রাসূল সা.-এর প্রিয় মুয়াজ্জিন ছিলেন যিনি
![রাসূল সা.-এর প্রিয় মুয়াজ্জিন ছিলেন যিনি](https://cdn.dhakapost.com/media/imgAll/BG/2023August/azan-20230830163132.jpg)
মক্কার মসজিদুল হারামে আজান দিতেন আবু মাহজুরা আল-জুমাহি (রা.)। তিনি ছিলেন রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মনোনীত ৪ মুআজ্জিনের একজন। তার কণ্ঠস্বর ছিল সুমধুর ও সুউচ্চ। আমরণ তিনি মসজিদে হারামে আজানের দায়িত্বে নিয়োজিত ছিলেন। (সিয়ারু আলামিন নুবালা : ৩/১১৭, ১১৮; আত-তাবাকাতুল কুবরা : ৬/৭-৮)
তার নাম আউস। মধুর কণ্ঠের অধিকারী এই সাহাবি হুনাইন যুদ্ধের পর ইসলাম গ্রহণ করেন। ইসলাম গ্রহণের পর মক্কাতেই বসবাস করেন। তার ইসলাম গ্রহণের ব্যাপারে তিনি বলেন, রাসুল (সা.) যখন হুনাইন যুদ্ধ থেকে ফিরছিলেন, তখন আমরা সমবয়সী ১০ জন সঙ্গী-সাথি যুবক বের হলাম মুসলমানদের খোঁজে।
তারা ছিল আমাদের নিতান্ত অপ্রিয় ও ঘৃণিত লোক। একপর্যায়ে দেখতে পেলাম, তারা জিইরানায় অবস্থান করছেন। এদিকে নামাজের সময় হলে তারা আজান দিল। আমরা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে তাদের আজান শুনলাম এবং আজানের শব্দগুলোকে ব্যঙ্গ করতে লাগলাম।
আমরা মুসলমানের কাফেলা থেকে তত দূরে ছিলাম না। ফলে রাসুল (সা.)-এর কান পর্যন্ত আমাদের আওয়াজ পৌঁছে গেল। তিনি আমাদের সম্পর্কে তার সাহাবিদের বললেন, এদের মধ্যে এক যুবকের কণ্ঠস্বর বড়ই সুন্দর লেগেছে; সে কে? সবাইকে ডেকে নিয়ে এসো। আমরা সবাই রাসুল (সা.)-এর সামনে উপস্থিত হলাম। তিনি একেক করে আমাদের সবার থেকে আজান শুনলেন।
আমার থেকে শুনলেন সবার শেষে। আমার কণ্ঠ তার কাছে ভালো লাগল। তাই তিনি আমাকে সামনে বসালেন। আমার মাথার অগ্রভাগে হাত বোলাতে বোলাতে তিনবার আমার জন্য বরকতের দোয়া করলেন। এরপর আমাকে ইসলামের দাওয়াত দিলেন। এতক্ষণে তার প্রতি আমার অন্তরের বিদ্বেষ দূর হয়ে গেল। আমি সাদরে তার দাওয়াতে সাড়া দিয়ে ইসলাম কবুল করলাম।
এরপর তিনি আমাকে বললেন, যাও! মসজিদের হারামে গিয়ে আজান দাও। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল, আমি কিভাবে আজান দেব? তিনি আমাকে আজানের তালিম দিলেন। (সিয়ারু আলামিন নুবালা : ৩/১১৭—১১৮)
এই সাহাবির চুল নারীদের মতো লম্বা ছিল। কারণ ইসলাম গ্রহণের সময় রাসুল (সা.) তার মাথার অগ্রভাগের চুলগুলোর ওপর হাত বুলিয়েছিলেন। তিনি জীবনের শেষ পর্যন্ত সে চুলগুলো স্মৃতি হিসেবে রেখে দিয়েছেন। যে চুলে প্রিয় নবীর হাত লেগেছে, তা কেটে ফেলতে তার মন সায় দেয়নি। ফলে তার চুল ছিল নারীদের চুলের মতো লম্বা।
ইবনে মুহাইরিজ (রহ.) বলেন, আমি হজরত আবু মাহুজুরা (রা.)-এর লম্বা চুল দেখে তাকে বললাম, আপনি কি আপনার চুলগুলো কাটবেন না? তিনি জবাব দিলেন, যে চুলে রাসুল (সা.) হাত বুলিয়েছেন এবং বরকতের দোয়া করেছেন, সেটা আমি কোনো অবস্থাতেই কাটতে পারি না। এটা ছিল তার নবীপ্রীতির এক অকৃত্রিম জজবা। (তাহজিবুল কামাল : ১০/১৯৭)
নবীপ্রেমী এই মুয়াজ্জিন সাহাবি ৫৯ হিজরিতে মক্কায় ইন্তেকাল করেন।
এনটি