প্রতীকী ছবি

আত্মনির্ভরশীল জীবনের প্রতি ইসলাম বরাবরই উৎসাহ দিয়েছে। প্রয়োজনীয় সম্পদ উপার্জনকে আল্লাহ গুরুত্ব দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘সালাত সমাপ্ত হয়ে গেলে তোমরা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড় আর আল্লাহর অনুগ্রহে জীবিকা অন্বেষণ করো, তথা উপার্জন করো’ (সুরা জুমা : ১০)। 

আত্মনির্ভরশীলতা ও আত্মমর্যাদার জন্য প্রয়োজন অমুখাপেক্ষিতা। এর মাধ্যমে মানুষের ব্যক্তিত্ব নির্মিত হয়। এক হাদিসে এসেছে, ‘মুমিনের সম্মান তাহাজ্জুদ পড়ার মধ্যে এবং তার মর্যাদা মানুষ থেকে অমুখাপেক্ষী থাকার মধ্যে।’ (তাবারানি, হাদিস : ৪২৭৮)

এ হাদিস থেকে বোঝা যায়, সম্মানের বড় একটি মাধ্যম হচ্ছে পরনির্ভর না হওয়া। যত দিন মানুষ পরনির্ভরশীল থাকবে তত দিন সে সম্মানিত থাকতে পারবে না। প্রিয় নবী (সা.) সাহাবাদের সেভাবেই দীক্ষা দিয়েছেন। সবাই যেন অন্তর থেকে পরনির্ভরশীলতা বর্জন করে।

এ ব্যাপারে তিনি বায়াত গ্রহণ করতেন। আউফ ইবনে মালিক আল আশজাই (রা.) থেকে বর্ণিত, আমাদের সাত বা আট বা নয়জন লোকের উপস্থিতিতে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘তোমরা কেন রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে বায়আত করছ না?’ অথচ আমরা এর আগে বায়আত গ্রহণের সময় তাঁর হাতে বায়আত গ্রহণ করেছি।

আমরা বললাম, হে আল্লাহর রাসুল, আমরা তো আপনার কাছে বায়আত গ্রহণ করেছি। তিনি আবার বললেন, ‘তোমরা কেন রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে বায়আত হচ্ছো না? বর্ণনাকারী বলেন, অতঃপর আমরা হাত বাড়িয়ে বললাম, হে আল্লাহর রাসুল, আমরা তো এর আগেই আপনার কাছে বায়আত গ্রহণ করেছি, এখন আবার আপনার কাছে কিসের বায়আত করব?

তিনি বললেন, ‘তোমরা আল্লাহর ইবাদত করো, তার সঙ্গে কাউকে অংশীদার স্থাপন করবে না, পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করবে। এবং আল্লাহর আনুগত্য করবে।

তিনি আর একটি কথা বললেন চুপে চুপে, তা হলো লোকের কাছে কিছুর জন্য হাত পাতবে না। বর্ণনাকারী বলেন, এরপর আমি দেখেছি, সে বায়আত গ্রহণকারী দলের কারো কারো উটের পিঠে থাকা অবস্থায় হাত থেকে চাবুক পড়ে গেছে কিন্তু সে কাউকে তা তুলে দেওয়ার জন্য অনুরোধ করেনি; বরং নিজেই নিচে নেমে তুলে নিয়েছে। (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ২২৯৩)

তাই নিজের কাজ নিজেই করা শ্রেয়। যতক্ষণ সামর্থ্য থাকে অন্য কারো সাহায্য নেওয়া থেকে বিরত থাকা। অনেকের ধারণা পয়সা-কড়ি চাওয়া থেকে বিরত থাকাকে অমুখাপেক্ষী বলে। অথচ বিষয়টা এমন নয়। নিজের প্রয়োজনীয় যাবতীয় জিনিস—চাই পয়সা কিংবা কোনো সেবা সুপারিশ কারো সুপারিশ গ্রহণ ইত্যাদি সবগুলো থেকেই নিজেকে বাঁচিয়ে রাখার মাঝেই সম্মান।

এনটি