গায়রে মাহরামের দিকে হঠাৎ দৃষ্টি পড়লে যা করবেন
প্রতীকী ছবি
নারী-পুরুষের একে-অপরের সঙ্গে দৃষ্টি সংযত রেখে চলাফেরা করতে হয়। ইসলামের বিধান অনুযায়ী একজন পুরুষ ও নারীর জন্য ১৪ জনের সঙ্গে পর্দার বিধান নেই। তাদেরকে শরীয়তের দৃষ্টিতে মাহরাম বলা হয়।
একজন পুরুষের মাহরাম নারী হল এমন নারী, যার সাথে তার বর্তমানে কিংবা ভবিষ্যতে কোনো অবস্থায় বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া জায়েয নয়। যেমন-মা, মেয়ে ইত্যাদি।
বিজ্ঞাপন
পক্ষান্তরে যে নারীর সাথে তার বর্তমানে কিংবা ভবিষ্যতে সাময়িক প্রতিবন্ধকতা (যেমন-নারীর অন্য পুরুষের বিবাহে থাকা) দূর হওয়ার পর বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া জায়েয সে হল গায়র-মাহরাম। একজন নারীর ক্ষেত্রে মাহরাম হলেন এমন ব্যক্তিরা যাদের সঙ্গে তার বর্তমানে কিংবা ভবিষ্যতে কোনো অবস্থায় বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া জায়েয নয়। এদের সঙ্গে দেখা করা যাবে। পর্দার বিধান প্রযোজ্য হবে না। এর বাইরে যারা আছেন তাদের সঙ্গে পর্দার বিধান মানতে হবে।
অসংযত ও পাপ দৃষ্টি সাধারণত অন্যের অগোচরে থেকে যায়। তাই মানুষ পাপ দৃষ্টির ব্যাপারে সতর্ক ও সচেতন নয়।
বিজ্ঞাপন
পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেন,
قُلۡ لِّلۡمُؤۡمِنِیۡنَ یَغُضُّوۡا مِنۡ اَبۡصَارِهِمۡ وَ یَحۡفَظُوۡا فُرُوۡجَهُمۡ ؕ ذٰلِکَ اَزۡکٰی لَهُمۡ ؕ اِنَّ اللّٰهَ خَبِیۡرٌۢ بِمَا یَصۡنَعُوۡنَ وَ قُلۡ لِّلۡمُؤۡمِنٰتِ یَغۡضُضۡنَ مِنۡ اَبۡصَارِهِنَّ وَ یَحۡفَظۡنَ فُرُوۡجَهُنَّ وَ لَا یُبۡدِیۡنَ زِیۡنَتَهُنَّ اِلَّا مَا ظَهَرَ مِنۡهَا وَ لۡیَضۡرِبۡنَ بِخُمُرِهِنَّ عَلٰی جُیُوۡبِهِنَّ ۪ وَ لَا یُبۡدِیۡنَ زِیۡنَتَهُنَّ اِلَّا لِبُعُوۡلَتِهِنَّ اَوۡ اٰبَآئِهِنَّ اَوۡ اٰبَآءِ بُعُوۡلَتِهِنَّ اَوۡ اَبۡنَآئِهِنَّ اَوۡ اَبۡنَآءِ بُعُوۡلَتِهِنَّ اَوۡ اِخۡوَانِهِنَّ اَوۡ بَنِیۡۤ اِخۡوَانِهِنَّ اَوۡ بَنِیۡۤ اَخَوٰتِهِنَّ اَوۡ نِسَآئِهِنَّ اَوۡ مَا مَلَکَتۡ اَیۡمَانُهُنَّ اَوِ التّٰبِعِیۡنَ غَیۡرِ اُولِی الۡاِرۡبَۃِ مِنَ الرِّجَالِ اَوِ الطِّفۡلِ الَّذِیۡنَ لَمۡ یَظۡهَرُوۡا عَلٰی عَوۡرٰتِ النِّسَآءِ ۪ وَ لَا یَضۡرِبۡنَ بِاَرۡجُلِهِنَّ لِیُعۡلَمَ مَا یُخۡفِیۡنَ مِنۡ زِیۡنَتِهِنَّ ؕ وَ تُوۡبُوۡۤا اِلَی اللّٰهِ جَمِیۡعًا اَیُّهَ الۡمُؤۡمِنُوۡنَ لَعَلَّکُمۡ تُفۡلِحُوۡنَ
মুমিনদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে সংযত করে এবং তাদের লজ্জাস্থানের হেফাযত করে; এটাই তাদের জন্য অধিক পবিত্র। তারা যা করে নিশ্চয় আল্লাহ সে বিষয়ে সম্যক অবহিত। আর মুমিন নারীদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে সংযত করে এবং তাদের লজ্জাস্থানের হেফাযত করে; আর তারা তাদের সৌন্দর্য প্রদর্শন না করে তবে যা সাধারণত প্ৰকাশ হয়ে থাকে। আর তারা তাদের গলা ও বুক যেন মাথার কাপড় দ্বারা ঢেকে রাখে। আর তারা যেন তাদের স্বামী, পিতা, শ্বশুর, পুত্র, স্বামীর পুত্র, ভাই, ভাইয়ের ছেলে, বোনের ছেলে, আপন নারীরা, তাদের মালিকানাধীন দাসী, পুরুষদের মধ্যে যৌন কামনা রহিত পুরুষএবং নারীদের গোপন অঙ্গ সম্বন্ধে অজ্ঞ বালক(৮) ছাড়া কারো কাছে তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে, তারা যেন তাদের গোপন সৌন্দর্য প্রকাশের উদ্দেশ্যে সজোরে পদচারণা না করে। হে মুমিনগণ! তোমরা সবাই আল্লাহর দিকে ফিরে আস, যাতে তোমরা সফলকাম হতে পার। (সূরা নূর, (২৪), আয়াত, ৩০-৩১)
এজন্য নারী ও পুরুষের দৃষ্টির হেফাজত করা জরুরি। এ ব্যাপারে আল্লাহ মানুষকে সতর্ক করে বলেছেন, ‘আল্লাহ চোখগুলোর অসততা এবং অন্তর যা গোপন করে তা জানেন।’ (সুরা গাফির, আয়াত, ১৯)
আরও পড়ুন
তবে যাদের সঙ্গে পর্দা করতে হয় কখনো অসতর্কতাবশত যদি তাদের দিকে দৃষ্টি পড়ে যায়, তাহলে সঙ্গে সঙ্গে দৃষ্টি সরিয়ে নিতে হবে। এ বিষয়ে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হজরত আলী রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘হে আলী! একবার নজর পড়ে গেলে দ্বিতীয় বার তাকাবে না। কেননা, (অজানতে) প্রথম দৃষ্টি তোমার জন্য দোষমুক্ত, তবে পুনরায় নজর দেওয়া বৈধ নয়।’ (সুনানুল কুবরা-৭/৯০)।
আরেক হাদিসে হজরত জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, আমি আল্লাহ পাকের প্রিয় হাবীব সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে গায়রে মাহরামদের প্রতি হঠাৎ নজর পড়ে যাওয়া সম্পর্কে জিজ্ঞে করেছিলাম ৷ জবাবে তিনি বললেন, দৃষ্টি সরিয়ে নিবে। (মুসলিম)
এনটি