ওমর ইবনুল খাত্তাব (রা.)-এর মেয়ে ছিলেন হাফসা বিনতে ওমর (রা.)। মোনবী (সা.) নবুয়ত লাভের পাঁচ বছর আগে তিনি মক্কায় জন্মগ্রহণ করেন। সৌন্দর্য, বুদ্ধিমত্তা ও ধর্মভীরুতায় তিনি ছিলেন অনন্য।

হাফসার (রা.) প্রথম স্বামী

তার প্রথম স্বামী ছিলেন কুরাইশ গোত্রের সাহসী সাহাবি খুনাইস ইবন হুযাফা আস-সাহামি (রা.)। তিনি ইসলামের সূচনালগ্নে হাবশা ও মদিনায় হিজরত করেন এবং বদর ও উহুদের যুদ্ধে অংশ নেন। উহুদের যুদ্ধেই তিনি গুরুতর আহত হন ও পরে শহীদ হন। তখন হাফসার বয়স মাত্র ১৮ বছর।

ওমরের (রা.) শোক

এতো অল্প বয়সে মেয়ে বিধবা হওয়ায় ওমর (রা.) গভীরভাবে মর্মাহত হন। স্বামী হারা মেয়ের মেয়ের দুঃখ ঘোঁচাতে আবারো তাকে যোগ্য জীবনসঙ্গীর হাতে তুলে দিতে চাইলেন।

আবু বকর ও উসমানের (রা.) কাছে প্রস্তাব

প্রথমে তিনি নবী করিম (সা.)-এর ঘনিষ্ঠ সাহাবি আবু বকর (রা.)-এর কাছে হাফসা বিয়ের প্রস্তাব দেন। কিন্তু আবু বকর (রা.) কোনো উত্তর দিলেন না। এতে ওমর (রা.) কষ্ট পেলেন। এরপর তিনি উসমান ইবনে আফফান (রা.)-এর কাছে প্রস্তাব রাখলেন। উসমান তখন নিজের স্ত্রী ও নবীজির কন্যা রুকাইয়া (রা.)-এর মৃত্যুতে শোকাহত ছিলেন। উসমান (রা.) বিনয়ের সঙ্গে বললেন, এখন বিয়ের সময় নয়।

দু’জনের কাছ থেকে হতাশাব্যঞ্জক উত্তর পেয়ে ব্যথিত হলেন ওমর (রা.)। নবীজির কাছে  বিষয়টি তুলে ধরলেন। নবী (সা.) হাসলেন এবং বললেন, হাফসার জন্য এমন স্বামী অপেক্ষা করেছেন, যিনি উসমানের চেয়েও উত্তম। আর উসমান পাবেন এমন স্ত্রী, যিনি হাফসার চেয়েও উত্তম। (সহিহ বুখারি)

নবীজির (সা.) সঙ্গে বিয়ে

এর অল্প কিছুদিন পরেই নবী করিম (সা.) নিজেই হাফসা (রা.)-কে বিবাহ করেন। একই সময়ে উসমান (রা.) নবীজির আরেক কন্যা উম্মে কুলসুম (রা.)-কে বিয়ে করেন।

নবীজি হাফসাকে বিয়ে করায় ওমর (রা.)-এর আনন্দের সীমা রইল না। তার মেয়ে নবীজির গৃহিণী হওয়ার বিষয়টি তিনি গর্বভরে জানাতে লাগলেন সবাইকে।

ওমর (রা.)-এর প্রস্তাবে আবু বকর (রা.) চুপ থাকার কারণ নিয়ে পরবর্তীতে বলেছিলেন, ‘নবী (সা.) আগে থেকেই হাফসার প্রসঙ্গ তুলেছিলেন। তাই আমি তাঁর গোপন কথা প্রকাশ করতে পারিনি। যদি নবী (সা.) তাঁকে বিয়ে না করতেন, আমি অবশ্যই তাঁকে বিয়ে করতাম’।

মদিনার মানুষ হাফসার (রা.) সঙ্গে নবী করিম (সা.)-এর বিয়েতে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে। হিজরতের তৃতীয় বছরের শাবান মাসে উম্মুল মুমিনিন হিসেবে নবীজির  পবিত্র গৃহে প্রবেশ করেন হাফসা (রা.)।

নবীজির (সা.) ঘরে হাফসা (রা.)

হাফসার বিয়ের সময় নবীজির ঘরে অন্য স্ত্রীদের মধ্যে সাওদা বিনতে জামআ ও আয়েশা (রা.)। সাওদা (রা.) তাকে সাদরে গ্রহণ করলেও আয়েশা (রা.) শুরুতে কিছুটা উদ্বিগ্ন ছিলেন, কারণ বয়স ও অবস্থানে তারা প্রায় সমান ছিলেন। তবে পরবর্তীতে তাদের মধ্যে গভীর বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে।

পরে আয়েশা (রা.) ও হাফসা (রা.) ঘনিষ্ঠ বন্ধু হয়ে যান। এমনকি তারা একবার নবী (সা.)-কে মৃদু এক কৌশলে বিব্রতও করেছিলেন।

আয়েশার (রা.) সঙ্গে হাফসার (রা.) বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক

সহিহ বুখারির একটি বর্ণনায় আয়েশা (রা.) বলেন, নবীজি (সা.) জয়নব বিনতে জাহশ (রা.)-এর ঘরে মধু খেতেন। হাফসা ও আমি ঠিক করলাম, তিনি আমাদের কারও ঘরে এলে আমরা বলব—আপনার মুখে মাগাফির ফুলের গন্ধ পাচ্ছি। আমাদের কথা শুনে নবীজি (সা.) বললেন, না, আমি জয়নবের ঘরে মধু খেয়েছি, তবে এখন থেকে আর খাব না।

নবী (সা.)-এর শ্বাসে কোনো গন্ধ থাকলে তিনি তা অপছন্দ করতেন। তাই তিনি মধু খাওয়া বন্ধ করেন। এরপর আল্লাহ তায়ালা কোরআনে ওহী নাজিল করেন— হে নবী, কেন তুমি সেই জিনিস নিজের জন্য হারাম করছ, যা আল্লাহ তোমার জন্য হালাল করেছেন, তোমার স্ত্রীদের সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য? আল্লাহ তো পরম ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। (সুরা আত-তাহরীম, আয়াত : ১–২)

এনটি