প্রতীকী ছবি

রমজানের শেষ দশক শুরু হয়ে গিয়েছে। গোটা রমজানের তুলনায় এই সময়ে আমলের গুরুত্ব অনেক বেশি। কেননা এই সময়েই রয়েছে লাইলাতুল কদর— যা এই শেষ দশকের যেকোনো বিজোড় রাতেই হতে পারে।

একারণে রমজানের শেষ দশকে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রচুর আমল করতেন। তার আমল সম্পর্কে আয়েশা (রা.) জানিয়েছেন যে, ‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রমজানের শেষ দশকে (ইবাদাতে) এমন পরিশ্রম করতেন, যা তিনি অন্য কখনো করতেন না।’ (মুসলিম, হাদিস : ১১৭৫)

এর মাঝে অবশ্যই রয়েছে— প্রচুর সলাত আদায়, জিকির, তিলাওয়াত আর দান। রমজানে রাসুল (সা.)-এর দানশীলতা সম্পর্কে আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস (রা.) বর্ণনা করেছেন, ‘নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মানুষের মাঝে অধিকতর দানশীল ছিলেন, আর বিশেষ করে রমজানে তিনি আরও বেশি দানশীল হয়ে যেতেন।’ (বুখারি, হাদিস : ৩৫৫৪)

দান বলতে কেবল ফরজ জাকাত আদায়-ই নয়; বরং নফল সদকাও দানের অন্তর্ভুক্ত। উপরন্তু এই প্রয়োজনীয়তাই বর্তমানে অধিক। কেননা জাকাতের নিসাবের মালিক সবাই হয় না; কিন্তু নফল সদকা সবাই করতে পারে।

দানের রয়েছে অগণিত ফজিলত

আল্লাহ তাআলা প্রকাশ্যে ও গোপনে অধিক পরিমাণে দানের নির্দেশ দিয়ে বলেছেন, ‘আমার যে বান্দারা ঈমান এনেছে, তাদের বলে দিন— তারা যেন সালাত আদায় করে এবং আমি তাদের যে রিজিক দিয়েছি, তা থেকে গোপনে ও প্রকাশ্যে ব্যয় করে; এমন দিন আসার আগে— যখন কোনো ক্রয়-বিক্রয় কিংবা বন্ধুত্ব থাকবে না।’ (সুরা ইবরাহিম, হাদিস : ৩১)

এজন্য আল্লাহর রাসুল (সা.) সতর্ক করে বলেছেন, ‘খেজুরের এক টুকরা দিয়ে হলেও (দান করে) নিজেকে জাহান্নাম থেকে বাঁচাও।’ (বুখারি, হাদিস : ৭৫১২)

অর্থাৎ কিয়ামতের দিন দুনিয়ার কোনো বন্ধুত্ব বা ক্রয়-বিক্রয় কোনো কাজে আসবেনা। এগুলোর মাধ্যমে নিজেকে মুক্ত করা যাবে না। একমাত্র নেক আমল সেদিন আল্লাহর মেহেরবানি ও রহমতের আহ্বায়ক হবে। আর আল্লাহর রহমত হলেই কেবল বাঁচা যাবে। আর সেই রহমত পাবার অন্যতম মাধ্যম হলো- দান-সদকা করা। যদি বেশি সামর্থ্য না থাকে, তাহলে অল্প হলেও করতে হবে। একটা আস্ত খেজুর দিতে না পারলে, অর্ধেক দান করা হোক— তবুও দান করা জরুরি।

এই হাদিসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিশেষভাবে আমাদের শিখিয়েছেন যে, তোমার সামর্থ্য নেই লাখ টাকা বা এক হাজার টাকা দান করবার; কিন্তু দুই টাকা দানের সামর্থ্য আছে তো, সেটা কেন করছো না কেন? কে আটকে রেখেছে? যা আছে তা-ই দান করো। আর জাহান্নামের আগুন থেকে নিজেকে বাঁচাও।

তিনি আরও শিখিয়েছেন, দান করে নিজের গুনাহ মাফ করিয়ে নাও। তিনি বলেছেন, ‘সদকা গুনাহকে সেভাবে মিটিয়ে দেয়, যেভাবে পানি আগুনকে নিভিয়ে দেয়। (মুসনাদ আহমাদ, হাদিস : ২২১৩৩)

