পিরামিড, মিশর। ছবি : সংগৃহীত

ফেরআউন, ফেরাউন বা ফিরআউন- এসব একক কোনো ব্যক্তির নাম নয়। যুগ যুগ ধরে প্রাচীন গণপ্রজাতন্ত্রী মিসরকে রাজত্ব করা শাসকদের নাম এসব। তারা ‘ফারাও’ হিসেবেও পরিচিত। প্রাচীন মিসরীয় বিভিন্ন সভ্যতায় তাদের স্থিতি ছিল।

ফেরাউনের নাম শোনোনি এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। আমাদের দেশে কেউ কারো প্রতি জুলম করলে নির্যাতনকারীকে ‘ফেরাউন’র সঙ্গে তুলনা করা হয়। কারো ঔদ্ধত্য প্রকাশ পেলে তাকেও ফেরাউনের কথা বলে সংশোধন করার চেষ্টা করা হয়।

পিরামিডের কারণেও তারা বিখ্যাত। প্রগৈতিহাস সময়কালে ফারাও বা ফেরআউনরা এসব নির্মাণ করেছিল। তবে আমাদের কাছে ফেরাউন বিখ্যাত তার ঔদ্ধত্য, জিঘাংসা, হঠকারিতা, পাষণ্ডতা ও সীমালঙ্ঘন এবং কুফুরি ও আল্লাহবিরোধীতার কারণে। (ইনসাইক্লোপিডিয়া অব ব্রিটানিকা; ফারাও : ১৭/৬/২০১৮)

ফিরআউনের কথা পবিত্র কোরআনে বেশ কয়েকবার এসেছে। আল্লাহ তাআলা কোরআনে বলেন—

‘আর বনী-ইসরাঈলকে আমি নদী পার করিয়ে দিয়েছি। তারপর ফেরাউন ও তার সেনাবাহিনী দুরাচারিতা ও বাড়াবাড়ির উদ্দেশে তাদের পিছু নিয়েছে। এমনকি যখন ডুবতে শুরু করলো, তখন বলল- এবার বিশ্বাস করে নিচ্ছি যে, বনী-ইসরাইল যে আল্লাহর প্রতি ঈমান এনেছে, তিনি ছাড়া আর কোনো উপাস্য নেই; বস্তুত আমিও একজন মুসলিম।’

(সুরা ইউনুস, আয়াত : ৯০)

ইতিহাসে যারা ফেরাউন নামে প্রসিদ্ধ
ফেরাউন নামধারী ব্যক্তি ইতিহাসে অনেকজন রয়েছে। ইহুদি ঐতিহাসিক জোসেফের মতে আহমস হলো মিসরের প্রধান ফেরাউন। তার এই ধরনের দাবির উদ্দেশ্য হলো- মিসরে ইহুদিদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করা। পাশাপাশি এই ব্ক্তব্যও তুলে ধারা যে, ইসরাইলিরা ছিল মিসরের প্রাচীন শাসক। (ফারাও, জোশুয়া জে মার্ক; ০২-০৯-২০০৯; www.ancient.eu)

কিন্তু তার দাবিকৃত তথ্যটি ভুল। কারণ, আহমস ছিল দক্ষিণাঞ্চলীয় মিসরের শাসক। মিসরীরা তখন ডেল্টা নদীর পূর্বে বাস করতো। সে সূত্রে মুসা (আ.)-এর মা কীভাবে তার সঙ্গে মিলিত হবেন। অথচ এমনটা হলে, দূরত্ব হওয়ার কথা বহু দীর্ঘ। ফলে নিয়মিত মুসা (আ.)-এর সঙ্গে সাক্ষাৎ তার পক্ষে সম্ভব নয়।

