নামাজের সময় হিসাব পদ্ধতি
সময়মতো পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করা একজন মুসলিমের অন্যতম দায়িত্ব। সময়মতো নামাজ আদায়ের বিষয়ে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘নামাজ মুমিনের জন্য নির্দিষ্ট সময়ে ফরজ।’ (সূরা নিসা, আয়াত : ১০৩)
সময়মতো নামাজ আদায়ের পুরস্কার
বিজ্ঞাপন
সময়মতো পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করলে জান্নাতের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘আল্লাহ তার বান্দাদের ওপর পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ করেছেন। যে ব্যক্তি তা যথাযথভাবে পালন করবে, আর অবহেলার কারণে এর কোনোটি পরিত্যাগ করবে না, মহান আল্লাহ তাকে জান্নাতে প্রবেশ করানোর অঙ্গীকার করেছেন। আর যে ব্যক্তি তা (যথাযথভাবে) আদায় করবে না, তার জন্য আল্লাহর কাছে কোনো প্রতিশ্রুতি নেই। তিনি ইচ্ছা করলে তাকে শাস্তি দেবেন কিংবা জান্নাতে প্রবেশ করাবেন।’ (সুনানে আবি দাউদ, হাদিস : ১৪২০)
রাসূল সা.-কে জিবরাঈল আ.-এর নামাজ আদায়
বিজ্ঞাপন
পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের কোনটি কখন আদায় করতে হবে তা জিবরাঈল আ. রাসূল সা.-কে শিক্ষা দিয়েছেন। এক হাদিসে রাসূল সা. বলেন—
জিবরাঈল আ. কাবাঘরের কাছে এসে দু’বার আমার নামাজের ইমামতী করেন। তিনি আমাকে জোহরের নামাজ পড়ালেন যখন সূর্য মাথার ওপর থেকে একটু ঢলে যায় এবং তার ছায়াটা জুতোর চামড়ার মত হয়। তারপর তিনি আমাকে আসরের নামাজ পড়ালেন যখন প্রত্যেক জিনিসের ছায়া তার সমান হয়। তারপর তিনি আমাকে মাগরিবের নামাজ পড়ালেন যখন রোজাদাররা ইফতার করে (অর্থাৎ সূর্য ডোবার সাথে সাথেই)। তারপর তিনি আমাকে এশা পড়ালেন যখন ‘শাফাক’ বা সন্ধ্যা বেলায় পশ্চিমাকাশের লাল রং দূর হয়ে যায়। তারপর তিনি আমাকে ফজরের নামাজ পড়ালেন যখন রোজাদারদের ওপর খাওয়া ও পান করা হারাম হয়ে যায়।
এরপর যখন দ্বিতীয় দিন এলো তখন তিনি আমাকে সেই সময় জোহর পড়ালেন যখন তার ছায়া সমান হয় এবং আসর তখন পড়ালেন যখন তার ছায়া তার দ্বিগুণ হয়। আর মাগরিব তখন পড়ালেন যখন রোজাদার ইফতার করে এবং এশা তখন পড়ান যখন তিন ভাগের একভাগ রাত গত হয়ে যায়। আর ফজর তখন পড়ান যখন ফর্সা হয়ে যায়। তারপর তিনি আমার দিকে মুখ করে বললেন, হে মুহাম্মাদ! এটা আপনার পূর্বের নবিদের সময় এবং এই দুই অক্তের মধ্যবর্তী সময়ই হল প্রকৃত সময়। (আবু দাউদ, মেশকাত, ৫৯)।
আরও পড়ুন
পাঁচ নবীর পাঁচ নামাজ
কেউ কেউ বলেন, ফজরের নামাজ আদমের, জোহর দাউদের, আসর সোলায়মানের, মাগরিব ইয়াকুবের এবং এশা ইউনুস আলাইহিস সালামের ছিল। অত:পর ঐ সবগুলোই এই উম্মতের জন্য একত্রিত করে দেওয়া হযেছে। (ফতোয়ায়ে শামি, ১ম খন্ড, ৩২৫)