তিনি জানিয়েছেন গোপন সদকা মহান রব আল্লাহর ক্রোধ প্রশমিত করে। হাদিস এসেছে, ‘নিশ্চয় গোপন সদকা রবের ক্রোধকে প্রশমিত করে।’ (তাবারানি, হাদিস : ১০১৮; তারগিব, হাদিস : ৮৮৮)

গুনাহ মাফে দান-সদকা

এই গুনাহের মহামারির যুগে আমরা সবাই কম বেশি গুনাহে আক্রান্ত। নিজেদের গুনাহগুলোকে ক্ষমা করাতে আল্লাহ তাআলার ক্রমাগত নাফরমানি থেকে বাঁচতে এবং তার ক্রোধ হতে মুক্তি পেতে তাই দান-সদকা করা অত্যন্ত জরুরি।

বিশেষ করে এখন তো চারিপাশে করোনার ব্যাপক প্রকোপ রয়েছে। আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশের অবস্থা খুবই ভয়াবহ। এই অবস্থায় আল্লাহ না করুন, কেউ যদি আক্রান্ত হয়— তার দুনিয়াবী চিকিৎসার যতটা প্রয়োজন রয়েছে, তার চাইতে বেশি আল্লাহর মেহেরবানির প্রয়োজন রয়েছে। তিনি তাওফিক না দিলে— দুনিয়ার কেউ আক্রান্ত রোগীকে শিফা বা সুস্থতা দিতে সক্ষম নয়। তাই তো আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘তোমাদের রোগীদের সাদাকাহর মাধ্যমে চিকিৎসা করো।’ (সহিহুল জামি, শাইখ নাসিরুদ্দিন আলবানি; হাদিস : ৩৩৫৮)

অর্থাৎ রোগীর রোগমুক্তির নিয়তে বেশি বেশি দান করো। তাহলে আল্লাহর মেহেরবানি হবে। ইনশা আল্লাহ রোগমুক্তি ঘটবে। এছাড়াও একটি দুর্বল সনদের হাদিসে একথাও রয়েছে, ‘দান সত্তর প্রকার বিপদকে প্রতিহত করে।’ (আল জামিউস সগির, ইমাম সুয়ুতি; হাদিস :  ৭৯৮৪)

কাজেই আসুন রমজানের শেষ দশকের এই বরকতপূর্ণ সময়কে কাজে লাগিয়ে আমরা বেশি বেশি দান করি, যেন আমাদের গুনাহমুক্তি হয়। আল্লাহ তা’আলা আমাদের প্রতি প্রসন্ন হন। আমাদের বিপদগুলো দূর হয়ে যায় এবং আমারা রোগমুক্ত হতে পারি। সর্বোপরি কিয়ামাতের দিন যেন জাহান্নাম থেকে মুক্তি লাভ করতে পারি।

ক্ষমা না পেলে হতভাগ্য

মনে রাখতে হবে এই রমজানে যে নিজের গুনাহ মাফ করাতে পারলো না— সে নিঃসন্দেহে হতভাগ্য। তাই জিবরিল (আ.) এসে আল্লাহর রাসুল (সা.)-কে যখন বললেন, ‘হে মুহাম্মাদ, যে রমজান পেল, কিন্তু ক্ষমা পেল না— আল্লাহ তাকে (স্বী রহমত হতে) দূর করে দেবেন (বলুন আমিন)’। তিনি তখন বললেন, “আমিন”। (ইবনে হিব্বান, হাদিস : ৪০৯)

অর্থাৎ রমজানে নিজের গুনাহ মাফ করাতে না পারলে, আল্লাহ থেকে দূর হয়ে যেতে হবে। আর এটা আল্লাহর অভিপ্রায় এবং এই দোয়ায় রাসুল (সা.) আমিন বলেছেন। কত কঠিন ও দুশ্চিন্তার কথা।

তাই আসুন প্রিয় পাঠক রমজানের এই শেষ দশক আমরা আমলে পূর্ণ করে ফেলি। অধিক ইবাদত ও অবশ্যই অধিক পরিমাণে সদকা করি। যেন এই রমজানেই আল্লাহর পক্ষ হতে ক্ষমা পেতে পারি। আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে তাওফিক দান করুন। আমিন।