প্রতীকী ছবি

বিভিন্ন কোম্পানি তাদের পণ্য বিক্রির জন্য নানা ধরনের অফার দিয়ে থাকে। যেমন কিছুদিন আগে দেশের বিখ্যাত ইলেকট্রনিক্স কোম্পানি তাদের ফ্রিজের ওপর ক্রেতাদের জন্য একটি বিশেষ অফার দিয়েছে। সেটির নাম ‘মিলিওনিয়ার অফার’।

অফারটির ধরন হলো- কেউ শো-রুম থেকে একটি ফ্রিজ কিনলে— তাকে একটি স্ক্র্যাচ কার্ড দেওয়া হয়। কার্ডটির নির্ধারিত স্থান ঘষা হলে— তাতে নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকার অংক লেখা পাওয়া যায়। ৫০০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত টাকার অংক থাকে।

স্ক্র্যাচ কার্ডে টাকার যে পরিমাণ অংক লেখা থাকে, তা গ্রাহককে তারা নগদ পরিশোধ করে দেয়। অনেকসময় কিছু টাকার পণ্য নিতে বলে, আর বাকি টাকা নগদ আদায় করে দিয়ে থাকে।

তাই অনেকে জানতে চান— অফার চলাকালীন এই অফারের আওতাধীন পণ্য কিনে স্ক্র্যাচ কার্ডে লিখিত পুরস্কার গ্রহণ করা কি জায়েজ হবে? এবং গ্রাহকদের এই ধরনের অফার দেওয়া কি বৈধ?

এর উত্তর হলো—

পণ্য কেনা ও পণ্যের মূল্য নির্ধারণ করা ক্রয়-বিক্রয়ের অন্যতম শর্ত। আর শরিয়তের দৃষ্টিতে প্রত্যেক বস্তুর জন্য মূল্য নির্ধারণ করা জরুরি। তাই প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে ওই ব্র্যান্ডের পণ্য কিনতে চাইলে কিংবা অন্য সময় বিভিন্ন পণ্য কিনলে অফার বা কোনো লটারি হালাল হওয়ার জন্য নিম্নোক্ত শর্তগুলো পাওয়া যাওয়া আবশ্যক-

প্রশ্নোক্ত পদ্ধতিতে কেউ নিম্নোক্ত শর্তগুলো পালন করলে তার জন্য পণ্য ক্রয় করা এবং প্রাপ্ত পুরস্কার গ্রহণ সবই জায়েয হবে-

এক. অফারের কারণে পণ্যের দাম স্বাভাবিক মূল্য থেকে বৃদ্ধি না হতে হবে। এমন যেন না হয় যে, প্রথমে দাম বাড়িয়ে ধরল, এরপর লটারির মাধ্যমে পুরস্কার দিল।

দুই. লটারি ভেজাল পণ্য প্রচারের মাধ্যম হতে পারবে না। কেননা ভেজাল পণ্যের মাধ্যমে মানুষকে ধোঁকা দেওয়া হয়, যা সম্পূর্ণ হারাম।

তিন. পণ্য ক্রয় মূল উদ্দেশ্য হওয়া। শুধু লটারি বা পুরস্কার পাওয়ার উদ্দেশ্যে টাকা না খাটানো।

মোটকথা, অফারটি একতরফা হতে হবে। অর্থাৎ শুধু বিক্রেতার পক্ষ থেকে দেওয়ার ঘোষণা থাকবে। ক্রেতার পক্ষ থেকে নেওয়ার ক্ষেত্রে কোনো শর্ত থাকবে না।

অফার গ্রহণ কখন জায়েজ এবং কখন নাজায়েজ

উপরোক্ত শর্তাদি পাওয়া গেলে অফারযুক্ত পণ্য ক্রয় করা বা বিক্রেতা কর্তৃক কোনো পণ্যে পুরস্কার দেওয়া হলে তা গ্রহণ করা জায়েয হবে এর মাধ্যমে প্রাপ্ত পুরস্কার বৈধ হবে।

পক্ষান্তরে উক্ত শর্তগুলো পূর্ণ না হলে পণ্য ক্রয়-বিক্রয়, উক্ত লটারি ও এর মাধ্যমে প্রাপ্ত পুরস্কার জায়েজ হবে না। (হেদায়া: ৪/৫৭২; আল-বাহরুর রায়েক: ৮/৩৭১)

বিক্রেতা-ক্রেতার সতর্ক থাকতে হবে যে কারণে

উল্লেখ্য, পণ্য মার্কেটিং ও বাজারজাতকরণে শরিয়ার নীতি হলো- পণ্যের গুণগত মান বৃদ্ধি করার মাধ্যমে ক্রেতাকে আকৃষ্ট করা কিংবা সরাসরি মূল্য ছাড় দেওয়া। কিন্তু তা না করে— মূল্যের কিছু অংশ অনিশ্চিত পুরস্কারের সঙ্গে ঝুলিয়ে রাখা এবং লাখ টাকার প্রলোভন দেখিয়ে ক্রেতাকে আকৃষ্ট করা— অতঃপর অল্প কয়েকজনকে সামান্য পুরস্কার দেওয়া সম্পূর্ণভাবে ধোঁকা। শরিয়াহ নীতির সঙ্গে এই পদ্ধতি সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। এতে ‘শিবহুল গারার’ (شبه الغرر) তথা এক প্রকার প্রতীকী প্রতারণা পাওয়া যায়।

এভাবে বাজারকে প্রভাবিত করা ইসলামের বাণিজ্যনীতির পরিপন্থি। এসবই পুঁজিবাদের বানানো অপকৌশল। পুঁজিবাদীদের আবিষ্কৃত এসব কার্যকলাপ অনেকসময় বাজারকে অসৎ উপায়ে পরিচালিত করে এবং বাজারের ভারসাম্য নষ্ট করে। মুসলমানদের এহেন কাজ থেকে বিরত থাকা উচিত। 

তথ্যসূত্র : মাআলিমুস সুনান ৩/৪০০;  আলমুগনী  ১৩/৪০৮;  মাজমূআতুল ফাতাওয়াশ শারইয়্যাহ ১১/১৭১; বুহুস ফী কাযায়া ফিকহিয়্যাহ মুআসিরাহ ২/১৫৮)


প্রশ্নটি করেছেন : রাকিবুল হাসান - মির্জাপুর, টাঙ্গাইল