থুতমোজ দ্বিতীয় (মুসা (আ.)-এর বিরোধী)
এই মতামতটি দিয়েছেন জি. ডি. মিস্লি। তিনি তার মতের পক্ষে তাওরাতের দলিল দেন। কেননা, প্রাচীন মিসরীয়রা চামড়া ফুলে যাওয়া রোগে আক্রান্ত হতো। আর ঠিক ওই ধরনের ফুলে ওঠা রোগ থুতমোজের লাশের মমিতেও ছিল বলে বিভিন্ন আলামত তারা পেয়েছেন। আবার অন্য সূত্রে জানা যায়, থুতমোজ তৃতীয় ও তার প্রপৌত্র চর্ম রোগে আক্রান্ত ছিলেন। তবে এসব সত্ত্বেও এই মতামতটি পুরোপুরি নির্ভরযোগ্য নয়।

থুতমোজ তৃতীয়
এই মতের ব্যাপারে বেশ কিছু মতামত রয়েছে। কারণ, থুতমোজ তৃতীয় নিজেকে প্রভু দাবি করেনি, যেমনটা ফেরাউন করেছে। বরং তিনি বিনয়ী ও সুন্দর আচরণে অভ্যস্ত ছিলেন।

তুতানখামুন
এই বক্তব্যটি সিগমুন্ড ফ্রয়েডের। তিনি আরও বলেছিলেন যে মূসা মিশরীয় ছিলেন এবং ইস্রায়েলীয়দের থেকে নয়। তার ধর্মটি আখেনাতোনের মতবাদ থেকে নেওয়া হয়েছিল। তিনি নেতা বা শাসক হতে চেয়েছিলেন। পরে হতাশ হয়ে তিনি দেশ ত্যাগ করে ইসরায়েলের সন্তানদের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। তিনি আখেনাতোনের কাছ থেকে যে ধর্মবিশ্বাস নিয়ে এসেছিলেন, তিনি সেটা তাদের কাছে প্রচার করেছিলেন।

এই তত্ত্বটি অনেক বাস্তবিক তথ্যের বিরোধী। যেমন মুসা মিশরীয় নন; অথচ তিনি ফেরাউনের প্রাসাদে লালিত-পালিত হয়েছিলেন। আর এটি কোনো যুক্তিতে ধরে না যে, এমন কেউ কোনো জাতিকে শাসন করবে, অথচ সে ওই জাতির সদস্য নয়। এই তত্ত্বটি দাবি করেছে যে, তিনি শান্তিপূর্ণভাবে চলে গিয়েছিলেন। অথচ ফেরাউনের শরীরের বিশ্লেষণে বলা হয়েছে যে, তিনি মাথার আঘাতে মারা গিয়েছিলেন।

রামেসেস দ্বিতীয়
অধিকাংশ ইতিহাসবিদ ও উলামায়ে কেরাম একমত যে, রামেসেস দ্বিতীয় হচ্ছে মুসা (আ.)-এর সময়কালের ফেরাউন। এ ক্ষেত্রে অনেকগুলো তথ্য ও প্রমাণ্যতা রয়েছে যে, সে অন্যতম প্রথম ব্যক্তিদের একজন যে নিজেকে প্রভু দাবি করেছিল। পাতাহ ও আমুন উপাস্যের পাশে নিজের জন্য একটি ভাষ্কর্য নির্মাণ করেছিল। তার নিরাপত্তারক্ষী ও সৈন্য-সামন্তরা তার উপাসনা শুরু করেন। পরবর্তীতে সগ্র জাতি তাকে উপাসনা করতে শুরু করে।

তার অনেকগুলো উপাধি ছিল। মঙ্গল উপাস্য, উভয় জাহানের প্রভু, আসমান-জমিনের প্রতিপালক, আকাশের মালিক, অবিনশ্বর, সৃষ্টিকর্তা, পবিত্রতাকারী ইত্যাদি।

মুসা (আ.)-এর সময়কালের ফেরাউনের সঙ্গে রামেসিস দ্বিতীয়ের অনেক কিছুর মিল রয়েছে। এছড়াও রামেসিস সুউচ্চ সৌধ নির্মাণ করেছিল বলে ইতিহাসে রয়েছে। (মুহাম্মদ শামরুখ, বাইনাল আকতাশাফাত ওয়াল আকাইদ আস-সুআল লা ইয়াযালু মাতরুহান; ফিরআউনু মুসা.. মান হুয়া? : ১৭-০৬-২০১৮; www.ahram.org.eg)