প্রতীকী ছবি

মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষার অন্ত নেই। নেই প্রত্যাশা ও উচ্চাভিলাষের সীমা। একেক সময় একেকটা ইচ্ছে ও চাওয়া মনোজগতে উদতি হয়। কোনোটা ভালো ও কল্যাণপ্রসূ, আবার কোনোটা হয়তো মন্দ ও অমঙ্গলজনক। কিন্তু প্রতিটি মানুষই চায়— তার মনের আশা পূরণ হোক।

প্রতিটি মুমিন সবসময়ই চাইবে— তার শুভ ইচ্ছে ও চাওয়াগুলো যেন পূর্ণতা পায়। তাই আপ্রাণ চেষ্টার পাশাপাশি কায়মনো বাক্যে মহান আল্লাহর দরবারে প্রার্থনা ও দোয়া করে।

হাদিসে মানুষের দোয়া কবুল হওয়ার বিভিন্ন মাধ্যম উল্লেখ করা হয়েছে। সময়কাল ও ধরনও আলোচিত হয়েছে। দোয়া কবুল হওয়ার অন্যতম মাধ্যম ইসমে আজমের কথা উল্লেখ করা হয়েছে।

ইসমে আজম কী?

দোয়া কবুলে ইসমে আজমের ভূমিকা অসমান্য। ‘ইসম’ শব্দের অর্থ নাম। ‘আজম’ শব্দের অর্থ মহান বা শ্রেষ্ঠ। পুরো ইসমে আজম অর্থ মহান-শ্রেষ্ঠ নাম। মহান আল্লাহ তাআলার অনেক নাম রয়েছে। বিভিন্ন হাদিসে ৯৯টি নামের কথা এসেছে। সে নামগুলোর বিপুল ফজিলতের কথাও হাদিসে বর্ণিত হয়েছে।

এগুলো ছাড়াও যেসব নাম আল্লাহর বড়ত্ব ও শ্রেষ্ঠত্ব সর্বোচ্চভাবে প্রকাশ করে, সেগুলোকে ‘ইসমে আজম’ বলা হয়। শায়খ আবদুল কাদের জিলানি (রহ.) বলেন, ‘ইসমুল আজম হলো- ‘আল্লাহ’ শব্দ। তবে শর্ত হলো তা পূর্ণ একাগ্রতা ও এখলাসের সঙ্গে বলতে হবে।’ (মিরকাতুল মাফাতিহ : ১/৬)

ইসমে আজমের ব্যাপারে বিজ্ঞ আলেমদের অনেক মতামত রয়েছে। কেউ কেউ বলেন, কম-বেশি প্রায় ৪০টি মতামত। যার মধ্যে আল্লামা সুয়ূতি (রহ.) তার ‘আদ দুররুল মুনাজ্জাম ফিল ইসমিল আজম’ নামক গ্রন্থে ২০টি মতামত উল্লেখ করেছেন।

আরও পড়ুন : উত্তম সন্তান লাভের দোয়া

ইসমে আজমের ফজিলত

ইসমে আজমের ফজিলত ও উপকার অনেক বেশি। বিভিন্ন হাদিসে ইজমে আজমের কথা এসেছে। আল্লাহর কিছু গুণবাচক নামকে ‘ইসমে আজম’ বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। পাশাপাশি ইসমে আজমের লাভ, ফজিলত ও উপকারের কথাও বর্ণনা করা হয়েছে।

আনাস (রা.) বর্ণনা করেন, একবার রাসুল (সা.) মসজিদে প্রবেশ করেছেন। এমন অবস্থায় এক লোক নামাজ শেষে এ দোয়া করছিলেন— 

আল্লাহুম্মা লা-ইলাহা ইল্লা আংতাল মান্নান, বাদিয়ুস সামাওয়াতি ওয়াল আরদি ইয়া জাল-জালালি ওয়াল ইকরাম।

তখন রাসুল (সা.) তাকে বললেন, ‘তুমি কি জানো, তুমি কি দিয়ে দোয়া করেছ? তুমি দোয়া করেছ ‘ইসমে আজম’ দিয়ে। এর মাধ্যমে দোয়া করলে আল্লাহ কবুল করেন এবং তা দ্বারা কিছু চাইলে আল্লাহ তা প্রদান করেন।’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ৩৫৪৪)

আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি রাসুল (সা.) এর সঙ্গে বসা ছিলেন। এ সময় এক ব্যক্তি নামাজ আদায় করে এই বলে দোয়া করল, ‘আল্লাহুম্মা লা-ইলাহা ইল্লা আংতাল মান্নান, বাদিয়ুস সামাওয়াতি ওয়াল আরদি ইয়া জাল জালালি ওয়াল ইকরাম।’ নবী (সা.) বলেন, এই ব্যক্তি ইসমে আজম দ্বারা দোয়া করেছে, যে নামে ডাকলে তিনি সাড়া দেন এবং যে নামে তার কাছে চাওয়া হলে তিনি দান করেন। (আবু দাউদ, হাদিস : ১৪৯৫)

ইসমে আজমের আরও দোয়া

একদিন রাসুল (সা.) নামাজের পর দোয়ারত জায়েদ ইবনে সামেত (রা.)-এর পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। দোয়াতে তিনি বলছিলেন, ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আস-আলুকা বি-আন্না লাকাল হা'মদু লা-ইলা-হা ইল্লা-আনতা ওয়াহ'দাকা লা-শারিকা লাকাল মান্না-ন, ইয়া বাদিআ'স্ সামা-ওয়া-তি ওয়াল আরদ্বি, ইয়া জাল জালালি ওয়াল ইকরাম। ইয়া হাইয়্যু ইয়া কাইয়্যুম।’

তখন রাসুল (সা.) তাকে বললেন, ‘তুমি আল্লাহর দরবারে ইসমে আজমের মাধ্যমে দোয়া করেছ, যার মাধ্যমে দোয়া করলে আল্লাহ তাআলা কবুল করেন এবং কিছু চাইলে তা দান করেন।’ (মুসনাদে আহমদ, হাদিস : ১২২০৫)

বুরাইদা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) দুইজন লোককে এটা বলতে শুনেছেন যে— 

কোরআনে ইসমে আজম

আসমা বিন ইয়াজিদ (রা.) সূত্রে বর্ণিত, রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘ইসমে আজম এই দুটি আয়াতের মধ্যে নিহিত। সুরা বাকারার ৩৬৩ নম্বর আয়াত এবং সুরা আল ইমরানের ১ নম্বর আয়াত।’ (সুনানে আবি দাউদ, হাদিস : ১৪৯৬)