মানুষের জীবন ও দেহ সুরক্ষায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও অপরিহার্য তরল উপাদান হলো রক্ত। যেকোনো দুর্ঘটনা বা অসুস্থতায় শরীর থেকে রক্ত ঝরলে অথবা রক্তশূন্যতা দেখা দিলে দেহের জন্য রক্তের প্রয়োজন হয়। এসময় মানবতার আহ্বানে এগিয়ে আসেন অনেকেই। রক্ত দিয়ে অন্যের জীবন রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন। 

নিজের শরীর থেকে অন্য কাউকে রক্ত দিলে কি অজু ভেঙে যায় আবার নতুন করে অজু করতে হয়?-এমন প্রশ্ন করেন অনেকে।

ইসলামী আইন ও ফিকাহ শাস্ত্র বিশেষজ্ঞরা বলেন,

কারও শরীর থেকে ইচ্ছায় বা অনিচ্ছা রক্ত বের হলে সেটা নাপাক বা অপবিত্র বলে গণ্য হয় এবং যার শরীর থেকে প্রবাহিত রক্ত বের হলো, তার অজু ভেঙে যাবে। তাই কেউ রক্ত দিলে তার অজু ভেঙে যাবে। 

বিখ্যাত ফকিহ ইবরাহিম নাখয়ি (রহ.) বলেন, কোনো ব্যক্তি যদি থুথু ফেলে এবং থুথুতে রক্ত দেখে তা হলে লক্ষ করবে লাল বর্ণের ওপর শুভ্রতা প্রাধান্য পেয়েছে নাকি শুভ্রতার ওপর লাল বর্ণের প্রাধান্য বেশি। যদি লাল বর্ণ প্রাধান্য পায় তা হলে অজু করতে হবে। আর শুভ্রতা প্রাধান্য পেলে অজু করতে হবে না। 

অর্থাৎ কেউ যদি স্বেচ্ছায় শরীর থেকে রক্ত বের করে তা হলে আবশ্যিকভাবেই তার অজু ভেঙে যাবে এবং নামাজ পড়ার জন্য নতুন করে অজু করতে হবে। উল্লেখ্য, মুমূর্ষু ব্যক্তির জীবন রক্ষার জন্য রক্তদানের জন্য স্বতন্ত্রভাবে সওয়াব পাবে। (মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা : ১৩৩২; আহসানুল ফাতাওয়া : ২/২৭; ফাতাওয়া মাহমুদিয়া : ৫/৭০)

অন্যের জীবন রক্ষায় রক্তদানে যে সওয়াব

অন্যের জীবন রক্ষা ও সহযোগীতায় এগিয়ে আসা ইসলামের নির্দেশনা ও সওয়াবের কাজ। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, ‘যে কারও জীবন রক্ষা করে, সে যেন সবার জীবন রক্ষা করে।’ -(সুরা আল মায়িদা : ৩২)

অন্যত্র বর্ণিত হয়েছে, ‘তোমরা কল্যাণকর কাজে একে অপরকে সহযোগিতা করো, পাপে তোমরা একে অপরকে সহযোগিতা কোরো না।’-(সুরা : মায়েদা, আয়াত : ২)

হাদিসে এসেছে, যারা অন্যের প্রয়োজন পূরণ করে, আল্লাহ তায়ালাও তাদের প্রয়োজন পূরণ করেন। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যতক্ষণ একজন মানুষ অন্য মানুষের কল্যাণে নিয়োজিত থাকবে, আল্লাহ তাআলাও তার কল্যাণে রত থাকবেন। ’ (মুসলিম, হাদিস : ৬৭৪৬)

অন্যের কল্যাণে এগিয়ে আসা একজন মুমিনের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। সালেম (রহ.) তাঁর বাবা থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘এক মুসলিম অপর মুসলিমের ভাই। কাজেই সে তার ওপর নির্যাতন করবে না এবং তাকে অসহায় অবস্থায়ও ছেড়ে যাবে না। যে ব্যক্তি তার মুসলিম ভাইয়ের প্রয়োজন মেটাবে, আল্লাহ তার প্রয়োজন মেটাবেন। একইভাবে যে ব্যক্তি কোনো মুসলিমের বিপদ দূর করবে, আল্লাহ কিয়ামতের দিন তার বিপদ দূর করে দেবেন। আর যে ব্যক্তি কোনো মুসলিমের দোষ গোপন রাখবে, কিয়ামতের দিন আল্লাহ তার দোষ গোপন রাখবেন। ’ (আবু দাউদ, হাদিস : ৪৮৯৩)

এনটি