প্রতীকী ছবি

প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের সংক্রমণ আবারও বেড়ে চলেছে। সামাজিক মাধ্যমেই সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ছে মূলত। তাই পরিচ্ছন্নতা ও সার্বিক সতর্কতাসহ স্বাস্থবিধি মানার বিকল্প নেই। সরকার ইতোমধ্যে বেশি কিছু নির্দেশনা দিয়েছে। কঠোর নিষেধাজ্ঞাও জারি করেছে।

করোনাসহ সব ধরনের মহামারিতে কীভাবে রোগ-বালাই থেকে দূরে থাকা যায়— এ ব্যাপারে ইসলাম চমৎকার নির্দেশনা দিয়েছে। ঢাকা পোস্টের পাঠকদের জন্য আমরা তুলে ধরছি— কীভাবে ইসলাম হোম কোয়ারেন্টাইনের সমাধান দিয়েছে।

আল্লাহর ইচ্ছায় রোগের সংক্রমণ
সংক্রমণের বিষয়টি সম্পূর্ণরূপে আল্লাহর ইচ্ছার ওপর নির্ভরশীল। আল্লাহ তাআলা মাঝেমধ্যে নিজ ইচ্ছায় দোষযুক্ত ব্যক্তির সঙ্গে সুস্থ ব্যক্তির সংমিশ্রণকে নতুন সংক্রমণের কারণ বানিয়ে দেন। কাজেই মুমিন আকিদা বিশুদ্ধ রাখা যেমন অনিবার্য কর্তব্য; তেমনই সতর্ক ও নিরাপদ অবস্থানে থাকাও প্রত্যেকের আবশ্যক দায়িত্ব।

সাহাবি জাবের (রা.) বলেন— 

সাকিফের প্রতিনিধিদলের মধ্যে একজন কুষ্ঠ রোগী ছিলেন। তিনি রাসুল (সা.)-এর কাছে বায়াত হতে এসেছিলেন। রাসুল (সা.) তখন লোকমারফত তাকে বলে পাঠান, ‘তুমি ফিরে যাও। আমি তোমার বায়াত গ্রহণ করে নিয়ে নিয়েছি।

আস-সুনানুস সগির, খণ্ড : ৩, হাদিস : ২৫১৫

এই হাদিস বর্ণনার পর ইমাম বাইহাকি (রহ.) লিখেছেন, ‘আল্লাহ তাআলা মাঝেমধ্যে নিজ ইচ্ছায় রোগাক্রান্ত ব্যক্তির সঙ্গে সুস্থ ব্যক্তির সংমিশ্রণকে নতুন সংক্রমণের কারণ বানিয়ে দেন।’

এটিই হলো মহামারি-সংক্রান্ত সবগুলো হাদিসের সারনির্যাস। অতএব, জেনে রাখা জরুরি যে আলাদাভাবে সংক্রমণের ক্ষেত্রে মহামারির নিজের কোনো ক্ষমতা নেই। 

সংক্রমণ এড়াতে বিচ্ছিন্নকরণ
হোম কোয়ারেন্টাইনের ধারণা মূলত ইসলামের। দ্বিতীয় খলিফা উমর (রা.)-এর যুগে ফিলিস্তিনে আমওয়াস মহামারির প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। তখন আমর ইবনুল আস (রা.) অনুগতদের উদ্দেশে ভাষণে বলেন, ‘হে লোকসকল, যখন এ ধরনের মহামারি দেখা দেয়, তখন তা আগুনের মতো চারপাশে ছড়িয়ে পড়ে।’ এরপর তিনি সবাইকে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দলে ভাগ করে নির্দেশ করেন, ‘পরস্পরে বিচ্ছিন্ন হয়ে পাহাড়ে চলে যাও। আরও নিষেধাজ্ঞা জারি করেন যে, কেউ কারও সঙ্গে মিলিত হতে পারবে না।’

