মহানবীর (সা.) জান্নাতি স্ত্রী হওয়ার সুসংবাদ পেয়েছিলেন যিনি
রাসুল (সা.)-এর স্ত্রীদের একজন ছিলেন ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা হজরত ওমর (রা.)-এর মেয়ে হাফসা বিনতে ওমর (রা.)। মাত্র ১৮ বছর বয়সে প্রথম স্বামী হারান হাফসা (রা.)। এরপর বাবা ওমর (রা.)-এর সম্মতিতে রাসুল (সা.)-এর সঙ্গে বিয়ে হয় তার।
হাফসা বিনতে ওমর (রা.) রাসুল (সা.)-এর সঙ্গে জান্নাতে থাকার সুসংবাদ পেয়েছিলেন। সুসংবাদ প্রাপ্তির প্রাথমিক ঘটনাটি তেমন সুখকর নয়। কারণ, হাফসা (রা.) মহানবী (সা.)-এর একটি গোপন বিষয় জানতেন। কিন্তু তার আয়েশা (রা.)-কে জানিয়ে দেন। তখন আল্লাহ তার রাসুল (সা.)-কে এ সম্পর্কে অবহিত করে দিলেন। রাসুল (সা.) হাফসা (রা.)-কে তালাক দিতে চাইলেন। কিন্তু আল্লাহ তায়ালা জিবরীল আলাইহিস সালামকে প্রেরণ করে তাকে তালাক থেকে বিরত রাখেন এবং বলে দেন যে, হাফসা (রা.) অনেক সালাত আদায় করেন এবং অনেক রোজা রাখেন। তার নাম জান্নাতে আপনার স্ত্রীগণের তালিকায় লিখিত আছে। (মুস্তাদরাকে হাকিম : ৪/১৬)
বিজ্ঞাপন
পরে হাফসা (রা.) গভীর অনুশোচনায় কাতর হয়ে নবী করিম (সা.)-এর কাছে ক্ষমা চান। নবী (সা.) তাকে ক্ষমা করেন এবং তাদের সংসারে পুনরায় শান্তি ফিরে আসে।
হাফসা (রা.) ছিলেন স্পষ্টভাষী, দৃঢ়চেতা ও মেধাবী। তিনি নবী করিম (সা.)-কে কোনো বিষয়ে প্রশ্ন করতে দ্বিধা করতেন না। একবার নবী (সা.) বললেন, বদর ও হুদায়বিয়ার যুদ্ধে অংশ নেওয়া সাহাবিরা জাহান্নামে যাবে না। সঙ্গে সঙ্গে হাফসা (রা.) জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসুল, আল্লাহ তো বলেছেন, তোমাদের প্রত্যেককেই জাহান্নামের ওপর দিয়ে যেতে হবে।
বিজ্ঞাপন
নবী (সা.) উত্তর দিলেন, হ্যাঁ, কিন্তু আল্লাহ আরও বলেছেন, ‘আমি মুত্তাকিদের রক্ষা করব এবং জালেমদের সেখানে হাঁটু গেড়ে রাখব।’ (সুরা মারইয়াম, আয়াত : ৭২)
তিনি তার পিতা ওমর (রা.)-এরও অত্যন্ত প্রিয় ও ঘনিষ্ঠ ছিলেন। নারীদের বিষয়ে ওমর (রা.) প্রায়ই তার পরামর্শ নিতেন। একবার তিনি দেখলেন, এক নারী তার প্রবাসী স্বামীকে নিয়ে কবিতা লিখছে। এতে তিনি চিন্তিত হয়ে হাফসাকে জিজ্ঞেস করলেন, একজন নারী স্বামী ছাড়া কতদিন থাকতে পারে? হাফসা উত্তর দিলেন, ছয় মাস। এরপর ওমর (রা.) প্রত্যেক যোদ্ধাকে ছয় মাস পর পরিবারের কাছে ফেরত পাঠাতে নির্দেশ দিলেন।
নবী করিম (সা.)-এর ইন্তেকালের পর যখন আবু বকর (রা.) খলিফা হন, তখন কোরআনের প্রথম সংরক্ষিত কপি হাফসা (রা.)-এর কাছে রাখা হয়। তিনি অত্যন্ত যত্নে এই মূল্যবান দায়িত্ব পালন করেন।
পরে উসমান (রা.)-এর খেলাফতের সময় কোরআনের একক মানক কপি প্রস্তুতের জন্য হাফসা (রা.)-এর কাছে থাকা সেই পাণ্ডুলিপি চাওয়া হয়। তিনি শর্ত দেন, কাজ শেষে তা তাকে ফিরিয়ে দিতে হবে। কাজ সম্পন্ন হলে তা ফিরিয়ে দেওয়া হয়। মুসলিম উম্মাহর সবার জন্য কোরআনের কপি উন্মুক্ত করতে হাফসা (রা.)-এর মৃত্যুর পর তার সংরক্ষণ থেকে কপিটি নিয়ে নেওয়া হয় এবং সবার জন্য উন্মুক্ত করা হয়।
হাফসা (রা.)-এর মেধা ও ধর্মপরায়ণতা ছিল বিস্ময়কর। তিনি নবী করিম (সা.) থেকে ৬০টি হাদিস বর্ণনা করেছেন, যার মধ্যে চারটি সহিহ বুখারি ও মুসলিমে রয়েছে।
২৩ হিজরিতে যখন ওমর (রা.) শহীদ হন, তখন হাফসা (রা.) তার সমস্ত দলিল, সম্পদ ও কোরআনের কপি সংরক্ষণের দায়িত্ব নেন। মৃত্যুর আগে তিনি ওসিয়ত করে যান, যেন তার সম্পত্তি গাহবার স্থানে সদকা হিসেবে দান করা হয়।
যৌবনের প্রথম দিকেই নবীজির স্ত্রী হন তিনি। এরপর ৮ বছর মদিনায় নবীজির সহধর্মিণী হিসেবে সংসার করেছেন। নবীজির ইন্তেকালের পর চৌত্রিশ বছর বেঁচে ছিলেন। ইসলামের বিস্তার ও বিজয় এবং উৎসব দেখেছেন, আবার উসমান (রা.)-এর শাহাদাতের পর মুসলিম সমাজের বিভাজনও দেখেছেন।
৪৭ হিজরিতে মুয়াবিয়া ইবন আবু সুফিয়ান (রা.)-এর শাসনামলে ৬৩ বছর বয়সে ইন্তেকাল করেন তিনি।