প্রতীকী ছবি

মানুষ জান্নাত থেকেই পৃথিবীতে এসেছে। পৃথিবীর জীবন শেষে জান্নাতে ফিরে যাওয়াই মানুষের মূল লক্ষ। তবে পৃথিবীর মোহ-মায়ায় জরিয়ে অনেকেই জান্নাতের পথ থেকে দূরে সরে যায়, জাহান্নামের কাছাকাছি চলে যায়। 

পৃথিবী পরীক্ষার ক্ষেত্র

পৃথিবীকে আল্লাহ তায়ালা মূলত পরীক্ষার ক্ষেত্র বানিয়েছেন, বর্ণিত হয়েছে, ‘আমি মানুষকে সৃষ্টি করেছি মিলিত শুক্রবিন্দু থেকে—তাকে পরীক্ষা করার জন্য। অতঃপর তাকে করে দিয়েছি শ্রবণ ও দৃষ্টিশক্তিসম্পন্ন। আমি তাকে পথ দেখিয়ে দিয়েছি। হয়তো সে কৃতজ্ঞ হবে, না হয় অকৃতজ্ঞ।’ (সুরা : দাহর/ইনসান, আয়াত : ২-৩)

জান্নাতের অধিবাসী যারা

এই পরীক্ষায় উতরে কারা জান্নাতের অধিবাসী হবেন এবং কারা জাহান্নামে পতিত হবে এ বিষয়ে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘তারা কখনো কোনো অশ্লীল কাজ করে ফেললে কিংবা কোনো মন্দ কাজে জড়িত হয়ে নিজের ওপর জুলুম করে ফেললে, আল্লাহকে স্মরণ করে এবং নিজের পাপের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে। আল্লাহ ছাড়া আর কে পাপ ক্ষমা করবে?

তারা নিজেদের কৃতকর্মের জন্য হঠকারিতা প্রদর্শন করে না এবং জেনে-শুনে তা-ই করতে থাকে না। তাদের জন্য প্রতিদান হলো পালনকর্তার ক্ষমা ও জান্নাত, যার তলদেশে প্রবাহিত হচ্ছে প্রস্রবণ-যেখানে তারা থাকবে অনন্তকাল। যারা সৎকাজ করে তাদের জন্য কতই না চমৎকার প্রতিদান!’ (সূরা আলে-ইমরান : ১৩৫-১৩৬)।

জাহান্নামে যাবে যারা

অন্য আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘অনন্তর যে সীমালঙ্ঘন করে এবং পার্থিব জীবনকে অগ্রাধিকার দেয় জাহান্নামই হবে তার আবাস। পক্ষান্তরে যে তার রবের সামনে উপস্থিত হওয়ার ভয় করে এবং কুপ্রবৃত্তি থেকে নিজেকে বিরত রাখে জান্নাতই হবে তার ঠিকানা।’ (সূরা নাজিয়াত : ৩৭-৪০)।

চিরস্থায়ী জান্নাত কেমন হবে!

চিরস্থায়ী জান্নাত কেমন হবে- এ নিয়ে পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘আর যারা ঈমান এনেছে এবং সৎকাজ করেছে তাদেরকে শুভ সংবাদ দিন যে, তাদের জন্য রয়েছে জান্নাত, যার তলদেশে নদী প্রবাহিত। যখনই তাদেরকে ফলমূল খেতে দেয়া হবে তখনই তারা বলবে, আমাদেরকে - পূর্বে জীবিকা হিসেবে যা দেয়া হত এতো তাই’। আর তাদেরকে তা দেয়া হবে সাদৃশ্যপূর্ণ করেই এবং সেখানে তাদের জন্য রয়েছে পবিত্র সঙ্গিনী। আর তারা সেখানে স্থায়ী হবে।’ (সুরা বাকারা, আয়াত, ২৫)

সাদ ইবনে আবী ওয়াক্কাস রা. থেকে বর্ণিত যে, নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, জান্নাতে যা আছে এর থেকে একটি নখ যা উঠাতে পারে এতটুকু পরিমাণ জিনিসও যদি (লোকদের সামনে) প্রকাশ পেত তা হলে আকাশ ও পৃথিবীর সব দিক সুসজ্জিত হয়ে যেত। জান্নাতবাসীদের কেউ যদি পৃথিবীর দিকে উঁকি দিত এবং তার হাতে থাকা অলঙ্কার যদি প্রকাশ পেত, তাহলে সূর্যের আলো যেমন তারার আলোকে স্নান করে দেয় তেমনিভাবে তা সূর্যের আলোকেও স্নান করে দিত। -(তিরমিজি, ২৫৪০)

