বৈশ্বিক দুর্যোগ করোনাভাইরাসের প্রভাবে থমকে গেছে গোটা বিশ্ব। ঘরবন্দি হয়ে দিন কাটাচ্ছে কোটি কোটি মানুষ। বিভিন্ন দেশে লকডাউন, কঠোর বিধি-নিষেধ ও বিশেষ নিয়মব্যবস্থায় আটকা পড়ছেন অনেকে। একান্ত প্রয়োজন ছাড়া কেউ কেউ ঘর থেকে বের হতেও পারছে না।

মসজিদগুলোতে জামাতে নামাজির উপস্থিতির সংখ্যা নির্ধারণ করে দিয়েছে ধর্ম মন্ত্রণালয়। ইমাম-মুয়াজ্জিনের পাশাপাশি জন বিশেক মানুষ পূর্ণ সতর্কতা অবলম্বন করে মসজিদে নামাজ আদায় করছেন। আর বেশিরভাগ মানুষই ঘরে কিংবা অন্য কোথাও জামাত করে নামাজ পড়ছেন এবং তারাবি আদায় করছেন।

যারা মসজিদে কিংবা কর্মক্ষেত্রে অন্য কোথাও নামাজ আদায় করছেন, তাদের অনেকেই সতর্কতাবশত মুখে মাস্ক পরে নামাজ পড়ছেন। বলতে গেলে, গত বছরখানেক ধরে মানুষ এমন পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছে। এর আগে যেহেতু এমন অবস্থায় পড়েনি, তাই এভাবে কাউকে মুখে মাস্ক পরেও নামাজ পড়তে হয়নি। ফলে প্রায়জনের মনে এই প্রশ্নটি উঁকি দিচ্ছে যে, মুখে মাস্ক পরে নামাজ পড়া যাবে কিনা? তারা আমাদের কাছে বিভিন্ন মাধ্যমে জানার জন্য প্রশ্নও করছেন।

মাস্ক পরে নামাজ আদায়
তাই এ বিষয়ে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করা জরুরি মনে করছি। প্রসঙ্গত, পরিস্থিতি বিবেচনায় করোনাভাইরাসের সংক্রমণ থেকে বাঁচার জন্য মানুষকে বাধ্য হয়ে মুখে মাস্ক পরে নামাজ আদায় করতে হচ্ছে। এটা একটি শরয়ি ওজর বা অপারগতা।

তাই এই বিপদের মুহূর্তে (রোগাক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকায়) মুখে মাস্ক পরে নামাজ আদায় করার ক্ষেত্রে শরিয়তে কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই। (আদ্দুররুল মুখতার : ১/৬৫২, রাদ্দুল মুহতার : ১/৬৫২)

তবে স্বাভাবিক অবস্থায় মাস্ক কিংবা অন্য কিছু দিয়ে নাক, মুখ ঢেকে নামাজ আদায় করা মাকরুহ। (আদ্দুররুল মুখতার : ১/৬৫২; রাদ্দুল মুহতার : ১/৬৫২)

অন্য সময়ে মুখ ঢেকে নামাজ
রাসুল (সা.) স্বাভাবিক অবস্থায় এভাবে নামাজ আদায় করতে নিষেধ করেছেন। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত আছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) নামাজরত অবস্থায় মুখমণ্ডল ঢাকতে নিষেধ করেছেন। (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৯৬৬)

অন্য হাদিসে ইরশাদ হয়েছে— 

উল্লিখিত হাদিসগুলোতে নাক, মুখ ঢেকে নামাজ পড়তে নিষেধ করা হলেও, অসুস্থতা ও অপারগতার বিষয়টা ভিন্ন। ইসলাম কখনোই মানুষের ওপর তার সাধ্যের বাইরে কিছু চাপিয়ে দেয় না। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহ কারো ওপর সামর্থ্যের অতিরিক্ত বোঝা চাপিয়ে দেন না।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ২৮৬)

সতর্কতা ও মাস্ক ব্যবহার

করোনাভাইরাস যেহেতু খালি চোখে দেখা যায় না। ফলে নিজেরাও জানি না যে, কে আক্রান্ত আর কে আক্রান্ত নয়। এমনকি আমরা নিজেরা আদৌ এই ভাইরাস থেকে মুক্ত আছি কিনা— সেটা সম্পর্কে ধারণা নেই? কিংবা যে মানুষটি আমাদের আশেপাশে রয়েছেন কিংবা যার সংস্রবে আমি যাচ্ছি— তিনি এই মরণঘাতী ভাইরাস থেকে মুক্ত কিনা? তাই আমাদের সবার উচিত সবসময় সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করা। আর প্রতিটি ক্ষেত্রে এটাই ইসলামের শিক্ষা। তাই আমরা জামাতে নামাজ আদায়ের ক্ষেত্রেও অবশ্যই সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করব।

মহান আল্লাহ তাআলা সব ধরনের রোগ-বালাই ও মহামারি-বিপদ থেকে আমাদের রক্ষা করুন।