মুসলমানদের আত্মশুদ্ধি ও রমজানের প্রস্তুতির সূচনাকাল বলা হয় রজব মাসকে। এই মাসকে ঘিরে কিছু ঐতিহাসিক ঘটনা, কোরআনের নির্দেশনা এবং আত্মিক উন্নয়নের সুযোগ রয়েছে। কীভাবে রজবকে কাজে লাগিয়ে আধ্যাত্মিকভাবে আরও উন্নতি করা যায়। এমন কিছু পরামর্শ তুলে ধরা হলো—

রজব মাস সম্পর্কে কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য

রজব মাসকে বলা হয় রজবুল হারাম অর্থাৎ পবিত্র রজব। এটি চারটি সম্মানিত মাসের একটি, যে মাসে যুদ্ধ ও সংঘাত নিষিদ্ধ। আবার একে রজবুল ফারদও বলা হয়, কারণ এটি অন্য তিন পবিত্র মাস জিলকদ, জিলহজ ও মুহাররম থেকে আলাদা এবং তাদের পাচ মাস পর আসে।

এই মাসেই সংঘটিত হয়েছিল ঐতিহাসিক ইসরা ও মিরাজ। যে রাতে আল্লাহ তায়ালা নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বিশেষ সম্মানে ভূষিত করেন।

ইসলাম-পূর্ব যুগে আরবরা রজবে মূর্তির উদ্দেশ্যে কোরবানি দিত। ইসলাম শিক্ষা দিয়েছে যে, ইবাদত ও কোরবানি শুধু আল্লাহর জন্যই নির্ধারিত। এটাই ইসলামের সুস্পষ্ট শিক্ষা।

 রজব মাসকে পবিত্র বলা হয় কেন?

রজবসহ চারটি মাসকে পবিত্র বলা হয় দুই কারণে। এক, এই সময় যুদ্ধ নিষিদ্ধ, যদি না শত্রুপক্ষ আক্রমণ শুরু করে। দুই, এই মাসগুলোতে সীমালঙ্ঘন ও পাপের পরিণতি অন্য সময়ের তুলনায় বেশি গুরুতর।

কোরআনে বলা হয়েছে, এই মাসগুলোতে নিজেদের ওপর জুলুম কোরো না। নিজের ওপর জুলুম বলতে পাপ কাজে লিপ্ত হওয়া ও ভ্রান্ত বিশ্বাস পোষণ করা বোঝানো হয়েছে। যেহেতু আল্লাহ নিজেই এই মাসগুলোকে বিশেষ মর্যাদা দিয়েছেন, তাই এগুলোর পবিত্রতা রক্ষা করা প্রত্যেক মুসলমানের দায়িত্ব।

আত্মসমালোচনার সময়

এই পবিত্র মাসগুলো আমাদের জন্য আত্মসমালোচনার সুযোগ। আমরা ইবাদতে কতটা অসলতা করি, কথা ও কাজে কতটা সচেতন থাকি, কোরআনের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক কেমন, নিজেকে এসব প্রশ্ন করা জরুরি। 

রজব মাসের উপকারিতা পাওয়ার ৬ কার্যকর পরামর্শ

নিয়ত ঠিক করুন

সব কিছুর শুরু নিয়ত দিয়ে। রজব মাসের আমলের উদ্দেশ্য হোক, শারীরিক ও মানসিকভাবে রমজানের জন্য প্রস্তুত হওয়া।

ক্ষমা চান এবং ক্ষমা করুন

কেউ পাপমুক্ত নয়। তাই আল্লাহর কাছে আন্তরিকভাবে তওবা করুন, আল্লাহর কাছে ক্ষমা চান। পাশাপাশি অন্যদের ভুল ক্ষমা করে দিন, যাতে হৃদয় হিংসা ও বিদ্বেষমুক্ত থাকে এবং রমজানে ইবাদতে মন বসে।

অতিরিক্ত কিছু রোজা রাখুন

রজব মাসে বিশেষ কোনো রোজার ফজিলত সম্পর্কে সহিহ কোনো বর্ণনা নেই। তবে সোম ও বৃহস্পতিবার, অথবা চান্দ্র মাসের মধ্যবর্তী তিন দিন রোজা রাখা সুন্নত। মানসিক ও শারীরিক প্রস্তুতির জন্য এটি কার্যকর অনুশীলন।

নিজেকে সংযত করার চর্চা করুন

নফসের চাহিদা কমাতে ছোট ছোট অনুশীলন শুরু করুন। যেমন, সহজ, স্বাভাবিক খাবার খাওয়া, অতিরিক্ত মিষ্টি বা অপ্রয়োজনীয় ভোগ এড়িয়ে চলা। এতে রমজানে আত্মসংযম সহজ হবে।

দান-সদকার বিষয়ে সচেতন হোন

রজবে আল্লাহর সন্তুষ্টির নিয়তে দান করুন। কাউকে সাহায্য করা, খাবার রান্না করে দেওয়া, সুন্দর কথা বলা, মাকে হাসানো কিংবা কোনো খারাপ অভ্যাস ছাড়ার চেষ্টাও সদকার অন্তর্ভুক্ত।

বেশি বেশি দোয়া করুন

আল্লাহর কাছে ক্ষমা চান, রমজান পর্যন্ত পৌঁছার তাওফিক চান এবং পূর্ববর্তী রমজানগুলোর ইবাদত কবুলের জন্য দোয়া করুন।

এনটি