সবার আগে জান্নাতে প্রবেশকারীরা দেখতে যেমন হবে

সবার আগে জান্নাতে প্রবেশকারীদের সম্পর্কে আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত এক হাদিসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, প্রথম যে দলটি জান্নাতে প্রবেশ করবে তাদের চেহারা হবে পূর্ণিমার চাঁদের মত। তারা সেখানে থুথুও ফেলবে না, তাদের নাকের ময়লাও ঝাড়তে হবে না এবং পেশাব পায়খানাও করতে হবে না। তাদের থালা–বাসন হবে সোনার। আর চিরুনীগুলোও হবে সোনা ও রূপার। আগর কাঠের ধূপ নিবেন তারা। তাদের ঘামও হবে মিশকের মত। তাদের প্রত্যেকেরই দু’জন করে স্ত্রী হবে। সৌন্দর্যের কারণে গোশতের ভেতর থেকেও তাদের পায়ের নলার হাড্ডির মগজ পরিদৃষ্টি হবে। সেখানে তাদের পরস্পর কোন মতবিরোধ ও হিংসা থাকবে না। সকলের হৃদয় হবে যেন একজনেরই হৃদয়। সকাল–বিকাল আল্লাহর তাসবীহ পাঠ করবে তারা। (বুখারি, মুসলিম, ২৫৩৯)

সবার আগে জান্নাতে প্রবেশ করবে কারা?

সর্বপ্রথম যে দলটি জান্নাতে প্রবেশ করবে দুনিয়ায় তাদের অবস্থা সম্পর্কে রাসুল (সা.) জানিয়ে দিয়েছেন। হজরত আবদুল্লাহ বিন আমর বিন আস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘তোমরা কি জানো, আল্লাহর সৃষ্টিকুলের মধ্যে সর্বপ্রথম জান্নাতে কারা প্রবেশ করবে?’

তখন সাহাবায়ে কেরাম বললেন, আল্লাহ ও তার রাসূল ভালো জানেন। তখন নবীজি (সা.) বলেন, আল্লাহর সৃষ্টিকুলের মধ্যে সর্বপ্রথম জান্নাতে প্রবেশ করবে দরিদ্র মুহাজিররা। যাদের মাধ্যমে সীমান্তের প্রহরা নিশ্চিত করা হয়। তাদের মাধ্যমে যেকোনো বিপদ-আপদ দূর করা হয়।

এমনভাবে তাদের মৃত্যু হয় যে আশা-আকাঙ্খাগুলো তাদের অন্তরের ভেতরেই রয়ে যায়। তারা তা পূরণ করতে পারে না। আল্লাহ তায়ালা ফেরেশতাদের বলবেন, তাদের কাছে যাও, তাদের সালাম প্রদান করো।

ফেরেশতারা বলবে, ‘হে আমাদের রব, আমরা তো আপনার আসমানের বাসিন্দা, আপনার সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জীবন। আপনি আমাদের বলছেন, তাদের কাছে গিয়ে সালাম প্রদান করি?’ 

আল্লাহ বলবেন, ‘তারা আমার বান্দা, আমার ইবাদত করেছে, আমার সঙ্গে কাউকে শরিক করেনি। তাদের এমন অবস্থায় মৃত্যু হয়েছে যে তাদের প্রয়োজনের কথা তার মনে রয়ে গেছে। তা আর পূরণের সামর্থ্য হয়নি।’ অতঃপর ফেরেশতারা তাদের কাছে যাবে। সব দরজা দিয়ে প্রবেশ করে তাদের সালাম জানাবে। বলবে, ‘ধৈর্য ধারণের ফল হিসেবে তোমাদের ওপর শান্তি বর্ষিত হোক, তোমাদের শেষ নিবাস কতই না উত্তম!’ (মুসনাদে আহমাদ,
হাদিস : ৬৫৭০)

এনটি