প্রতীকী ছবি

বিয়ের মাধ্যমে দু’জন মানুষের একটি পবিত্র সম্পর্ক তৈরি হয়। এই সম্পর্কে মাধ্যমে দ্বীনের অর্ধেক পূরণ হয়। এই সম্পর্কের জেরে দু’জন মানুষ আজীবন একসাথে থাকার অঙ্গীকার করলেও সবসময় সবার ইচ্ছে পূরণ হয় না। অনেক সময় হয়তো একজনের আগেই আরেকজনে মৃত্যু হয়। কখনোবা পৃথিবীর তিক্ত বাস্তবতা ও পারিপার্শিক পরিস্থিতির কারণে বিচ্ছেদ হয়ে যায় দু’জনের। 

বিশেষ কারণে ইসলামে বিবাহ বিচ্ছেদ বৈধ হলেও এটি একটি গর্হিত কাজ এবং আল্লাহ তায়ালার কাছে সবথেকে অপছন্দনীয় বিষয়।সাহাবি হজরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রাযিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘আল্লাহর কাছে সবচেয়ে অপ্রিয় হালাল হচ্ছে তালাক।’ -সুনানে ইবনে মাজাহ: ২০১৮

সাহাবি হজরত মুহারিব ইবনে দিছার রাযিয়াল্লাহু আনহুর সূত্রে অন্য এক হাদিসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘আল্লাহতায়ালা তার কাছে তালাকের চেয়ে অপ্রিয় কোনো কিছু হালাল করেননি।’ -সুনানে আবু দাউদ: ২১৭৭

অতএব পারতপক্ষে বিবাহ বিচ্ছেদের পথে না হাটা উচিত। তবে কোনও কারণে স্বামী মারা গেলে বা অনেক চেষ্টার পরেও বিচ্ছেদ হয়ে গেলে নারীর জন্য ইসলামী শরীয়তে পালনীয় বিধান রয়েছে। তাহলো, ইদ্দত পালন। 

ইদ্দত শব্দের আভিধানিক অর্থ সময় গণনা করা। পরিভাষায় ইদ্দত বলা হয়- স্বামীর মৃত্যুর পর বা তালাকের পর নির্দিষ্ট সময়কাল পর্যন্ত পরবর্তী বিয়ে থেকে বাধ্যতামূলকভাবে নিজেকে বিরত রাখা। এ বিষয়ে পবিত্র কোরআনে এসেছে, ‘তোমাদের মধ্যে যারা স্ত্রী রেখে মৃত্যুমুখে পতিত হয়, তাদের স্ত্রীরা চার মাস ১০ দিন প্রতীক্ষায় থাকবে...। ’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ২৩৪)

যে নারীর স্বামী মারা গেছে সে যদি গর্ভবতী হয় তাহলে তার ইদ্দত সন্তান প্রসব পর্যন্ত। কেননা, এ প্রসঙ্গে পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘গর্ভবতীদের সময়কাল হলো- সন্তান প্রসব করা।’ -(সূরা তালাক: ৪) আর সে যদি গর্ভবতী না হয়- তাহলে তার ইদ্দত চার মাস দশ দিন। বর্ণিত হয়েছে, ‘তোমাদের মধ্যে যারা স্ত্রী রেখে মারা গেছে তাদের স্ত্রীরা চার মাস দশ দিন পর্যন্ত নিজেদের বিরত রাখবে।’ -(সূরা বাকারা: ২৩৪)

এই চার মাস ১০ দিনে বিচ্ছেদ হয়ে যাওয়া বা বিধবা নারীর ছয়টি কাজ করণীয়—১. স্বামীর ঘর-বাড়িতে অবস্থান করবে। ২. সাজসজ্জাহীন সাধারণ পোশাক পরিধান করবে। ৩. সুগন্ধি ব্যবহার করবে না। ৪. অলংকার ব্যবহার করবে না। ৫. মেহেদি ও কাজল ব্যবহার করবে না। ৬. সরাসরি বিবাহে আবদ্ধ হওয়া বা বিবাহমূলক কথা বা কাজ করবে না। তবে প্রয়োজনে ঘর থেকে বের হতে পারবে এবং চিকিৎসার প্রয়োজনে ডাক্তারের কাছে যাওয়া যাবে।

স্বামীর মৃত্যু বা স্বামী সঙ্গে নারীর বিচ্ছেদের পর শরীয়তের নির্ধারিত এই বিধানের গোপন রহস্য আল্লাহ তায়ালাই ভাল জানেন। তবে আলেমরা বলে থাকেন এই চার মাস ১০ দিন ইদ্দত পালনের নির্দেশ দেওয়ার কারণ হলো, এর মাধ্যমে যেন নিশ্চিত হওয়া যায় যে, বিধবা নারী পেটে সন্তান আছে কি না। এতে সন্তানের বংশ ও জন্মের পবিত্রতা বোঝা যাবে। পেটে সন্তান থাকলে তা আগের স্বামীর হবে। এবং মৃত স্বামীর সম্পত্তি থেকে সন্তানের ভরণপোষণ হবে।

অথবা এই বিধানের আরো বড় কোনও কল্যাণ রয়েছে, যা আল্লাহ তায়ালা ভালো জানেন। তবে প্রত্যেকের জন্য এই বিধান পালন করা আবশ্যকীয়।

এনটি