ছবি : সংগৃহীত

বৈশ্বিক মহামারি করোনা ভাইরাসের প্রকোপ নতুন করে আবার বেড়ে চলেছে। তবুও আরেকটি বড় উৎসবের অপেক্ষায় বিশ্বের মুসলিম উম্মাহ। দিন বিশেক পরেই আসছে তাদের দ্বিতীয় বৃহৎ ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল আজহা। প্রতি বছরের তুলনায় আসন্ন ঈদ গত বছরের মতো একটু ভিন্ন ও অন্য রকম।

প্রাণঘাতী মহামারি করোনায় জনজীবন মারাত্মকভাবে আক্রান্ত। বহু মানুষের জীবন ও জীবিকায় তৈরি হয়েছে নানা সঙ্কট। তাই গত বছর কেউ কেউ  বলছিলেন, এবারের ঈদে কোরবানির বদলে তারা নির্ধারিত অর্থ অভাবী ও দারিদ্রের মধ্যে দানের কথা বলছেন।

কিন্তু এমনটা করা কি জায়েজ? কোরবানির বদলে অর্থ দান করলে কোরবানি আদায় হয়? এমন বিষয় সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ দিয়েছেন ভারতের বিশিষ্ট ইসলামিক স্কলার ও জমিয়তে ওলামায়ে হিন্দের সভাপতি মাওলানা কারি সাইয়েদ মুহাম্মাদ উসমান মানসুরপুরি। ভারতের মিল্লাত টাইমসে প্রকাশিত নিবন্ধটি নিম্নে তুলে ধরা হলো। অনুবাদ করেছেন বেলায়েত হুসাইন

কোরবানির মৌলিক বিধান

কোরবানি ইসলামের অন্যতম নিদর্শন। এটি ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। সামর্থ্যবানের জন্য কোরবানি করা আবশ্যক। সামর্থ্যের পরও কেউ কোরবানি না করলে হাদিসে তার ব্যাপারে কঠোর হুশিয়ারি এসেছে। রাসুল (সা.)ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি সামর্থের পরও কোরবানি দেয় না সে যেন আমাদের ঈদগাহে না আসে। (আত তারগিব ওয়াত তারহিব, পৃষ্ঠা : ২৫৬)

রাসুল (সা.) আরও বলেছেন, ‘আল্লাহর কাছে কোরবানির দিনগুলোতে (জিলহজ মাসের ১০, ১১ ও ১২ তারিখ) কোরবানির চেয়ে অধিক পছন্দনের কোনো আমল নেই।’ (তিরমিজি, হাদিস : ১৪৯৩)

কোরবানির বদলে অর্থ দান জায়েজ?

তাই কোরবানির দিনগুলোতে বুদ্ধিমান, প্রাপ্তবয়স্ক, মুকিম এবং নির্ধারিত পরিমাণ সম্পদের মালিকের ওপর শর্তানুসারে পশু জবাই করা ওয়াজিব। নির্ধারিত দিনে সামর্থবান হওয়ার পরও কোরবানি না দিয়ে বিকল্প হিসেবে এর মূল্য দান করলে কোরবানি আদায় হবে না।

অতএব কোরবানির বদলে দান-সদকা যথেষ্ট নয়; বরং নির্ধারিত ব্যক্তির ওপর কোরবানিই করতে হবে। পক্ষান্তরে নিজ শহর ও রাজ্যে পশু জবাইয়ে নিষেধাজ্ঞা থাকলে, অন্যকোনো স্থানে গ্রহণযোগ্য ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের সহায়তায় পশু কোরবানির ব্যবস্থা নেওয়া আবশ্যক।

আর কোরবানির দিন অতিবাহিত হয়ে গেলেও নিজে বা কারো মাধ্যমে কোরবানি আদায় করা সম্ভব হয়নি, এমন পরিস্থিতিতে দুই ধরনের পন্থা হতে পারে। এক. আগ থেকে পশু ক্রয় করা থাকলে তা জীবিত সদকা করতে হবে। তা একজন বা একাধিক ব্যক্তি ক্রয় করুক। দুই. পশু ক্রয় করা না থাকলে মধ্যম পর্যায়ের একটি ছাগলের মূল্য বা বড় পশুর এক সপ্তমাংশের মূল্য সদকা করতে হবে।

জরুরি সতর্কতা কাম্য

চলমান মহামারির সঙ্কটাপন্ন পরিবেশে কোরবানিদাতা অবশ্যই স্বাস্থ্যবিধি মেনে পশু জবাই করবে। বিশেষত পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতার প্রতি গভীর দৃষ্টি রাখবে। পশুর বর্জ্য রাস্তাঘাট ও নদী-নালায় ফেলা যাবেনা; বরং তা প্লাস্টিকের ব্যাগে ভরে নির্দিষ্ট স্থানে ফেলার ব্যবস্থা করবে।

পরিষ্কার অভিযান সুন্দরভাবে পরিচালনার জন্য পৌরকর্মীদের যথাসাধ্য সহায়তা করা প্রত্যেক নাগরিকের কর্তব্য। এ কথা মনে রাখা জরুরি, আমার দ্বারা যেন কেউ সামান্য পরিমাণও কষ্ট না পায়।