বিশ্ব ইজতেমা, ছবি : গেটি ইমেজ

বিশ্ব ইজতেমায় প্রতিদিন বাদ ফজর ও বাদ মাগরিব বিশেষ হেদায়েতি বা দিকনির্দেশনামূলক বয়ান করা হয়। ৫৬তম বিশ্ব ইজতেমার শেষ দিনের হেদায়েতি বয়ান করছেন মাওলানা ইব্রাহীম দেওলা। অনুবাদ করছেন কাকরাইলের সুরা সদস্য মাওলানা কারী যুবায়ের আহমাদ। হেদায়েতি বয়ান শেষে মোনাজাত পরিচালনা করেছেন তিনিই।

তাবলিগ জামাতের ইজতেমার মূল উদ্দেশ্য হলো- দ্বীনের দাওয়াত দেওয়ার লক্ষ্যে বেশি বেশি জামাত আল্লাহর রাস্তায় বের করা।এ জন্য ইজতেমায় বিশেষভাবে দ্বীনের দাওয়াতের গুরুত্ব এবং ঈমান-আমল সংক্রান্ত কথা বলা হয়।

বয়ানে ইসলাম প্রচারের ক্ষেত্রে নবী-রাসূল (সা.) এবং সাহাবায়ে কেরামদের (রা.)কষ্ট ও ত্যাগ-তিতীক্ষার বিভিন্ন ঘটনাবলী শোনানো হয়। এর দ্বারা সাধারণ মানুষ দ্বীনের কাজে আত্মনিয়োগে উৎসাহী হয়। এ জন্য দেখা যায় যে, সারাবছর যে পরিমাণ জামাত দ্বীনের কাজে বের হয়, ইজতেমা থেকে তার চেয়ে অনেক বেশি জামাত আল্লাহর রাস্তার ঈমানের দাওয়াত নিয়ে বের হয়।

শেষ দিনের হেদায়েতি বয়ানে তাবলিগের ৬ উসুল নিয়ে আলোচনা হয়েছে এবং যারা আল্লাহর রাস্তায় চিল্লার জন্য বের হবেন তারা কিভাবে কাজ করবেন এ নিয়ে দিকনির্দেশনাপূর্ণ আলোচনা হয়েছে। এছাড়া যারা ইজতেমা ময়দান থেকে নিজ বাড়ি বা এলাকায় ফিরবেন তাদেরকে তাবলিগের কাজের সঙ্গে যুক্ত থাকার বিষয়ে ‍গুরুত্বপূর্ণ দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

শেষ দিনের হেদায়েতি বয়ান শেষে আখেরি মোনাজাত পরিচালনা হয়েছে। মোনাজাতে বিশ্বশান্তি, কল্যাণ কামনা, মুসলমানদের ঈমান হেফাজত, পারস্পারিক ভ্রাতৃত্ব, উন্নত আখলাক গড়ার জন্য বিশেষ মোনাজাত করা হয়।

মোনাজাতে মাওলানা যুবায়ের আহমাদ বলেন, হে আল্লাহ, আমরা সবাই গোনাহগার। সবচেয়ে বড় পাপিষ্ঠ। আমরা রাতদিন গুনাহের মধ্যে লিপ্ত। হে আল্লাহ, আমরা গোনাহকারী আর আপনি মেহেরবান ক্ষমাকারী। আপনি আমাদের জীবনের ভুলত্রুটি ক্ষমা করে দিন।  আপনি আমাদের ইচ্ছাকৃত ও অনিচ্ছাকৃত গুনাহকে ক্ষমা করে দিন। 

মোনাজাতে বলা হয়, হে আল্লাহ, আজকের এই মাঠে এত মানুষ জমা হয়েছে, এর মধ্যে আপনার পছন্দনীয় বান্দাদের উসিলায় উপস্থিত সবার গুনাহকে আপনি ক্ষমা করে দেন। হে আল্লাহ, আমরা তওবা করছি ভবিষ্যতে এই ধরনের গুনাহ থেকে বেঁচে থাকবো। হে আল্লাহ, আমাদের জীবন যেন গুনাহমুক্ত হয়ে যায় সেই তাওফিক দান করুন। বিশ্বের সব মুসলমান নরনারীকে আপনি ক্ষমা করে দিন। 

