয়ে যাওয়ায় ধ্বসে পড়ার উপক্রম। বিষয়গুলো প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতর কাছে বারবার লিখিত অভিযোগ জানালেও তারা কোনও ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। প্রাচীন এই মসজিদটির জন্য এখনো কোনও বরাদ্দ আসেনি বলে জানান তিনি। 

তিনি আরও জানান, মসজিদে মানসম্মত কোনও বাথরুম ও অজুখানা নেই। প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতর এ নিয়েও কোনও কাজ করেনি। তার অভিযোগ, মসজিদে মুসল্লি সংকুলান না হওয়ায় বারান্দার সঙ্গে নামাজের স্থান তৈরী করা হয়েছিল সেটা প্রশাসন তাৎক্ষনিক ভেঙে ফেলতে বাধ্য করে আমাদের।

মসজিদের সভাপতি মো. মারুফ হোসেন তুরাণ জানান, মসজিদটি প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতর আওতায় যাওয়ার পরে অনেকবার তাদের কাছে গেলেও তারা কোনও গুরুত্ব দেয় না এবং কাজ করেও না। এলাকার লোকজন সংস্কার করতে চাইলেও প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতর সেটাতে বাঁধা দেয়। মুসল্লিদের সুবিধার্থে মসজিদের অজুখানায় টিনের চাল দিলেও এতে তারা বাঁধা দেন এবং চাল খুলে নিতে চাপ প্রয়োগ করেন। 

তিনি আরও জানান, প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতরের পক্ষ থেকে মসজিদের খাদেম, মুয়াজ্জিন, ইমামের বেতন ভাতা দেওয়ার কথা থাকলেও সেটা দেওয়া হয় না। 

এ বিষয়ে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের খুলনা আঞ্চলিক প্রধান আফরোজা খাঁন মিতা জানান, পুরাকীর্তি আইন থাকায় কর্তৃপক্ষ ছাড়া কেউ এর সংস্কার করতে পারবে না। তাই তাদের বাঁধা দেওয়া হয়েছে। 

তিনি বলেন, একবার সংস্কার কাজের পর পাঁচ থেকে সাত বছরের মধ্যে আর কাজের সুযোগ আসে না। দেশের অনেক স্থানে এমন সংস্কার কার্যক্রম প্রতিনিয়ত চলছে। ধারাবাহিকতা অনুযায়ী এটারও কার্যক্রম শুরু হবে। বেতন ভাতার বিষয়ে তিনি বলেন, নির্দিষ্ট কিছু মসজিদের বাইরে কেউ এ সুযোগ পায় না। 

এনটি