কারাউইন বিশ্ববিদ্যালয়ের মসজিদ, ছবি : শাটারস্টক

ফাতিমা আল-ফিহরি বিশ্বনন্দিত এক মহীয়সী মুসলিম নারী। যিনি বিশ্বের প্রথম বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। ৮৫৯ খ্রিস্টাব্দে মরক্কোর ফেজ শহরের কারাউইন বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। ইউনেসকো ও গিনেজ বুক অব ওয়ার্ল্ডের রেকর্ড অনুযায়ী এটিই হচ্ছে বিশ্বের প্রাচীনতম বিশ্ববিদ্যালয়, যা এখন পর্যন্ত একটানা চালু আছে।

মহীয়সী এই নারী আনুমানিক ৮০০ খ্রিস্টাব্দে বর্তমান তিউনিসিয়ার কাইরাওয়ান শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা মোহাম্মদ ফিহরি আল-কুরাইশি। শৈশব থেকে ফাতিমা পড়াশোনার প্রতি বেশ আগ্রহী ছিলেন। কিন্তু আর্থিক অনটনের কারণে জন্মভূমিতে স্থায়ী হতে পারেননি তার বাবা। ভাগ্যান্বেষণে কাইরাওয়ানের আরো বেশ কয়েকটি পরিবারের সাথে তিনিও পাড়ি জমান মরক্কোর প্রসিদ্ধ ফেজ শহরের উদ্দেশে।

ফেজে এসে মোহাম্মদ আল-ফিহরির ভাগ্য খুলে যায়। প্রচণ্ড পরিশ্রম ও বিচক্ষণতার কারণে নিজেকে একজন সফল ব্যবসায়ী হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেন। সন্তানদের জন্য সুশিক্ষার ব্যবস্থা করেন। প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পর ফেজেই এক যুবকের সাথে ফাতিমার বিয়ে হয়। কিন্তু বিয়ের কয়েক বছরের মাথায়ই ফাতিমাদের পরিবারে ‘মহাদুর্যোগ’ নেমে আসে। অল্প সময়ের ব্যবধানে তার বাবা, ভাই এবং স্বামী মৃত্যুবরণ করেন। রয়ে যান শুধু এতিম দুই বোন ফাতিমা ও মারইয়াম।

বাবার রেখে যাওয়া বিপুল পরিমাণ সম্পত্তির উত্তরাধিকার হন তারা। তখন দুই বোন বিলাসিতার পেছনে সম্পদ নষ্ট না করে তা ধর্ম ও মানবতার কল্যাণে ব্যয় করার সিদ্ধান্ত নেন। প্রথমে তারা ফেজে পৃথক দুটি নতুন মসজিদ নির্মাণ করেন। মারইয়াম নির্মাণ করেন আন্দালুস মসজিদ, ফাতিমা নির্মাণ করেন কারাউইন মসজিদ।


ঐতিহাসিক ইবনে আবি জারা বলেন, ফাতিমা ৮৫৯ সালের ডিসেম্বরের ৩ তারিখে মসজিদ নির্মাণের কাজ শুরু করেন। সেটা ছিল পবিত্র রমজান মাস। তিনি শুধু মসজিদ নির্মাণের জন্য অর্থ দান করেই নিজের দায়িত্ব শেষ করেননি, নিজে সার্বক্ষণিকভাবে উপস্থিত থেকে এর নির্মাণকাজ তদারকি করেছেন এবং প্রথম দিন থেকে শুরু করে নির্মাণ শেষ হওয়া পর্যন্ত তিনি রোজা রেখেছেন। নির্মাণকাজ শেষ হলে মসজিদের ভেতরে প্রবেশ করে নামাজ আদায় করেন ফাতিমা এবং আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। জন্মভূমি কাইরাওয়ানের নামানুসারে মসজিদের নাম রাখেন কারাউইন মসজিদ।

মসজিদ নির্মাণ সম্পন্ন হওয়ার পর ফাতিমা মসজিদের বর্ধিতাংশে একটি মাদরাসা নির্মাণ করেন। অল্পদিনের মধ্যেই সেখানে ইসলামী শিক্ষার পাশাপাশি ব্যাকরণ, গণিত, চিকিৎসাশাস্ত্র, জ্যোতির্বিদ্যা, ইতিহাস, রসায়ন, ভূগোলসহ বিভিন্ন বিষয়ে পাঠদান শুরু হয়। বৈচিত্র্যময় বিষয়ে আনুষ্ঠানিক শিক্ষার জন্য ডিগ্রি প্রদানের প্রচলনও চালু হয় এখানে। এভাবেই মসজিদ থেকে বিশ্বের প্রথম বিশ্ববিদ্যালয়ের গোড়াপত্তনের ইতিহাস রচিত হয় মরক্কোয়। ফাতিমা আল-ফিহরি ইন্তেকাল করেন ৮৮০ খ্রিস্টাব্দে।

সূত্র : আলজাজিরা ডকুমেন্টারি