প্রতীকী ছবি

জাকাত ইসলামের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ। এটি ইসলামি সমাজ ও অর্থনৈতিক ব্যবস্থার অনন্য অনন্য প্রতিষ্ঠান। জাকাত একদিকে দরিদ্র, অভাবী ও অক্ষম জনগোষ্ঠীর সামাজিক নিরাপত্তার গ্যারান্টি। আবার অন্যদিকে অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও প্রবৃদ্ধির অন্যতম প্রধান হাতিয়ার।

যার কাছে নিসাব পরিমাণ সম্পদ আছে— এমন স্বাধীন ও পূর্ণবয়স্ক মুসলিম নর-নারী জাকাত আদায় করবে। কারণ, তাদের ওপর জাকাত ফরজ। জাকাত ঠিকমতো আদায় না করলে আল্লাহর দরবারে জবাবদিহি ও শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে। 

পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেন,  ‘এবং যারা সোনা ও রুপা জমা করে রাখে, আর তা আল্লাহর রাস্তায় খরচ করে না, আপনি তাদের বেদনাদায়ক আজাবের সুসংবাদ দিন, যেদিন জাহান্নামের আগুনে তা গরম করা হবে, অতঃপর তা দিয়ে তাদের কপালে, পার্শ্বদেশে ও পিঠে সেঁক দেওয়া হবে। (আর বলা হবে) এটা তা-ই, যা তোমরা নিজেদের জন্য জমা করে রেখেছিলে। সুতরাং তোমরা যা জমা করেছিলে তার স্বাদ উপভোগ করো। ’ (সুরা : তাওবা, আয়াত : ৩৪-৩৫)

অতএব জাকাত ফরজ এমন প্রত্যেক মুমিনের উচিত সময়মতো তা আদায় করা। জাকাত আদায়ের জন্য কয়েকটি শর্ত রয়েছে। শর্তগুলো হলো-

এক. সম্পদের ওপর পূর্ণাঙ্গ মালিকানা থাকতে হবে।
দুই. সম্পদ উৎপাদনক্ষম ও বর্ধনশীল হতে হবে।
তিন. নিসাব পরিমাণ সম্পদ থাকতে হবে।
চার. সারা বছরের মৌলিক প্রয়োজন মেটানোর পর অতিরিক্ত সম্পদ থাকলেই শুধু জাকাত ফরজ হবে।
পাঁচ. জাকাত ফরজ হওয়ার জন্য ঋণমুক্ত হওয়ার পর নিসাব পরিমাণ সম্পদ থাকা শর্ত।
ছয়. কারো কাছে নিসাব পরিমাণ সম্পদ পূর্ণ এক বছর থাকলেই শুধু ওই সম্পদের ওপর জাকাত দিতে হবে।

মানুষ বিভিন্নভাবে সম্পদের মালিক হয়ে থাকে। বর্তমানে অনেকে লটারির মাধ্যমেও সম্পদ পেয়ে থাকে। এর ওপর অনেক সময় এক বছর পূর্ণ হয়ে যায়। লটারির সম্পদের ওপর বছর পূর্ণ হলে কি তারও জাকাত দিতে হয়। এমন প্রশ্ন করেন অনেকে। যেমন, একজন জানতে চেয়েছেন-

আমি একজন সাধারণ মানুষ। ছোট্ট একটি চাকরি করি। এতেই মোটামুটিভাবে আমার সংসার চলে। আমার কাছে যাকাতের নেসাব পরিমাণ সম্পদ নেই। একদিন আমি লটারি ধরি। তাতে দুই লক্ষ টাকা পেয়ে যাই। পরবর্তীতে জানতে পারি, লটারিতে পাওয়া টাকা হারাম। তাই এ টাকা গরীব-অসহায়দের দেওয়ার জন্য রেখে দেই। আমি আর এ টাকা খরচ করিনি। কিন্তু আমার কাছে থাকতেই এ টাকার ওপর বছর পূর্ণ হয়ে যায়। এখনো তা কাউকে দিতে পারিনি।

এখন জানার বিষয় হলো, আমাকে কি এ টাকার যাকাত দিতে হবে?

এ বিষয়ে ইসলামী আইন ও ফেকাহ শাস্ত্রবিদদের মতামত হলো- লটারির টাকার জাকাত দিতে হবে না, বরং এই টাকার পুরোটাই সওয়াবের নিয়ত ছাড়া সদকা করে দিতে হবে। কেননা জাকাত আসে হালাল সম্পদের ওপর। হারাম সম্পদের ওপর জাকাত ওয়াজিব হয় না, লটারিতে পাওয়া সম্পদের পুরোটাই হারাম, তাই এর পুরোটাই সদকাযোগ্য। -(ফাতাওয়া বায্যাযিয়া ১/৮৬; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৩/২৩৩; শরহু মানযুমাতি ইবনি ওহবা ১/৭৮; রদ্দুল মুহতার ২/২৯১, আল কাউসার, ৫৮৭৮)

লটারির বিষয়টি স্পষ্ট হারাম। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘হে মুমিনগণ! নিশ্চয়ই মদ, জুয়া, মূর্তি ইত্যাদি এবং লটারীর তীর, এ সব গর্হিত বিষয়, শয়তানী কাজ ছাড়া আর কিছুই নয়। সুতরাং এ থেকে সম্পূর্ণরূপে দূরে থাক, যেন তোমাদের কল্যাণ হয়।’ (সুরা মায়েদা,আয়াত : ৯০)

এনটি