খাবারের পর অনেক সময় ঢেকুর উঠে। ঢেকুর উঠার বিভিন্ন কারণ রয়েছে। বেশি মাত্রায় খাওয়া, স্থূলতা এবং অতি মসলাদার খাবার ঢেকুরের অন্যতম কারণ। 

এছাড়াও বদহজম, গ্যাস্ট্রো-ইসোফেজিয়াল রিফ্লাক্স ডিজিজ, হায়াটাস হার্নিয়া (এসব রোগে পাকস্থলী থেকে ওপরের দিকে খাবার বা অম্ল উঠে আসে) কিংবা আইবিএস (ইরিটেবল বাওয়েল সিনড্রোম), পাকস্থলীর আলসার ও সংক্রমণের ক্ষেত্রে রোগের উপসর্গ হিসেবেই ঢেকুর ওঠে। তাই প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

রোজা রেখে ঢেকুর ওঠা স্বাভাবিক। শুধু ঢেকুর উঠার কারণে রোজা ভাঙে না। তবে ঢেকুরের সাথে মুখে কিছু আসলে সেটা গিলা যাবে না; বরং ফেলে দিতে হবে। যদি কেউ ইচ্ছাকৃত গিলে ফেলে তাহলে রোজা ভেঙ্গে যাবে। আর যদি অনিচ্ছাকৃত নিজ থেকেই তা পেটে চলে যায় তাহলে রোজা নষ্ট হবে না। 

আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, 

‌مَنِ ‌اسْتَقَاءَ ‌عَامِدًا ‌فَعَلَيْهِ ‌الْقَضَاءُ وَمَنْ ذَرَعَهُ الْقَيْءُ فَلَا قَضَاءَ عَلَيْهِ

যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃত বমি করবে তার কাজা করতে হবে। আর কারো যদি অনিচ্ছায় বমি চলে আসে তাহলে তার কাজা করতে হবে না।’ (সুনানে দারাকুতনী, হাদিস, ২২৭৩, আলমাবসূত, সারাখসী ৩/৫৬; শরহুল জামিইস সাগীর, সাদরুশ শাহীদ, পৃ. ২৩৪)

রোজা ভঙ্গের বেশ কিছু কারণ আছে। চলুন জেনে নেওয়া যাক—

এক. ভুলে খাওয়া বা পান করার পর রোজা ভেঙে গেছে মনে করে আবার ইচ্ছাকৃতভাবে খাওয়া বা পান করা। (ফাতওয়া শামি, খণ্ড : ০৩, পৃষ্ঠা : ৩৭৫)

দুই. বিড়ি-সিগারেট বা হুঁকা সেবন করা। (জাওয়াহিরুল ফিকাহ, খণ্ড : ০১, পৃষ্ঠা : ৩৭৮)

তিন. কাঁচা চাল, আটার খামির বা একত্রে অনেক লবণ খাওয়া। (ফাতওয়া আল-হিন্দিয়্যা, খণ্ড : ০১, পৃষ্ঠা : ১৯৯)

চার. এমন কোনো বস্তু খাওয়া, যা সাধরণত খাওয়া হয় না। যেমন- কাঠ, লোহা, কাগজ, পাথর, মাটি, কয়লা ইত্যাদি। (ফাতওয়া আল-হিন্দিয়্যা, খণ্ড : ০১, পৃষ্ঠা : ২০২; জাওয়াহিরুল ফিকাহ, খণ্ড : ০১, পৃষ্ঠা : ৩৭৮)

পাঁচ. পাথর, কাদামাটি, কঙ্কর, তুলা-সুতা, তৃণলতা, খড়কুটো ও কাগজ গিলে ফেলা। (ফাতাওয়া আল-হিন্দিয়্যা, খণ্ড : ০১, পৃষ্ঠা : ২০৩)

ছয়. নিজের থুতু হাতে নিয়ে গিলে ফেললে। (ফাতাওয়া আল-হিন্দিয়্যা, খণ্ড : ০১, পৃষ্ঠা : ২০২)

সাত. ভুলে স্ত্রী সম্ভোগের পর রোজা ভেঙে গেছে মনে করে— আবার স্ত্রীর সঙ্গে সহবাস সম্পর্ক করা। (ফাতওয়া শামি, খণ্ড : ০৩, পৃষ্ঠা : ৩৭৫)

আট. কানে বা নাকের ছিদ্র দিয়ে তরল ওষুধ দেওয়া। (ইমদাদুল ফাতাওয়া, খণ্ড : ০২, পৃষ্ঠা : ১২৭)

নয়. দাঁত দিয়ে রক্ত বের হলে যদি তা থুতুর চেয়ে পরিমাণে বেশি হয় এবং কণ্ঠনালিতে চলে যায়। (ফাতাওয়া শামি, খণ্ড : ০৩, পৃষ্ঠা : ৩৬৭)

দশ. মুখে পান দিয়ে ঘুমিয়ে যাওয়া এবং এ অবস্থায় সুবহে সাদিক করা। (ইমদাদুল ফাতাওয়া, খণ্ড : ০২, পৃষ্ঠা : ১৭২)

এগার. হস্তমৈথুন করা। (ফাতাওয়া দারুল উলুম দেওবন্দ, খণ্ড : ০৬, পৃষ্ঠা : ৪১৭)

বারো. রোজা স্মরণ থাকা অবস্থায় কুলি কিংবা নাকে পানি দেওয়ার সময় কণ্ঠনালিতে পানি চলে যাওয়া। (আহসানুল ফাতাওয়া, খণ্ড : ০৪, পৃষ্ঠা : ৪২৯)

তের. কাউকে জোর-জবদস্তি করে পানাহার করানো। (ফাতাওয়া হিন্দিয়্যা, খণ্ড : ০১, পৃষ্ঠা : ২০২)

চৌদ্দ. রাত মনে করে সুবহে সাদিকের পর সাহরি খাওয়া। (জাওয়াহিরুল ফিকাহ, খণ্ড : ০১, পৃষ্ঠা : ৩৭৮)

পনের. ইচ্ছাকৃতভাবে বমি করা বা বমি আসার পর তা গিলে ফেলা। (ফাতহুল কাদির, খণ্ড : ০২, পৃষ্ঠা : ৩৩৭)

ষোল. সূর্যাস্ত হয়ে গেছে মনে করে ভুলে দিনে ইফতার করা। (বুখারি, হাদিস : ১৯৫৯)

সতের. যদি কেউ রাত ধারণা করে স্ত্রী সহবাসে লিপ্ত হয়ে যায়, অতঃপর সুবহে সাদিকের কথা জানতে পেরে তৎক্ষণাৎ সহবাস থেকে বিরত হয়ে যায়। (ফাতওয়া শামি, খণ্ড : ০৩, পৃষ্ঠা : ৩৭৪)

আঠার. বৃষ্টি বা বরফের টুকরো খাদ্যানালির ভেতরে চলে গেলে রোজা ভেঙে যায়। (ফাতাওয়া হিন্দিয়্যা, খণ্ড : ০১, পৃষ্ঠা : ২০৩)