প্রতীকী ছবি

কোনও শিশু ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর প্রথমে নবজাতককে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে ডান কানে আজান ও বাঁ কানে ইকামত দেওয়া সুন্নত। জীবনের শুরুতেই তার কানে এই বাণী পৌঁছে দেয়া যে, আল্লাহ তাআলার জন্যই তোমার জীবন উৎসর্গিত। তার বিধানাবলী তোমার জন্য প্রযোজ্য। রাসুল (সা.) হজরত হাসান (রা.)-এর কানে আজান দিয়েছিলেন। (তিরমিজি ১/২৭৮) 

হযরত হুসাইন রা. থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যার সন্তান হয়, সে যেন তার ডান কানে আজান এবং বাম কানে ইকামত দেয়। -(মুসনাদে আবী ইয়ালা, হাদীস, ৬৭৮০, মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক, হাদীস, ৭৯৮৫)

শুআবুল ঈমানের বর্ণনায় আছে, ফাতিমা (রা.) যখন আলী (রা.)-এর ছেলে হাসান (রা.)-কে প্রসব করলেন, তখন রাসুলুল্লাহ (সা.) তার ডান কানে নামাজের আজানের ন্যায় আজান দিয়েছিলেন। এবং বাম কানে ইকামত দিয়েছিলেন। (শুআবুল ইমান, হাদিস : ৮৬২০)

নবজাতকের কানে কী কারণে আজান দেওয়া হয় এ বিষয়ে ওলামায়ে কেরামের অনেক ব্যাখ্যা রয়েছে। কেউ কেউ লিখেছেন, শিশুর কানে আজান-ইকামত দেওয়ার অর্থ হলো তাকে এই কথা বলে দেওয়া যে আজান-ইকামত হয়ে গেছে, এখন শুধু নামাজের অপেক্ষা (নামাজ শুরু হতে সামান্য বিলম্ব, তা-ই তোমার জীবন)।

হজরত থানভি রহ. বলেন, ‘আজান-ইকামতের মাধ্যমে শিশুর কানে প্রথমেই আল্লাহর পবিত্র নাম পৌঁছে দেওয়া, যেন তার প্রভাবে তার ঈমানের ভিত্তি মজবুত হয়ে যায় এবং শয়তান দূরে সরে যায়। এই দুটি হিকমতেরই সারমর্ম হলো দুনিয়াতে আসার পর তুমি আল্লাহকে ভুলে গাফেল হয়ে থেকো না। ’ (তরবিয়তে আওলাদ, হজরত থানভি রহ.)

এ ব্যাপারে আবুল হাসান আলী নদভি রহ. বলেন, আজান ও ইকামত শুধু নামাজের জন্য নির্দিষ্ট। আর নবজাতক শিশু নামাজ তো দূরের কথা—এই আজান-ইকামতের মর্ম ও লক্ষ্য-উদ্দেশ্য কিছুই বোঝে না। তাহলে তার কানে আজান-ইকামত বলার উদ্দেশ্য কী? উদ্দেশ্য সম্ভবত এই যে কোনো কিছু পৌঁছবার আগে শিশুর কানে সর্বপ্রথম আল্লাহর নামাজ ও তাঁর ইবাদতের ডাক গিয়ে যেন পৌঁছে।

সন্তান ভূমিষ্ঠের পর সাধারণত বাবা, দাদা-নানা অথবা সেখানে উপস্থিত পুরুষেরা তাদের কানে আজান দিয়ে থাকে। কিন্তু কোনও কারণে যদি কখনও শিশু জন্মের সময় কোনও পুরুষ উপস্থিত না থাকে, তাহলে মহিলারা তুলনামূলক নিচু স্বরে বাচ্চার ডান কানে আজা এবং বাম কানে ইকামত দিতে পারবে। তবে বেশি উঁচু আওয়াজে দিবে না। 

নবজাতকের কানে নারীদের আজান-ইকামত দেওয়ার ক্ষেত্রে অবশ্যই তাদের হায়েজ নেফাস থেকে পাক পবিত্র থাকা জরুরি।

বাচ্চা ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর কোন বুযুর্গের মুখের লালা মিশ্রিত খেজুর দ্বারা তাহনিক করানো সুন্নত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজে অনেক সাহাবায়ে কেরামের তাহনিক করেছেন। প্রথম খাবারেই বুজুর্গের বরকত নেয়া মূল উদ্দেশ্য। তাই মহিলা যদি নেককার হয়, তাহলে তার দ্বারা তাহনিক করানো জায়েজ আছে। (বুখারি, হাদিস : ৫৪৬৭, উমদাতুল কারি, শরহে বুখারী, তহাবী, ফতোয়ায়ে মাহমুদিয়া, ফতোয়ায়ে দারুল উলুম দেওবন্দ)

এনটি