মোনাজাতে আরও বলা হয়, হে আল্লাহ, আপনি আমাদেরকে ঈমানের হাকিকত (বাস্তবতা) ও কামাল (পূর্ণাঙ্গতা)  দান করে দিন। ঈমানি সিফাত আমাদের মধ্যে তৈরি করে দিন। হে আল্লাহ ঈমানের জিন্দেগী নসিব করে দিন। হে আল্লাহ, ঈমানকে শক্তিশালী করে দিন। হে আল্লাহ ঈমানের শেকড়কে অন্তরে মজবুত করে দিন। 

বিশেষ মোনাজাতে আরও বলা হয়, হে আল্লাহ, দুনিয়ার কোনো ভয়ভীতি আমাদেরকে ঈমান থেকে হটাতে না পারে এমন ঈমান আমাদেরকে নসিব করে দিন। হে আল্লাহ, ঈমানের সঙ্গে জিন্দেগী নসিব করেন। ঈমানের সঙ্গে মৃত্যু নসিব করেন। হে আল্লাহ, আখেরাতে ঈমানের ওপরে আমাদেরকে মজবুত রাখেন। কবরে ঈমানের ওপরে আমাদেরকে মজবুত রাখেন। কেয়ামতের ময়দানে ঈমানের ওপরে আমাদেরকে মজবুত রাখেন। 

ইজতেমার আখেরি মোনাজাতে আরও বলা হয়, হে আল্লাহ, ঈমান হচ্ছে সবচেয়ে বড় সম্পদ এ কথা বোঝার তাওফিক দান করেন। ঈমানের সাথে দুনিয়ার জিন্দেগী নসিব করে দিন। হে আল্লাহ সুন্নত অনুযায়ী জীবনযাপনের তাওফিক দান করে দিন। রাত দিন ২৪ ঘণ্টায় যত ইবাদত-বন্দেগি রয়েছে সব সুন্নাত মোতাবেক করার তাওফিক দান করুন। 

হে আল্লাহ, সুন্নতের আগ্রহ আমাদের অন্তরে তৈরি করে দিন। হে আল্লাহ, আমাদের মধ্যে এবং সমস্ত উম্মতের মধ্যে সুন্নাতকে জিন্দা করে দিন। বেদাতকে খতম করে দিন। আপনার ইতাআত (আনুগত্য) কে জিন্দা করে দিন। না ফরমানিকে খতম করে দিন। আপনার নাফরমানির প্রতি ঘৃণা সৃষ্টি করে দিন। হে আল্লাহ, আপনার ইবাদতের প্রতি আগ্রহ তৈরি করে দিন। আপনার নির্দেশ অনুযায়ী জীবন যাপনের তাওফিক দান করে দিন। আপনার অবাধ্যতা থেকে আমাদেরকে ফিরিয়ে রাখুন। 

ইজতেমার আখেরি মোনাজাতে আরও বলা হয়, হে আল্লাহ, নামাজকে সঠিক ও সুন্দরভাবে আদায় করার তাওফিক দান করুন। নিয়মিত নামাজ আদায়ের তাওফিক দান করুন। নামাজের আগ্রহ অন্তরে তৈরি করে দিন। উপকারী ইলম আমাদেরকে দান করুন। মূর্খতা আমাদের থেকে দূর করে দিন। হে আল্লাহ, মানুষের হেদায়েতের জন্য যেই ইলম আপনি আসমান থেকে অবতীর্ণ করেছেন, সেই ঈলমের প্রতি আমাদের আগ্রহ তৈরি করে দিন। এই ইলমের মূল্যবোধ আমাদের ভেতরে তৈরি করে দিন। হে আল্লাহ, আলেমদের মূল্যায়ন করার তাওফিক দান করে দিন। হে আল্লাহ, আলস্য আমাদের থেকে দূর করে দিন। আপনার জিকির ও ধ্যান নসিব করে দিন। হে আল্লাহ, আমাদের আখলাককে সুন্দর করে দিন।

মোনজাতের শ্রুতি লিখন ও উর্দু থেকে বয়ানটির অনুবাদ করেছেন আলেম সাংবাদিক মুহাম্মদুল্লাহ বিন ওয়াহিদ