এরপর তারা আলাদা আলাদা দলে বিভক্ত হয়ে যান। এবং দীর্ঘদিন পাহাড়ে অবস্থান করেন। তখন যারা আক্রান্তরা ছিলেন, তারা মৃত্যুবরণ করে শাহাদত লাভ করেন। কিছুদিন পর আল্লাহ তাআলা মহামারি দূর করে নেন। আমর ইবনুল আস (রা.) সুস্থদের নিয়ে নগরীতে প্রত্যাবর্তন করেন। (ইবনুল আসির, আল-কামিল ফিত তারিখ; মুখতাসারু তারিখি দিমাশক)

এখন ভাবনার বিষয় হলো- গত বছর থেকে করোনা-মহামারির বৈশ্বিক প্রাদুর্ভাবের কারণে চিকিৎসকরা যে হোম কোয়ারেন্টাইনের কথা বলছেন, এটা কি ইসলামবিরোধী নির্দেশনা? এটি কি আল্লাহর প্রতি তাওয়াক্কুলের পরিপন্থী? এটা কি তকদির থেকে পলায়ন? এটা কি ইহুদি-নাসারাদের কনসেপ্ট? এটা মানলে কি ইসলাম চলে যাবে? দুঃখজনক হলেও সত্য, আমরা ইসলামের এত চমৎকার নির্দেশনা সম্পর্কে জানি না। বরং হোম কোয়ারেন্টাইন ব্যবস্থাপনাকে অন্যদের বলে নিজেরা দূরে থাকতে চাচ্ছি।

অন্যের স্বার্থে আক্রান্ত ব্যক্তি ঘরে অবস্থান
ইবনু আবি মুলাইকা (রহ.) বলেন, এক দিন উমর (রা.) কুষ্ঠ রোগাক্রান্ত এক নারীর পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় লক্ষ করেন, এ অবস্থায় সে কাবাগৃহের তাওয়াফ করছে। তখন তিনি তাকে বললেন, ‘হে আল্লাহর বান্দি, তুমি লোকজনকে কষ্ট দিয়ো না। যদি তুমি তোমার ঘরে অবস্থান করো, তাহলে সেটাই তোমার জন্য কল্যাণকর হবে।’ (মুয়াত্তা ইমাম মালেক, কিতাবুল হজ, হাদিস : ৮৪৫)

লক্ষ করার বিষয় হলো, কুষ্ঠ কোনো মহামারি নয়। বড়জোর সাধারণ সংক্রামক রোগ। সেই রোগে আক্রান্ত নারীকে যদি উমর (রা.) জনতার স্বার্থে নিজ ঘরে অবস্থানের নির্দেশ করেন, তাহলে প্রাণঘাতী মহামারিগুলোর ক্ষেত্রে একই নির্দেশনা কতটা জোরদার হতে পারে, তা সহজেই অনুমেয়।

অন্য বর্ণনায় আছে, উমর (রা.)-এর মৃত্যুর পর ওই নারীকে বলা হয়, ‘তোমাকে যিনি এ অবস্থায় কাবাঘরে আসতে নিষেধ করেছিলেন, তিনি মৃত্যুবরণ করেছেন। কাজেই এবার তুমি বেরিয়ে এসো।’ উত্তরে প্রত্যয়ী কণ্ঠে সেই নারী উত্তর দিয়েছিলেন, ‘আমি এমন নারী নই যে, উমরের জীবদ্দশায় তার নির্দেশ পালন করব আর মৃত্যুর পর অবাধ্য হব।’

মহামারি আক্রান্ত অঞ্চলে প্রবেশ নিষিদ্ধ
হাদিসে রাসুল (সা.) বলেন, ‘মহামারি হচ্ছে আজাবের নিদর্শন। আল্লাহতায়ালা এর মাধ্যমে তার কিছু বান্দার পরীক্ষা নিয়ে থাকেন। কাজেই তোমরা যদি কোথাও মহামারির সংবাদ শোনো, তাহলে কখনোই সেখানে যাবে না। আর যদি তোমাদের বসবাসের নগরীতে মহামারি দেখা দেয় তাহলে সেখান থেকে পালাবে না।’ (মুসলিম, হাদিস : ৫৯০৭)

আল্লাহ আমাদের সব ধরনের রোগ-বিপদ থেকে রক্ষা করুন। স্বাস্থবিধি ও শরিয়তের নিয়ম-বিধান সঠিকভাবে পালনের তাওফিক দিন।