দেশের অধিকাংশ মানুষই এখন লকডাউন বা কঠোর নিষেধাজ্ঞায় ঘরবন্দি সময় পার করছে। ফলে রাস্তাঘাট, দোকানপাট ও সর্বত্র বিরাজ করছে সুনসান নীরবতা। কর্মমুখর চিরচেনা স্থানগুলো হয়ে উঠেছে যেন কেমন অচেনা ও নির্জীব।

করোনাভাইরাসের কারণে একটা সংকটময় মুহূর্ত তৈরি হয়ে আছে গত এক বছর ধরে। তাই আসুন, এই কঠিন পরিস্থিতিতে ইসলাম যে দিকনির্দেশনা দিয়েছে, তা আমল করার চেষ্টা করি। ধৈর্য ও নেক আমলের মাধ্যমে মহান আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনা করি। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আর তোমরা ধৈর্য ও নামাজের মাধ্যমে সাহায্য চাও।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ৪৫)

সংকট মুহূর্তে সবার উচিত, নিজেদের ভুলত্রুটি স্বীকার করা। আল্লাহর কাছে তওবা করা। নিজ নিজ অবস্থান থেকে তার প্রতি প্রত্যাবর্তন করা। পাশাপাশি স্বাস্থবিধি ও সরকারি নির্দেশনাগুলো মেনে চলা।

হোম কোয়ারেন্টাইনের ব্যাপারে হাদিসের নির্দেশনা
আপাতদৃষ্টিতে লকডাউন কিংবা হোম কোয়ারেন্টাইন খারাপ লাগতে পারে কারও কাছে। তবে বৃহত্তর স্বার্থের জন্য বা অন্য মানুষগুলো যেন ভালো থাকে- সেদিকটি বিবেচনায় এটিই বুদ্ধিমানের কাজ। ইসলামেও সে কথা বলা হয়েছে। হাদিসে এসেছে, ‘কোথাও মহামারী দেখা দিলে এবং সেখানে তোমরা অবস্থানরত থাকলে, সে জায়গা থেকে চলে এসো না। অন্যদিকে কোনো এলাকায় এটা দেখা দিলে এবং সেখানে তোমরা অবস্থান না করলে সে জায়গায় যেয়ো না।’ (তিরমিজি, হাদিস : ১০৬৫)

আর এই আমলটিই স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের আবিষ্কৃত ‘হোম কোয়ারেন্টাইন’; রাসুল (সা.)-এর সুন্নতের সঙ্গে এটি পুরোপুরি মিলে যায়। ইসলাম কল্যাণের ও মানবতার ধর্ম। তাই মানুষের ক্ষতি হোক এমন কোনো বিধান ইসলাম আরোপ করেনি। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তিনি ধর্মের ব্যাপারে তোমাদের ওপর সংকট আরোপ করেননি।’ (সুরা হজ, আয়াত : ৭৮)

অন্যের ক্ষতি ইসলামে নিষিদ্ধ
মানুষের ক্ষতি হতে পারে- এমন কাজ থেকে দূরে থাকতে ইসলাম কঠোরভাবে আদেশ দিয়েছে। আর এ জন্য রয়েছে মহামূল্যবান পুরস্কার। আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে তিনি বলেন, আমি একবার রাসুল (সা.)-কে মহামারি সম্পর্কে জিজ্ঞেস করি। উত্তরে তিনি বলেন, ‘মহামারি হলো- আজাব। যাদের ওপর ইচ্ছা, আল্লাহ এ আজাব পাঠান। পরিশেষে তা ঈমানদারদের জন্য রহমত বানিয়ে দেন- এভাবে যে, কোনো বান্দা যদি মহামারি আক্রান্ত এলাকায় থাকে এবং নিজ বাড়িতে ধৈর্যসহকারে, পুণ্যের নিয়তে এ বিশ্বাস বুকে নিয়ে অবস্থান করে যে, আল্লাহ তাআলা তাকদিরে যা চূড়ান্ত রেখেছেন, তার বাইরে কোনো কিছু তাকে আক্রান্ত করবে না, তাহলে তার জন্য রয়েছে একজন শহীদের সওয়াব।’ (মুসনাদে আহমদ, হাদিস : ২৬১৮২)

ইবাদতের সুবর্ণ সুযোগ হোম কোয়ারেন্টাইন

হোম কোয়ারেন্টাইনে যারা আছেন, তাদের জন্য এ সময়টা ইবাদতের সুবর্ণ সুযোগ। তারা সময়টাকে নফল ইতিকাফের মাধ্যমে কাজে লাগাতে পারেন। কারণ, ইতিকাফের মতো ইবাদত আপনার কলুষিত জীবনকে পরিশুদ্ধ করে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে দেবে।

হাদিসে এসেছে, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে এক দিন ইতিকাফ করবে, আল্লাহতায়ালা তার এবং জাহান্নামের মধ্যে তিন খন্দক দূরত্ব সৃষ্টি করে দেবেন।’ (শুয়াবুল ইমান : ৩/৪২৫, হাদিস : ৩৯৬৫)

আসুন, এই কঠিন সময়ে আল্লাহ কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করি। কোরআন-সুন্নাহ মোতাবেক আমল করি। হোম কোয়ারেন্টাইন মেনে চলি। অতি প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বেরিয়ে অন্যের কষ্টের কারণ না হই। সঙ্গে পাপের পাল্লাও ভারী না করি। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘যারা মুমিনদের বিনা অপরাধে কষ্ট দেয়, তারা প্রকাশ্য পাপের বোঝা বহন করে।’ (সুরা আহজাব, আয়াত : ৫৮)

আল্লাহ তাআলা আমাদের সব অপরাধ ক্ষমা করে দিন। আর পৃথিবীকে শান্ত-সুস্থ ও মানুষের বসবাসযোগ্য করে দিন- এই আমাদের প্রার্থনা।