ফজরের সময়
দিনের প্রথম নামাজ ফজর। এই নামাজের মাধ্যমে মানুষের দিন শুরু হয়। ফজরের নামাজের সময় সুবহে সাদিক থেকে সূর্য ওঠার আগ পর্যন্ত। আনাস রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সা. একটু অন্ধকার থাকতে ফজরের নামাজ পড়তেন। (বুখারি ও মুসলিম)
আয়েশা রা. বলেন, রাসূলূল্লাহ সা. ফজরের নামাজ এমন (অন্ধকার) সময়ে পড়তেন যে, নামাজী মেয়েরা চাদর জড়িয়ে ফেরার সময় অন্ধকারের কারণে তাদেরকে চেনা যেত না। (বুখারি, মেশকাত, ৬০)
সূর্য ডোবা থেকে সূর্য ওঠা পর্যন্ত সময়টাকে আট ভাগে ভাগ করলে ৭ ভাগের শেষ ও ৮ ভাগের শুরুটা ফজরের ফজরের প্রথম সময়।
অর্থাৎ, সূর্য ওঠার দেড় ঘণ্টা আগে এবং মৌসুম অনুযায়ী কখনো তারও ১৫-২০ মিনিট আগেপরে সুবহে সাদিক উদিত হয়, যাকে ফজরের আওয়াল ওয়াক্ত বলে।
ইমাম তাহাভি রহ. বলেন, রাসূলূল্লাহ সা. ও সাহাবায়ে কেরাম থেকে বর্ণিত হাদিস মোতাবেক গালাসে ফজরের নামাজ শুরু করা উচিত এবং এসফারে (একটু ফর্সা হলে) শেষ করা উচিত। ইমাম আবু হানীফা, ইমাম আবু ইউসুফ ও মোহাম্মদ রহ. প্রমুখের মত এমনটাই। (শারহে মাআ-নীল আসা-র ১ম খন্ড, ৯০)
জোহরের সময়
সূর্য মাথার ওপর থেকে পশ্চিমে ঢলে যাওয়ার পর হতে শুরু করে যতক্ষণ পর্যন্ত কোনো জিনিসের ছায়া সেই জিনিসের সমান না হয় ততক্ষণ পর্যন্ত জোহরের সময় (মুসলিম)।
আনাস রা. থেকে বর্ণিত যে, রাসূলূল্লাহ সা. গ্রীষ্মকালে আবহাওয়া শীতল হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করে একটু দেরিতে জোহর পড়তেন এবং শীতকালে দ্রুত জোহর নামাজ আদায় করতেন। (নাসায়ি, মেশকাত, ৬২)
আসরের সময়
কোনো জিনিসের ছায়া সমপরিমাণ হয়ে যাবার পর দ্বিগুণ হতে শুরু করা থেকে সূর্য ডোবা পর্যন্ত আসরের সময়। (মুসলিম)
রাসূলূল্লাহ সা. বলেন, সূর্য যখন হলদে রং হয় এবং শয়তানের দুই শিংয়ের মাঝখানে এসে যায় তখন মুনাফেকরা আসরের নামাজ পড়ে। (মুসলিম, মেশকাত, ৬০)। সুতরাং সূর্যের আভা একটু হলদে রং হয়ে আসার আগেই আসর পড়া উচিত।
মাগরিবের সময়
সূর্য ডোবার পর থেকে পশ্চিম আকাশের লাল আভা দূর না হওয়া পর্যন্ত মাগরিবের সময়। (মুসলিম, মেশকাত, ৫৯)।
রাফে ইবনে খাদিজ রা. বলেন, আমরা রাসূলূল্লাহ সা.-এর সাথে নামাজ পড়তাম। তারপর আমাদের কেউ গিয়ে তীর ছুঁড়লে আমরা তার সেই তীর পড়ার জায়গাটা দেখতে পেতাম। (বুখারি, মুসলিম, মেশকাত, পৃ: ৬০)
এশার সময়
রাসূলূল্লাহ সা. বলেন, পশ্চিম আকাশের লাল আভা দূর হাবার পর অর্ধেক রাত পর্যন্ত এশার ওয়াক্ত। (মুসলিম, মেশকাত, ৫৯)
নোমার উবনে বাশীর থেকে বর্ণিত যে, চাঁদ উঠে তিন ঘড়ি গত হবার পর রাসুলুল্লাহ সা. এশার নামাজ পড়তেন। (আবু দাউদ, মেশকাত, ৬১)