আজানের সূচনা হয়েছে মদিনায়। মদিনায় হিজরত করার পর মুসল্লি সংখ্যা বৃদ্ধি পেলে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবিদের সঙ্গে ‘নামাজে ডাকার ব্যাপারে’ পরামর্শ করেন। কেউ বললেন, একটা পতাকা গেড়ে দেয়া হবে। মুসলমানরা তা দেখে একে অপরকে অবহিত করে মসজিদে চলে আসবে। অনেকে শঙ্খ বাজানোর পরামর্শ দিলেন।

রাসুল (সা.) এটা অপছন্দ করে বললেন, এটা তো ইহুদিদের তরিকা। কেউ আবার ঘণ্টা বাজানোর পরামর্শ দিলেন। বললেন, ‘এটা তো খ্রিষ্টানদের রীতি। অনেকে এ প্রস্তাব দেন যে আগুন জ্বালালে কেমন হয়। যা দেখে দূর থেকে মুসল্লিরা নামাজের জন্য ছুটে আসবে। এটাও নাকচ করে দেন, কারণ এটাতো অগ্নিপূজকদের উপাসনার সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ। উমর (রা.) বলেন, ‘নামাজে ঘোষণা দেয়ার জন্য কাউকে পাঠানো যেতে পারে।’ রাসুল (সা.) বললেন, ‘বেলাল, যাও, নামাজের প্রতি আহ্বান করো।’

নামাজের আহ্বান সংক্রান্ত পরামর্শ সভা শেষ হলে সাহাবিরা বাড়ি চলে যান। আবদুল্লাহ বিন জায়েদ বিন আবদে রাব্বি নামাজের প্রতি আহ্বানের পদ্ধতির ব্যাপারে খুব চিন্তিত ছিলেন। রাতে তিনি ঘুমিয়ে গেলে স্বপ্নে তাকে আজানের পদ্ধতি দেখানো ও শেখানো হয়। তার মুখে শুনে আসা যাক সেই স্বপ্নের কথা, ‘আমি সপ্নে দেখি, সবুজ পোশাক পরিহিত এক ব্যক্তি একটা ঘণ্টা হাতে নিয়ে যাচ্ছে। ‘আমি তাকে ডেকে বললাম আল্লাহর বান্দা, তুমি কি আমার কাছে ঘণ্টাটি বিক্রি করবে?

সে জিজ্ঞেস করল, ‘তুমি এটি দিয়ে কী করবে?’ বললাম, ‘এটি দিয়ে নামাজের ঘোষণা করব।’ বলল, ‘আমি কি তোমাকে এর চেয়ে উত্তম পদ্ধতি শিখিয়ে দেব।’ বললাম কেন নয়? তাড়াতাড়ি বলো।’ বলল, তুমি এই বাক্যগুলো বলবে। তখন আজানের সতেরটি বাক্য শিখিয়ে দেন। সঙ্গে ইকামতও। আমি ভোরে নবীজি (সা.)-এর কাছে গিয়ে স্বপ্নের কথা বর্ণনা করলাম। তিনি বললেন, ‘আল্লাহর ইচ্ছায় নিশ্চয় ‘সত্য স্বপ্ন’। সুতরাং তুমি বেলালকে স্বপ্নে যা শিখেছ তা ওকে শিখিয়ে দাও। সে সেভাবে আজান দেবে। কেননা সে তোমার চেয়ে উঁচু আওয়াজের অধিকারী।’

মহানবী সা.-এর মুয়াজ্জিন ছিলেন যারা

এরপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নির্দেশ মেনে ইসলামের প্রথম যুগে আজান দিয়েছেন এমন মুয়াজ্জিন সাহাবি ছিলেন চারজন। দুজন মদিনায় আজান দিতেন। তাদের একজন হলেন, হজরত বিলাল বিন রিবাহ। নবীজির নির্দেশে তিনিই প্রথম আজান দেন। আরেকজন হলেন অন্ধ সাহাবি হজরত আমর বিন উম্মে মাকতুম কুরশী আমেরি।

মদিনার বাইরে মসজিদে কুবায় নবীজির পক্ষ থেকে মনোনীত মুয়াজ্জিন ছিলেন হজরত আম্মার ইবনে ইয়াসিরের গোলাম সা’আদ রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু।  আর মক্কায় ছিলেন হজরত আবু মাহজুরা রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু। তার আসল নাম ছিল আওস বিন মুগিরা। আবু মাহজুরা রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু সুর করে দিতেন এবং ইকামতে দুবার করে শব্দগুলো উচ্চারণ করতেন। আর বিলাল রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু সুর ছাড়া আজান দিতেন এবং ইকামতের শব্দগুলো একবার উচ্চারণ করতেন। (যাদুল মাআদ, ৮০)

এনটি