প্রতীকী ছবি

মৃত্যু এমন এক বাস্তবতা যা থেকে পালানোর কোনও উপায় নেই। নির্ধারিত সময়ে সবাইকে আলিঙ্গন করবে এই পরম সত্য। পবিত্র কোরআনে বর্ণিত হয়েছে, ‘তাদের মৃত্যুর নির্ধারিত সময় যখন উপস্থিত হয় তখন তারা তা এক মুহূর্তও বিলম্বিত করতে পারবে না, এমনকি মুহূর্তকাল ত্বরান্বিতও করতে পারবে না। -(সূরা নাহল, আয়াত, ৬১)

মুমুর্ষ ব্যক্তিকে কালিমার পড়ার জন্য উৎসাহিত করা

মৃত্যুর দ্বারপ্রান্তে উপস্থিত, মুমুর্ষ ব্যক্তিকে কালিমার পড়ার জন্য উৎসাহিত করা উচিত। নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘তোমরা তোমাদের মৃত্যুগামী ব্যক্তিদের ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ্’র তালকীন করো। -(সহীহ মুসলিম, হাদীস ৯১৬, ৯১৭)

অর্থাৎ তার পাশে বা সামনে আওয়াজ করে কালেমা পড়তে থাকা উচিত। তবে মনে রাখতে হবে, এ অবস্থায় তাকে কিছুতেই মুখে উচ্চারণ করে কালেমা পড়ার আদেশ করা যাবে না। জোরাজুরি করা যাবে না; এতে হিতে বিপরীত হতে পারে। তাই নিয়ম হল, তার পাশে বসে মৃদু আওয়াজে শুধু কালিমা পড়তে থাকা। 

মৃত্যুর পর প্রতিবেশিদের দায়িত্ব

কেউ ইন্তেকাল করলে তার গোসল, কাফন, জানাজা, জানাজা বহন ও দাফন করার দায়িত্ব বর্তায় অন্য মুসলমানদের ওপর। এবং এ দায়িত্ব পালনে দেরি করা কাম্য নয়। যতদ্রুত সম্ভব এই কাজগুলো সম্পন্ন করে ফেলা উচিত।

মৃত ব্যক্তিকে গোসল করানোর সময় যদি তার হাত অথবা পা কোনও অঙ্গের নখ বড় থাকে অথবা চুল অগোছালো থাকে তাহলে নখ কেটে দেওয়া ও চুল আঁচড়ে দেওয়া কি ঠিক হবে?

সমাধান

এবিষয়ে ইসলামী আইন ও ফেকাহ শাস্ত্রবিদেরা বলেন, মৃত ব্যক্তির চুল, নখ ইত্যাদি বড় থাকলেও তা কেটে দেওয়া যাবে না। শরিয়তে এমন কাজকে মাকরূহ (অপছন্দনীয়) বলা হয়েছে। তাই কোনও ব্যক্তি মুমূর্ষু অবস্থায় পৌঁছালে তার পরিবারের উচিত ইন্তেকাল করার আগেই তার চুল নখ কেটে দেওয়া ও পরিস্কার করা।

উম্মুল মুমিনীন হজরত আয়েশা রা. এমন করা থেকে বিরত থাকতে বলেছেন। তিনি এ বিষয়ে নিষেধও করেছেন। প্রখ্যাত তাবেয়ি ইবরাহিম নাখায়ী (রহ.) বলেন, উম্মুল মুমিনীন আয়েশা (রা.) এক মৃতের চুল আঁচড়ে দিতে দেখে বললেন, তোমরা মৃতের চুল কেন আঁচড়াচ্ছ? (কিতাবুল আসার : ১/২৪২)

মুহাম্মাদ (রহ.) মৃতের আত্মীয়দের আগেই এই কাজের প্রতি গুরুত্ব দিতে বলেছেন। এক বর্ণনায় তিনি বলেন, মৃত ব্যক্তির বগলের নিচের পশম ও নখ কাটাকে মাকরূহ মনে করা হয়। তিনি বলতেন, অসুস্থ ব্যক্তির আত্মীয়-স্বজনের উচিত, এই কাজটি তার অসুস্থাবস্থায় করে দেওয়া। -(মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবাহ ৭/১৩৯, হাদিস নং : ১১০৫৩)

ইবনে সিরিন (রহ.) থেকে বলেন, ‘মৃতব্যক্তির চুল ও নখ কাটা যাবে না।’ -(মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক, হাদিস নং : ৬২২৮)

হানাফি মাজহাবের বিখ্যাত ফাতাওয়া গ্রন্থ ‘আল-ফাতাওয়া-আল হিন্দিয়া’ (১/১৫৮) রয়েছে, মৃতের চুল ও দাঁড়ি আচঁড়ে দেবে না, তার নখ ও চুলও কাটবে না। হিদায়া কিতাবে মাসআলাটি এভাবেই রয়েছে। মৃতের গোঁফ কাটবে না, তার বগলের নিচে পশম উঠাবে না। তার নাভীর নিচের লোম কেটে দেবে না। বরং এসব জিনিসসহ তাকে দাফন করবে।

(আদ্দুরল মুখতার ২/১৯৮, শামি : ২/১৯৮, ফাতহুল কাদির ২/৭৫, তাবয়িনুল হাকায়েক ১/৫৬৭, শরহুল  ‍মুনিয়্যাহ ৬৭৯, আল-বাহরুর রায়েক ২/১৭৩)

এনটি