হলি কোরআন অ্যাকাডেমি

পবিত্র কোরআনবিষয়ক সর্ববৃহৎ কমপ্লেক্স ‘হলি কোরআন অ্যাকাডেমি’। সংযুক্ত আরব আমিরাতের শারজা শহরে অবস্থিত। বহুমুখী লক্ষ্য নিয়ে এই অ্যাকাডেমি নির্মাণের পরিকল্পনা করা হয়। তন্মধ্যে কোরআন সংশ্লিষ্ট প্রয়োজনীয় জ্ঞান-বিজ্ঞানের পাঠদান, কোরআনভিত্তিক বিশ্বমানের গবেষণা জার্নাল প্রকাশ, কোরআনের ইতিহাস-ঐতিহ্য সংরক্ষণে সমৃদ্ধ জাদুঘর স্থাপন ইত্যাদি অন্যতম।

এটির নির্মাণ কাজ শুরু হয় ২০১৮ সালে। গত বছরের ২৪ ডিসেম্বর শারজাহর আমির ও প্রশাসক ড. সুলতান বিন মুহাম্মদ আল-কাসিমি অ্যাকাডেমির আনুষ্ঠানিক কার্যক্রমের শুভ উদ্বোধন করেন।

সবচেয়ে বড় কোরআন কমপ্লেক্স

৭৫ হাজার বর্গমিটার জায়গার ওপর নির্মিত এই কমপ্লেক্স। ইসলামি ঐতিহ্যের আট তারকার আদলে ডিজাইন করা হয়েছে। গবেষক ও বোদ্ধা মহলের ধারণা, এটিই বিশ্বের সর্ববৃহৎ ও সমৃদ্ধতম কোরআন কমপ্লেক্স।

আধুনিক আমিরাতের স্থাপত্যরীতির আলোকে— ফাতেমি, মামলুকি ও আন্দালুসি সাম্রাজ্যের স্থাপত্যের মিশেলে কমপ্লেক্সের নকশা করা হয়। মূল ভবনের ছাদে রয়েছে ৩৪টি দৃষ্টিনন্দন গম্বুজ।

কোরআন কমপ্লেক্সে যা রয়েছে

কোরআনবিষয়ক সাতটি পৃথক জাদুঘর রয়েছে কোরআন কমপ্লেক্সে। কোরআনের প্রাচীন ও দুর্লভ পান্ডুলিপির কপি রয়েছে। রয়েছে সাত কেরাত ও দশ কেরাতের ইতিহাস, কারীদের জীবনী, কোরআনের ঐতিহাসিক নিদর্শনাবলি। আরও রয়েছে কাবা শরিফের গিলাফ ও নবীজির বাসগৃহে ব্যবহৃত পর্দা।

 

এছাড়াও কোরআন সংকলনের ধারা-বিবরণী এবং কোরআনের আলোকে সৃষ্টিজগৎ ও মানবজাতির বৈজ্ঞানিক বয়ানের সমৃদ্ধ সংগ্রহশালা এ সাত জাদুঘর। কোরআন নাজিলের ঘটনার বিবরণ স্পষ্টভাবে বোঝাতে এতে— বানানো হয়েছে কৃত্রিম হেরা গুহা। সেখানে রয়েছে প্রযুক্তির মাধ্যমে কোরআন নাজিলের ঘটনাকে জীবন্ত করে তোলার প্রয়াস।

কোরআনের পান্ডুলিপি সংগ্রহশালায় যা আছে

গত ১৫ শতকের ৬০টি দুর্লভ পান্ডুলিপি। বিভিন্ন দেশের সরকারিভাবে মুদ্রিত কোরআনের হার্ডকপি ও সফট কপিসহ সর্বমোট ৩০৮টি সংগ্রহ রয়েছে। এছাড়াও যুগে যুগে কোরআন লিপিবদ্ধ করার কাজে ব্যবহৃত নানা যন্ত্রপাতি রয়েছে।

আরও রয়েছে— বিভিন্ন দেশের রাজা-বাদশাহদের উদ্দেশ্যে লেখা আল্লাহর রাসুল (সা.)-এর মোহরাঙ্কিত ৬টি দুর্লভ চিঠি।

