প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ করা হয়েছে। ঠিকমত এ বিধান পালন করলে আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি ও চিরস্থায়ী জান্নাতের সুসংবাদ দেওয়া হয়েছে। পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, ‘বিশ্বাসীরা অবশ্যই সফলকাম, যারা বিনয়াবনত তাদের নামাজে।’ –(সূরা মুমিনুন, আয়াত, ২৩)

প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত ফরজ নামাজের আগে-পরে ১২ রাকাত সুন্নত নামাজ রয়েছে, যার গুরুত্ব অপরিসীম। শরীয়তের পরিভাষায় সুন্নত বলা হয়, ওই আদেশমূলক বিধানকে, যা ফরজ-ওয়াজিবের মতো অপরিহার্য না হলেও রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর নিয়মিত আমল থেকে তা প্রমাণিত। -(ফিকহুস সুন্নাহ, ১৬০)

সুন্নত নামাজের গুরুত্ব সম্পর্কে বলা হয়েছে, কেয়ামতের দিন কারও ফরজ নামাজে ঘাটতি থাকলে, এ নামাজ দ্বারা আল্লাহ তায়ালা সেই ঘাটতি পূরণ করবেন।

নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘কেয়ামতের দিন বান্দার কাছ থেকে সবার আগে যে আমলের হিসাব নেওয়া হবে, তা হল নামাজ। নামাজ ঠিক হলে সে পরিত্রাণ ও সফলতা লাভ করবে। নইলে (নামাজ ঠিক না হলে) ধ্বংস ও ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

সুতরাং (হিসাবের সময়) ফরজ নামাজে কোনও কমতি দেখা গেলে আল্লাহ তায়ালা ফেরেশতাদের বলবেন, ‘দেখ, আমার বান্দার কোনও নফল (নামাজ) আছে কি না।’ অতএব তার নফল নামাজ দ্বারা ফরজ নামাজের ঘাটতি পূরণ করা হবে। তারপর অন্য আমলের হিসাব গ্রহণ করা হবে।’ -(সুনানে আবু দাউদ, ৭৭০, তিরমিজি, ৩৩৭, ইবনে মাজাহ, ১১৭)

প্রতিদিন ফরজের আগে ও পরের সুন্নতগুলো রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সবসময় আদায় করতেন, কখনও কোনও বিশেষ কারণ ছাড়া তা আদায় করা থেকে বিরত থাকতেন না এবং সাহাবায়ে কেরামকে আদায়ের নির্দেশ দিতেন।

সুন্নত নামাজ ফরজ নামাজেরই মতো নিয়ত করে সুরা কেরাত মিলিয়ে পড়তে হয়। তবে পার্থক্য হলো ফরজ নামাজ চার রাকাত বিশিষ্ট হলে তৃতীয় ও চতুর্থ রাকাতে সুরা ফাতিহার সঙ্গে সুরা মিলানো ওয়াজিব নয় কিন্তু সুন্নত নামাজের প্রত্যেক রাকাতে সুরা ফাতিহা পড়া ওয়াজিব। তাই-

যদি কেউ কখনো ভুল বশত সুন্নতের কোনও রাকাতে সুরা ফাতিহার সঙ্গে অন্য কোনও সুরা মিলাতে ভুলে যায় তাহলে তার নামাজ হবে কিনা - এ নিয়ে অনেকে সন্দেহে পড়ে যান। 

 

এ বিষয়ে ইসলামী আইন ও ফেকাহ শাস্ত্রবিদদের মতামত হলো, ফরজ নামাজের প্রথম দুই রাকাতে এবং সুন্নত ও নফলের সকল রাকাতে সূরা ফাতেহার পর অন্য কোনো সূরা মিলানো ওয়াজিব। নিয়ম হচ্ছে, কেউ যদি ভুলে নামাজের কোনো ওয়াজিব ছেড়ে দেয় তাহলে তার ওপর সিজদায়ে সাহু আবশ্যক। সুতরাং সুন্নত নামাজে সূরা ফাতেহার পর অন্য সূরা মিলাতে ভুলে গেলে সিজদায়ে সাহুর মাধ্যমে নামাজ পূর্ণ হয়ে যাবে। 

তবে কোনো কারণ ছাড়াই সিজদায়ে সাহু ছেড়ে দিলে ওয়াক্তের মধ্যে নামাজটি পুনরায় পড়া আবশ্যক, অন্যথায় গোনাহগার হবে।—(সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং : ১০৩৮; মারাকিউল ফালাহ : ২৪৮; মারাকিউল ফালাহ (হাশীয়াতুত তাহতাবীসহ) : ২৪৭—২৪৮; আদ্দুররুল মুখতার : ২/৭৮; আল—মুহীতুল বুরহানী : ২/৩০৯; আলবাহরুর রায়েক : ১/৫১০, ৫১৬)

এনটি