প্রতীকী ছবি

সকাল থেকে সন্ধ্যা-রাত পর্যন্ত কঠোর পরিশ্রম, কান্তিতে কেটে যায় একজন মানুষের। পরিবার, সন্তান নিজের শান্তির খোঁজেই মানুষের এতো কষ্ট-ক্লেশ। একজন মানুষ কখনো পুরোপুরি সুখী হতে পারেন না। তবে সুখী থাকার চেষ্টা করতে পারেন। সবগুলো পন্থা অবলম্বন করতে পারেন। তবে পৃথিবী মানুষের পরিতৃপ্ত, পূর্ণ সুখের জায়গা নয়। চিরস্থায়ী, সুখের আবাস জান্নাত। জান্নাতেই মানুষের জন্য অপেক্ষা করছে অফুরন্ত সুখ-নেয়ামতরাজি। 

পবিত্র কোরআনে বর্ণিত হয়েছে, ‘অবশ্য মুত্তাকিদের জন্য সাফল্যের একটি স্থান রয়েছে। বাগ-বাগিচা, আঙুর, নবযৌবনা সমবয়সী তরুণীবৃন্দ এবং উচ্ছ্বসিত পানপাত্র। সেখানে তারা শুনবে না কোনো বাজে ও মিথ্যা কথা। প্রতিদান ও যথেষ্ট পুরস্কার তোমাদের রবের পক্ষ থেকে। ’ -(সূরা আন নাবা: ৩১-৩৬)

পরকালের চিরস্থায়ী এবং পৃথিবীর ক্ষণস্থায়ী জীবনে সুখ-শান্তি পেতে হলে কোরআন-হাদিসে বর্ণিত নির্দেশনাগুলো মেনে চলতে হবে। তবেই মানূষ সুখের সন্ধান পাবেন।

নেয়ামতের শুকরিয়া আদায়

আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা ও নেয়ামতের শুকরিয়া আদায় করা উচিত। কৃতজ্ঞদের জন্য আল্লাহ তায়ালা বিশেষ পুরস্কারের ঘোষণা দিয়েছেন। বর্ণিত হয়েছে, ‘..যদি তোমরা শুকরিয়া আদায় করো, তাহলে আমি অবশ্যই তোমাদের বাড়িয়ে দেব, আর যদি তোমরা অকৃতজ্ঞ হও, নিশ্চয়ই আমার আজাব বড় কঠিন।’ (সুরা ইবরাহিম: ৭)

অল্পেতুষ্টি

সুখী হতে চাইলে অল্পেতুষ্ট থাকার অভ্যাস করতে হবে। প্রত্যাশার পরিধি যত কমবে, মানুষের সুখ-সমৃদ্ধি বাড়বে। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি ইসলামের দিকে হেদায়েতপ্রাপ্ত হয়েছে, যাকে প্রয়োজন মাফিক রিজিক প্রদান করা হয়েছে এবং যে তাতেই পরিতুষ্ট থাকে, সে-ই সফলকাম হয়েছে। -(ইবনে মাজাহ, হাদিস ৪১৩৮)

দুনিয়ার-মোহমায়া ত্যাগ

সুখী থাকার আরেকটি উপায় হলো, দুনিয়ার প্রতি আসক্তি ও মোহ থেকে মুক্ত থাকা। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বলেন, ‘দুনিয়ার জীবন ক্রীড়া-কৌতুক, শোভা-সৌন্দর্য, তোমাদের পারস্পরিক গর্ব-অহংকার এবং ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততিতে আধিক্যের প্রতিযোগিতা মাত্র। এর উপমা হলো বৃষ্টির মতো, যার  উৎপন্ন ফসল কৃষককে আনন্দ দেয়, তারপর তা শুকিয়ে যায়...।’ -(সুরা : হাদিদ, আয়াত : ২০)

এক হাদিসে আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি তার সব চিন্তাকে একই চিন্তায় (আখেরাতের চিন্তায়) কেন্দ্রীভূত করেছে, আল্লাহ তার দুনিয়ার চিন্তার জন্য যথেষ্ট। অন্যদিকে যে ব্যক্তি যাবতীয় পার্থিব চিন্তায় নিমগ্ন থাকবে, সে যেকোনো উন্মুক্ত মাঠে ধ্বংস হোক, তাতে আল্লাহর কিছু আসে যায় না। (ইবনে মাজাহ: ২৫৭)

বেশি বেশি আল্লাহর জিকির

বিভিন্ন চিন্তা-ভাবনা মানুষের মনকে ভার করে তোলে। মনে অশান্তি সৃষ্টি করে। মনের অশান্তি থেকে মুক্তি পেতে বেশি বেশি আল্লাহর জিকির করা উচিত। পবিত্র কোরআনে বর্ণিত হয়েছে, ‘যারা বিশ্বাস করেছে এবং আল্লাহর স্মরণে যাদের অন্তর প্রশান্ত হয়। জেনে রেখো, অন্তর আল্লাহর স্মরণেই প্রশান্তি লাভ করে।’ (সুরা রাদ: ২৮)

কষ্ট-ক্লেশের জন্য প্রস্তুত

আল্লাহ তায়ালা তার প্রিয় বান্দাদেরকে পরীক্ষায় ফেলেন, পরীক্ষার মাধ্যমে তাদের যাচাই-বাছাই করে দেখেন। আল্লাহর খলিল হজরত ইবরাহিম (আ.)-এর কাছ থেকে আল্লাহ তায়ালা একের পর এক কঠিন পরীক্ষা নিয়েছেন। আল্লাহর পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার জন্য তিনি তাঁর প্রাণপ্রিয় সন্তানকে আল্লাহর জন্য উৎসর্গ করতেও দ্বিধাবোধ করেননি। 

ইরশাদ হয়েছে, ‘যখন তারা উভয়ে আনুগত্য প্রকাশ করল এবং ইবরাহিম তার পুত্রকে কাত করে শোয়াল, তখন আমি তাকে ডেকে বললাম, হে ইবরাহিম, তুমি তো স্বপ্নাদেশ সত্যই পালন করলে—এভাবেই আমি সৎকর্মপরায়ণদের পুরস্কৃত করে থাকি।’ (সুরা সাফফাত: ১০৩-১০৫)

নিয়মিত কোরআন তেলাওয়াত

প্রত্যেকে উচিত নিয়মিত কোরআন তেলাওয়াত করা। কোরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে মানুষের ঈমান বাড়ে এবং অন্তর প্রশান্ত হয়। এ বিষয়ে আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেছেন, ‘মুমিন তো তারা, যাদের অন্তরসমূহ কেঁপে উঠে যখন আল্লাহকে স্মরণ করা হয়। আর যখন তাদের ওপর তার আয়াতসমূহ পাঠ করা হয় তখন তা তাদের ঈমান বৃদ্ধি করে এবং যারা তাদের রবের ওপরই ভরসা করে।’ -(সূরা আনফাল: ২)

এনটি