মক্কায় অবস্থিত পবিত্র মসজিদুল হারাম ইসলামের প্রধান সম্মানিত স্থান। প্রতি হজের সময় এখানে উপস্থিত হন ২০ লাখের বেশি মুসল্লি। পবিত্র এই মসজিদের প্রভাবশালী ইমামদের অন্যতম হলেন শায়খ ড. সাউদ বিন ইবরাহিম আল-শুরাইম। নামাজে তাঁর সুললিত কণ্ঠের তিলাওয়াত শুনতে মুখিয়ে থাকেন হাজার হাজার মুসল্লি। সুন্দর তিলাওয়াতের জন্য তিনি সবার কাছে ‘রাইহানুতল হারাম’ হারাম শরিফের সুগন্ধি হিসেবে পরিচিত ছিলেন।

ড. শুরাইম ১৯৬৬ সালে সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদের এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পুরো নাম সাউদ বিন ইবরাহিম বিন মুহাম্মাদ বিন ইবরাহিম আলে শুরাইম। স্থানীয় আরিন স্কুলে প্রাথমিক ও মডেল স্কুলে মাধ্যমিক স্তরের পড়াশোনা করেন। ১৯৮৪ সালে আল-ইয়ারমুক স্কুল থেকে উচ্চমাধ্যমিক শেষ করেন। শৈশব থেকেই তিনি ইসলামের মৌলিক বিষয়ে পাণ্ডিত্য অর্জনে মনোযোগী ছিলেন। পবিত্র কোরআনুল কারিম ছিল তাঁর আবেগ ও আগ্রহের বিষয়। পরবর্তী সময়ে কোরআনসংশ্লিষ্ট নানা বিষয়ে পড়াশোনা করেন।

ড. শুরাইম রিয়াদের বিখ্যাত ইমাম মুহাম্মাদ বিন সাউদ ইসলামিক ইউনিভার্সিটির উসুলুদ্দিন বিভাগে পড়াশোনা করেন। ১৯৮৯ সালে তিনি আকিদা ও আধুনিক মতবাদ বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৯৩ সালে একই বিশ্ববিদ্যালয়ের সুপ্রিম জুরিসডিকশন ইনস্টিটিউট থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি সম্পন্ন করেন। অতঃপর ১৯৯৬ সালে মক্কার উম্মুল কুরা ইউনিভার্সিটি থেকে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। ইমাম আবু মানসুর আল কিরমানি রচিত ‘আল-মাসালিক ফিল মানাসিক’ গ্রন্থের পাণ্ডুলিপি ছিল তাঁর গবেষণার বিষয়বস্তু।

তাঁর শিক্ষকদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন সৌদির সাবেক গ্র্যান্ড মুফতি আবদুল আজিজ বিন আবদুল্লাহ বিন বাজ। রিয়াদের গ্র্যান্ড মসজিদে ফজর নামাজের পর বিন বাজ নিয়মিত দরস দিতেন। সেখানে শায়খ শুরাইম নিয়মিত উপস্থিত থাকতেন। শায়খ আবদুল্লাহ বিন আবদুর রহমান বিন জিবরিনের কাছে ফিকাহ, আইন ও আকিদা বিষয়ক মৌলিক গ্রন্থের পাঠ গ্রহণ করেন। তা ছাড়া শায়খ আবদুল্লাহ বিন আবদুল আজিজ বিন উকাইল, শায়খ আবদুর রহমান আল-বাররাক, শায়খ আবদুল আজিজ আল-রাজিহি, শায়খ আবদুল্লাহ আল-গাদয়ান ও শায়খ সালেহ বিন ফাওজান প্রমুখের কাছে তিনি বিশেষভাবে পাঠ গ্রহণ করেন।

১৯৯২ সালে একটি রাজকীয় নির্দেশনায় ড. শুরাইম মক্কার সর্বোচ্চ কোর্টের বিচারক হিসেবে নিয়োগ পান। সেখানে তিনি তিন বছর সুনামের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেন। বিচারক হিসেবে নিয়োগের কিছুদিন পর সৌদির সাবেক বাদশাহ ফাহাদ বিন আবদুল আজিজের বিশেষ নির্দেশনা ড. শুরাইম পবিত্র মসজিদুল হারামের ইমাম হিসেবে নিয়োগ পান। তখন থেকে তিনি পবিত্র কাবা প্রাঙ্গণে ইমাম হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

১৯৯৯ সালে ড. শুরাইম মক্কার উম্মুল কুরা বিশ্ববিদ্যালয়ের শরিয়াহ অনুষদের ইসলামী আইন বিভাগের শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পান। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন ও জুডিশিয়ারি বিভাগের ডিন হিসেবে দীর্ঘ এক দশকের মতো দায়িত্ব পালন করেন। একই সময় তিনি মসজিদুল হারাম প্রাঙ্গণে বিভিন্ন ইসলামী গ্রন্থের পাঠদান করেন। তাঁর বিশেষ উদ্যোগে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে জুডিশিয়াল স্টাডিজ অ্যান্ড রেগুলেশনস এবং ইসলামিক ইকোনমিক অ্যান্ড ফিন্যানশিয়াল সায়েন্স নামে দুটি বিভাগ চালু হয়।

সমপ্রতি ইমামের পদ থেকে শায়খ শুরাইম অব্যাহতি নিয়েছেন বলে শোনা যায়। তা ছাড়া অনেক দিন ধরে তাকে নামাজের ইমাম হিসেবেও দেখা যায় না। দীর্ঘ ৩২ বছরের ইমামের বিদায়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গভীর সহনুভূতি জানান সবাই। ‘ওয়াশ সালিফাতুল হ্যাশট্যাগ’ নামে সৌদিভিত্তিক এক টুইট অ্যাকাউন্ট থেকে বলা হয়, কবিতার কয়েকটি চরণের মাধ্যমে দীর্ঘ ৩২ বছর পর মসজিদুল হারামের ইমামতিকে বিদায় জানালেন শায়খ সাউদ আল-শুরাইম। তিনি লিখেছেন, ৩০ বছর অতঃপর আরো দুটি বছর, এ সময় আমি আমার দ্বিন, সম্মান ও সব কিছু রক্ষা করেছি। আল্লাহর শপথ, আমি তাঁর সান্নিধ্যে থাকার অনেক চেষ্টা করেছি। পবিত্র ঘরের সান্নিধ্য আমার কাছে ঘুঘুর হারের মতো (সবচেয়ে মূল্যবান)।’

অবশ্য এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে পবিত্র মসজিদুল হারাম ও মসজিদে নববী পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান জেনারেল প্রেসিডেন্সি বিভাগ থেকে কোনো কিছু জানা যায়নি।

সূত্র : আরব নিউজ