প্রতীকী ছবি

অনেক সময় মানুষ অভিশাপ দিয়ে বসে। কেউ কেউ অপছন্দের লোকের প্রতি আল্লাহর গজব নেমে আসা কামনা করে। তার ওপর বিপদ-আপদ হুমড়ি খেয়ে পড়ার অপেক্ষা করে। তার যেকোনো ধরনের ক্ষতি ও ধ্বংস কামনা করে।

এটা হয়তো রাগে অগ্নিশর্মা হয়ে কিংবা তার কাছ থেকে বিভিন্ন সময় নির্যাতন ও নিগ্রহের শিকার হয়ে। কিন্তু আশ্চর্য হলেও সত্য যে, এমন গর্হিত কাজ কিছু মানুষের অভ্যাসে পরিণত হয়ে যায়। অথচ ইসলামের দৃষ্টিতে কাউকে বদদোয়া দেওয়া কিংবা কারো জন্য অভিশাপ কামনা করা সম্পূর্ণ হারাম। এই ধরনের কাজ থেকে বেঁচে থাকা একান্ত কর্তব্য।

অভিশাপ দেওয়া সবসময় হারাম

অনেক সময় অভিশাপ হিতেবিপরীত হয়। কাউকে অভিশাপ দিলে সেটা নিজের ওপর নেমে আসে। অন্যের বিপদ ও ক্ষতি কামনা করলে— নিজের কপালে বিপদ জুটে। এটা হাদিস শরিফে স্পষ্ট উল্লেখ আছে। আল্লাহ সবাইকে রক্ষা করুন।

কোনো মুসলমান অন্য মুসলমানকে অভিশাপ দেয়া সর্বাবস্থায় হারাম। এমনকি নির্দিষ্ট কোনো অমুসলিমকেও লানত কিংবা অভিশাপ করা যাবে না— যতক্ষণ না কুফরি অবস্থায় তার মৃত্যু সম্পর্কে নিশ্চিত হবে। হাদিসে রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘প্রকৃত মুসলমান সেই ব্যক্তি, যার জিহ্বা ও হাত থেকে অন্য মুসলমান নিরাপদ থাকে।’ (তিরমিজি, হাদিস : ২৬২৭; আবু দাউদ, হাদিস : ২৪৮১)

কষ্ট পেলেও অভিশাপ নয়

অপর মুসলমান কষ্ট পেতে পারে— এমন কাজ করা কোনো মুসলমানের জন্য শোভা ‍পায় না। কখনো অজান্তে কাউকে কষ্ট দিয়ে ফেললে, বোঝার সঙ্গে সঙ্গে তার কাছে মাফ চেয়ে নেওয়া উত্তম চরিত্রের বহিঃপ্রকাশ। তেমনিভাবে কারো কাছ থেকে কোনো জুলুমের শিকার হলেও তাকে ক্ষমা করে দেওয়াই মহৎ চরিত্রের পরিচায়ক।
 
হাদিসে এসেছে, ‘রাসুল (সা.) বলেছেন, যে তোমার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে, তুমি তার সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করো, যে তোমাকে বঞ্চিত করে, তুমি তাকে তুষ্ট করো, যে তোমার প্রতি জুলুম করে, তুমি তার সঙ্গে উত্তম ব্যবহার (ক্ষমা) করো। (মুসনাদে আহমদ, হাদিস : ১৭৩৩৪)

মুমিন কাউকে অভিশাপ দেয় না

কাউকে অভিশাপ দেওয়া কোনো মুমিনের জন্য শোভনীয় নয়। হাদিসে এসেছে, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘মুমিন কখনো অভিসম্পাতকারী হয় না। ’ (তিরমিজি, হাদিস : ২০৮৮)

রাসুল (সা.) আরো বলেছেন, ‘তোমরা পরস্পর আল্লাহর লানত, তার গজব ও জাহান্নামের অভিশাপ দেবে না।’ (তিরমিজি, হাদিস : ১৯৮৬)

অভিসম্পাতকারী আখেরাতেও মান-মর্যাদা পাবে না। রাসুল (সা.) বলেন, কিয়ামতের দিন অভিশাপকারীরা সুপারিশ করতে পারবে না এবং সাক্ষ্যপ্রদানও করতে পারবে না। (মুসলিম, হাদিস : ২৫৯৮)

এ সব হাদিস দ্বারা এ কথা সহজেই অনুমেয় হয় যে- অন্যায়ভাবে কাউকে অভিশাপ দেওয়া অত্যন্ত গর্হিত কাজ। প্রিয়নবী (সা.) অভিশাপ ও অভিশাপকারীকে পছন্দ করেননি।

অভিশাপ উল্টো ধেয়ে আসতে পারে...

রাসুল (সা.) বলেছেন, যখন কোনো বান্দা কোনো ব্যক্তিকে অভিশাপ দেয়, তখন অভিশাপ আকাশে চলে যায়, আকাশের দরজাগুলো তার জন্য বন্ধ হয়ে যায়, অতঃপর তা জমিনের দিকে  নেমে আসে। তখন জমিনের দরজাগুলোও তার থেকে বন্ধ করে দেয়া হয়, অতপর তা ডানে বাঁয়ে ঘুরতে থাকে, যখন কোনো  উপায় না পায়, তখন যাকে অভিসম্পাত করা হয়েছে, সে যদি এর যোগ্য হয়, তাহলে তার প্রতি পতিত হয়। অন্যথায় অভিশাপকারীর দিকেই ধাবিত হয়। (আবু দাউদ, হাদিস : ৪৯০৭)

ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত অন্য হাদিসে এসেছে, এক ব্যক্তি রাসুল (সা.)-এর বাতাসকে লানত (অভিশাপ) দিল, তখন নবীজি বললেন, বাতাসকে লানত দিও না, কেননা এ তো আল্লাহরপক্ষ থেকে নির্দেশিত। কেউ যদি কোনো বস্তুকে লানত বা অভিশাপ দেয়, আর সে যদি ওই লানতের পাত্র না হয়, তাহলে সেই লানত লানতকারীর দিকেই ফিরে আসে। (তিরমিজি, হাদিস : ১৯৭৮; আবু দাউদ : ২/২৭৬)

তাই খুবই সতর্ক থাকা উচিত। কারণ, লানত বা অভিশাপ যাকে দেওয়া হয়— সে অভিশাপের উপযুক্ত না হলে, অভিশাপ তার দিকে যায় না। বরং অভিশাপকারীর দিকেই উল্টো ফিরে আসে। আল্লাহ তাআলা আমাদের সব অনিষ্ট ও বিপদাপদ থেকে রক্ষা করুন।