প্রতীকী ছবি

ইসলামপূর্ব জাহেলি সমাজে বিধবা ও তালাকপ্রাপ্ত নারীরা বিভিন্ন অবিচার ও বৈষম্যের শিকার ছিল। কিন্তু ইসলাম স্বামীহারা নারীদের মানবিক সম্মান ও অধিকার দিয়েছে। মহানবী (সা.) বিধবা নারীদের সামাজিক ও ধর্মীয় সম্মান প্রতিষ্ঠা করেছেন।

আমাদের সমাজে বিধবা ও স্বামীহারা নারীরা শুধু পরিবারে অবহেলিত নয়; বরং অনেকে তাদের অপয়া মনে করে। অথচ তারা কখনো অপয়া, অচ্ছুৎ ও অস্পৃশ্য নয়।

বিধবা নারীকে সম্মানজনক জীবনযাপনের জন্য প্রয়োজনীয় সব অধিকার দিয়েছে ইসলাম। বিধবাকে দেওয়া ইসলামের প্রধান প্রধান অধিকারগুলো হলো— 

এক. সম্পদের উত্তরাধিকার
ইসলাম বিধবা নারীকে স্বামীর সম্পদের উত্তরাধিকারী করেছে। বিধবা নারী সন্তান ও সন্তানের সন্তানের সঙ্গে স্বামীর সম্পদের এক-অষ্টমাংশের মালিক হয় আর সন্তান ও সন্তানের সন্তান না থাকলে এক-চতুর্থাংশের মালিক হয়।

পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমাদের সন্তান না থাকলে তাদের (স্ত্রীদের) জন্য তোমাদের পরিত্যক্ত সম্পদের এক-চতুর্থাংশ, তোমাদের সন্তান থাকলে তাদের জন্য তোমাদের পরিত্যক্ত সম্পদের এক-অষ্টমাংশ। তোমরা যে অসিয়ত করবে তা দেওয়ার পর এবং ঋণ পরিশোধের পর।’ (সুরা : নিসা, আয়াত : ১২)

বিধবা স্ত্রী সন্তানহীন হলে অথবা অন্যত্র বিয়ে করলেও সে মৃত স্বামীর সম্পদের উত্তরাধিকারী হবে, যদিও বিষয়টি নিয়ে সমাজে কুসংস্কার রয়েছে।

দুই. সামাজিক অধিকার ও মর্যাদা
মহানবী (সা.) একাধিক বিধবা নারীকে বিয়ে করে তাদের প্রতি সামাজিক অবহেলা ও অবজ্ঞার পথ বন্ধ করেছেন এবং তিনি বিধবার প্রতি সদয় আচরণ করতে উদ্বুদ্ধ করেছেন। আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, নবী (সা.) বলেছেন, ‘বিধবা ও মিসকিনের জন্য খাদ্য জোগাড়ে চেষ্টারত ব্যক্তি আল্লাহর রাস্তায় জিহাদকারীর মতো অথবা রাতে সালাতে দণ্ডায়মান ও দিনে সিয়ামকারীর মতো।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৫৩৫৩)

অন্য হাদিসে এসেছে, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) কোনো বিধবা ও অভাবীর সঙ্গে পথ চললে তাদের প্রয়োজন পূরণ করতেন।’ (সুনানে নাসায়ি, হাদিস : ১৪২৫)

তিন. বিয়ে ও নতুন জীবন
ইসলাম বিধবা নারীকে শুধু বিয়ের অনুমতি দেয়নি; বরং উৎসাহিত করেছে। স্বামীর মৃত্যু বা তালাকপ্রাপ্ত হওয়ার পর নির্ধারিত সময় ইদ্দত পালন করার পর বিধবা নিজের পছন্দ অনুযায়ী যেকোনো পুরুষকে বিয়ে করতে পারবে। এ ক্ষেত্রে কেউ তাকে বাধ্য করতে বা বাধা দিতে পারবে না।

আল্লামা আশরাফ আলী থানবি (রহ.) বলেন— 

চরম মূর্খতার কারণে বেশির ভাগ মানুষ বিধবা নারীর দ্বিতীয় বিয়েকে দোষের মনে করে। ... অথচ কখনো কখনো বিধবা নারীর জন্য দ্বিতীয় বিয়ে প্রথম বিয়ের মতো ফরজ। যেমন বিধবা যুবতী হলে, তার বিভিন্ন আচরণে বিয়ের চাহিদা প্রকাশ পেলে, বিয়ে না দিলে ফিতনার ভয় থাকলে, খাওয়া-পরার কষ্ট থাকলে, দারিদ্র্যের কারণে দ্বিন-ধর্ম ও সম্ভ্রম নষ্ট হওয়ার ভয় আছে— এমন নারীর জন্য দ্বিতীয় বিয়ে ফরজ।’ এমন অবস্থায় বিধবা নারী বিয়ে করতে না চাইলেও তার বিয়ের ব্যবস্থা করতে হবে।

(মুসলিম বর-কনে ইসলামী বিয়ে, পৃষ্ঠা ৬১ ও ৬৩)

চার. সন্তানের দায়িত্ব শুধু বিধবা নারীর নয়
সাধারণত সন্তানের মুখের দিকে তাকিয়ে বিধবা নারী তার জীবন ও যৌবন বিসর্জন দেয় অথবা সন্তানের দোহাই দিয়ে তাকে দ্বিতীয় বিয়ে থেকে বিরত রাখা হয়। ইসলাম বিধবা নারীকে সন্তানের ‘একক দায়’ থেকে মুক্তি দিয়েছে। ইসলামী শরিয়ত মতে, সম্পদ ও ব্যয় নির্বাহের ক্ষেত্রে পিতার অবর্তমানে দাদা সন্তানের অভিভাবক এবং তার অবর্তমানে ইসলামী রাষ্ট্রের বিচারক অভিভাবক নির্ধারণ করে দেবে। অবশ্য মা সন্তান প্রতিপালন করবে যতক্ষণ না সে অন্যত্র বিয়ে করে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘তুমি সন্তানের ব্যাপারে বেশি হকদার যতক্ষণ না তুমি বিয়ে করো।’ (সুনানে আবি দাউদ, হাদিস : ২২৭৬)

তবে সন্তান প্রতিপালনের অজুহাতে মায়ের জীবন ক্ষতিগ্রস্ত করার সুযোগ নেই। আল্লাহ বলেন, ‘কোনো মাকে তার সন্তানের জন্য এবং কোনো পিতাকে তার সন্তানের জন্য ক্ষতিগ্রস্ত করা হবে না।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ২৩৩)

তা ছাড়া বিধবা নারী ও তার সন্তানের প্রতিপালন মুসলিম সমাজ ও ইসলামী রাষ্ট্রের দায়িত্ব বলে মত দিয়েছেন ইসলামী আইন গবেষকরা।