বিশ্ব ইজতেমা ২০২৩, ছবি : গেটি ইমেজ

বাংলাদেশে প্রচলিত ধারার দাওয়াত ও তাবলিগের কাজ শুরু হয় ১৯৪৪ সালে। এরপর ক্রমন্বয়ে বেড়েছে এর পরিধি ও বিস্তৃতি। দীর্ঘ ৮০ বছরে এই দ্বিনি কাজ ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে বাংলাদেশের মুসলিমসমাজের সামগ্রিক জীবনযাত্রায়। দেশের ধর্ম, সমাজ, শিক্ষা, সংস্কৃতি, অর্থনীতি ও আন্তর্জাতিক সম্পর্কে দাওয়াত ও তাবলিগের প্রভাব দৃশ্যমান। নিম্নে তাবলিগি কাজের কিছু ইতিবাচক প্রভাব তুলে ধরা হলো।

দ্বীনী জাগরণ

নানা প্রতিবন্ধকতার কারণে বাংলাদেশের সামাজিক স্তরে দ্বিনি কর্মকাণ্ড সীমিত। বিশেষত দ্বিনি শিক্ষার প্রসার প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম। সামাজিক স্তরে ধর্মীয় জ্ঞানের চর্চা না থাকায় মানুষ কিছুটা দ্বিনবিমুখ। দাওয়াত ও তাবলিগের কাজ সমাজের তৃণমূল পর্যন্ত পৌঁছে যাওয়ায় বাংলাদেশের মুসলিমসমাজে ধর্মীয় জাগরণ ত্বরান্বিত হয়েছে।


বিশ্বাসের পরিশুদ্ধি

ভারতীয় উপমহাদেশে পির-মাশায়েখ ও দরবেশদের মাধ্যমে ইসলামের প্রসার ঘটেছে। ফলে ইসলাম যত দ্রুত প্রসার লাভ করেছে, দ্বিনি শিক্ষার প্রসার সে তুলনায় হয়নি। ফলে এখনো মানুষের ভেতর স্থানীয় ধর্মগুলোর রীতি-নীতি, কৃষ্টি ও সংস্কৃতির প্রভাব সক্রিয়। দাওয়াত ও তাবলিগের ‘ঈমানি আন্দোলন’ মুসলিম সমাজকে এসব কুসংস্কার ও অন্ধত্ব থেকে মুক্ত হতে সাহায্য করছে। কেননা দাওয়াত ও তাবলিগের মূল বক্তব্যই হলো ‘আল্লাহ ছাড়া আমরা যা কিছু দেখি এবং যা দেখি না তার সবই মাখলুক। আল্লাহ মাখলুক ছাড়া সব করতে পারেন, কিন্তু মাখলুক আল্লাহকে ছাড়া কিছুই করতে পারে না।’

দ্বিনি দাওয়াতের ব্যাপক প্রসার

বাংলাদেশে তাবলিগি কাজের একটি সাফল্যের দিক হলো সমাজের সর্বোচ্চ স্তর থেকে সর্বনিম্ন স্তর পর্যন্ত দ্বিনি দাওয়াতের প্রসার ঘটেছে। বিশেষত সমাজের উচ্চ শিক্ষিত ও উঁচু শ্রেণিতে দ্বিনি দাওয়াত পৌঁছে দেওয়ার ক্ষেত্রে দাওয়াত ও তাবলিগের ভূমিকা অত্যন্ত প্রশংসনীয়।

ছবি : ইখলাস আল ফাহীম

 

ফরজ শিক্ষার বিস্তার

তাবলিগ জামাতের ছয়টি মূলনীতির একটি ইলম ও জিকির। তাবলিগ জামাতের মূলনীতি অনুসারেই অনুসারীরা ইলম তথা ইসলামী জ্ঞানচর্চা করে থাকেন। বিশেষত তারা দৈনন্দিন জীবনের ফরজ শিক্ষাগুলোকে গুরুত্ব দিয়ে থাকেন। ফলে দাওয়াত ও তাবলিগের মেহনতের মাধ্যমে সর্বসাধারণের মধ্যে ফরজ শিক্ষার বিস্তার ঘটছে, পরকালীন মুক্তির জন্য যা অপরিহার্য। এ ছাড়া তাবলিগি কর্মকাণ্ডে জড়িত ব্যক্তিরা তাদের সন্তানদের আলেম হিসেবে গড়ে তোলেন, যা দেশে ইসলামী শিক্ষা বিস্তারে ইতিবাচক ভূমিকা রাখছে।


মসজিদমুখী জীবন 

ইসলামের সোনালি যুগে মুসলিম সমাজের কেন্দ্রবিন্দু ছিল মসজিদ। মসজিদ থেকে পরিচালিত হতো সমাজ ও রাষ্ট্র। যুগের আবর্তনে মসজিদের সঙ্গে সাধারণ মুসলমানের দূরত্ব বেড়েছে। দাওয়াত ও তাবলিগের মেহনতে সাধারণ মানুষের সঙ্গে মসজিদের দূরত্ব কমছে এবং মানুষ মসজিদমুখী জীবনে আগ্রহী হচ্ছে। কেননা তাবলিগ জামাতের সামগ্রিক কর্মকাণ্ড মসজিদকে কেন্দ্র করেই পরিচালিত হয়।

দাওয়াত ও তাবলিগের কার্যক্রম মুসলিম সমাজে আরো কিছু ইতিবাচক প্রভাব ফেলছে। যেমন ভ্রাতৃত্ববোধ তৈরি, সমাজের সর্বত্র দ্বিন পালনের অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি, দ্বিনি প্রতিষ্ঠানের প্রতি মানুষের ইতিবাচক মনোভাব তৈরি ইত্যাদি। এ ছাড়া তাবলিগি কাজের সূত্রে প্রতিবছর বিপুলসংখ্যক বিদেশি মুসলিম বাংলাদেশে আগমন করে এবং বাংলাদেশ থেকেও বিপুলসংখ্যক দ্বিনপ্রচারক বিদেশে গমন করে, যা দেশের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও যোগাযোগ উন্নয়নে ভূমিকা রাখছে এবং দেশের অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলছে।

আল্লাহ সবাইকে সঠিকভাবে দ্বিনি খেদমত করার তাওফিক দিন। আমিন

লেখক : সাংবাদিক, মাদরাসা-শিক্ষক ও গবেষক