কেরাত জাদুঘরের সংগ্রহ

সাত কেরাত ও দশ কেরাতবিষয়ক প্রয়োজনীয় সংগ্রহ রাখা হয়েছে— দশভাগে বিভক্ত কেরাত জাদুঘরে। সেখানে কেরাতশাস্ত্র, কারীদের পরিচিতি এবং কেরাতের পার্থক্যগুলো ভিজ্যুয়ালি দর্শকের সামনে তুলে ধরা হয়েছে। দেখানো হয়েছে— কারীদের সনদ কীভাবে রাসুল (সা.) পর্যন্ত পৌঁছে।

কোরআন সংশ্লিষ্ট গত ১৫ শতকের ঐতিহাসিক নিদর্শনাবলিকে ১৫টি শাখায় ভাগ করা হয়েছে আরেকটি জাদুঘরে। যুগে যুগে কোরআন বিষয়ে গবেষণাকারী প্রতিষ্ঠানগুলোরও পরিচিত তুলে আনা হয়েছে সবিস্তারে।

বিশ্ববিখ্যাত কারীদের জাদুঘর

আরেকটি জাদুঘর রয়েছে বিশ্ববিখ্যাত কারীদের নিয়ে। সারা বিশ্বের বিখ্যাত কারীদের চারভাগে ভাগ করে— সেখানে তাদের জীবনী, কর্ম ও অবদান তুলে ধরা হয়েছে। বিশ্ববিখ্যাত নারী কারীদের জন্যও আলাদা আর্কাইভ রয়েছে।

আরেকটি জাদুঘরে রয়েছে— কাবাঘরের ১৮টি গিলাফ ও রাসুল (সা.)-এর ঘরের পর্দা। আরও রয়েছে— কাবাঘরের দরজার ও দরজার ওপরের কভারের নমুনা। ইসলামের প্রথম যুগ থেকে আজকের দিন পর্যন্ত কাবার কী কী পরিবর্তন হয়েছে, কীভাবে হয়েছে, প্রযুক্তির মাধ্যমে তা সম্পূর্ণভাবে দর্শনার্থীদের সামনে তুলে ধরার ব্যবস্থা রয়েছে।

আরেক জাদুঘরে আধুনিক বিজ্ঞান-বিষয়

আধুনিক বিজ্ঞানের যেসব আবিষ্কার কোরআনের বয়ানকে সত্য প্রমাণ করে— সেসব বিষয় ফুটিয়ে তুলতে আরেকটি জাদুঘর রয়েছে। এই জাদুঘরটি দশটি শাখায় বিভক্ত। পৃথিবী ও মানুষের সৃষ্টিতত্ত্বের বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা বর্ণনা করে— কোরআনের মহিমা এ অংশে তুলে ধরা হয়।

লাইব্রেরি অংশে রয়েছে— কোরআনের অনুবাদ, তাফসির ও এ বিষয়ক গ্রন্থের বিশাল সংগ্রহ। রয়েছে লাইব্রেরির ডিজিটাল সুযোগ-সুবিধাও।

ই-লাইব্রেরিতে ৫০ হাজার গবেষণা গ্রন্থ

কোরআনবিষয়ক ৫০ হাজার গবেষণা গ্রন্থ ই-লাইব্রেরিতে যুক্ত করা হয়েছে। এছাড়াও কমপ্লেক্সে কেরাত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা রয়েছে। পৃথিবীর যেকোনো প্রান্তের শিক্ষার্থীরা অনলাইনে এখানকার অভিজ্ঞ শিক্ষকের কাছে হিফজ ও কেরাত বিষয়ে পড়াশোনা করতে পারেন।

বিশ্বমানের কেরাত প্রশিক্ষণের জন্য অত্যাধুনিক ল্যাবের ব্যবস্থা রয়েছে। অভিজ্ঞ কারীদের তেলাওয়াত রেকর্ড করার জন্য রয়েছে স্টুডিও সুবিধাও।

ঢাকা পোস্টের ইসলাম বিভাগে আপনিও লিখতে পারেন। বিষয়ভিত্তিক প্রবন্ধ-নিবন্ধ ও জীবনঘনিষ্ঠ প্রশ্ন পাঠাতে মেইল করুন : dhakapostislam@gmail.com