ছবি : সংগৃহীত

বাকশক্তি আল্লাহর দেওয়া অন্যতম বড় নেয়ামত। এই নেয়ামতের কদর করে কথা বলতে হবে— জেনে-বুঝে ও হিসাব করে। মুখ আছে বলেই সব কথা বলা যাবে না। কারণ, মানুষের প্রতিটি কাজ-কর্ম ও কথা লিপিবদ্ধ করা হয়। দায়িত্বপ্রাপ্ত ফেরেশতা তা রেকর্ড করে নেয়। তাতে কোনো গুনাহ থাকুক বা না থাকুক।

আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘মানুষ যে কথাই উচ্চারণ করে তা লিপিবদ্ধ করার জন্য তৎপর প্রহরী তার সঙ্গেই রয়েছে।’ (সুরা কাফ, আয়াত : ১৮)

তাই কথা বললে— সবসময় উত্তম ও কল্যাণকর কথা বলার চেষ্টা করতে হবে। যদি উত্তম কথা বলার উদ্দেশ্য বজায় রাখা সম্ভব না হয়, তবে চুপ থাকা ভালো। এটা একটি ইবাদত ও উত্তম কাজ।

শায়খ বকর ইবনে আবদুল্লাহ আল-মুজানি (রহ.)-কে চুপ থাকা নিয়ে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল— আপনি এত দীর্ঘ সময় চুপ থাকেন কেন? তিনি জবাব দেন, আমার জিহ্বা হিংস্র একটা জীবের মতো— যদি আমি ছেড়ে দিই; তাহলে এটা আমাকে খেয়ে ফেলবে। (বাহজাতুল মাজালিস: ০১/১১)

ঈমানদার ব্যক্তি অনর্থক কথা বলে না

আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে আল্লাহ ও পরকালের ওপর ঈমান রাখে, সে যেন উত্তম কথা বলে; নতুবা চুপ থাকে।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ১০২)

আবু হুরাইরা (রা.) হতে বর্ণিত হাদিসে আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহ ও শেষ দিনের প্রতি বিশ্বাস রাখে, সে যেন ভাল কথা বলে; নচেৎ চুপ থাকে।’ (বুখারি, হাদিস : ৬০১৮; মুসলিম, হাদিস : ১৮২)

আবু মুসা (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসুল (সা.)-কে জিজ্ঞাসা করলাম, ‘হে আল্লাহর রাসুল! সর্বোত্তম মুসলিম কে?’ তিনি বললেন, যার জিহ্বা ও হাত থেকে মুসলিমরা নিরাপদ থাকে। (বুখারি, হাদিস : ১১, মুসলিম, হাদিস : ১৭২)

অযথা কথা না বলা জান্নাতে প্রবেশের মাধ্যম

আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) মহানবী (সা.)-কে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল! শ্রেষ্ঠ আমল কী?’ তিনি উত্তরে বললেন, যথা সময়ে নামায পড়া। অতঃপর জিজ্ঞাসা করেন যে, ‘তারপর কী? হে আল্লাহর রাসুল!’ তিনি বললেন, তোমার জিহবা থেকে লোককে নিরাপদে রাখা।’ (তাবারানি, হাদিস : ২৮৫২)

আবু আবদুর রহমান বিলাল ইবনে হারেস মুজানি (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘মানুষ আল্লাহ তাআলার সন্তোষমূলক এমন কথা বলে, আর সে কল্পনাও করে না যে, তা কোথায় গিয়ে পৌঁছবে, আল্লাহ তার দরুন তার সাক্ষাতের দিন পর্যন্ত তার জন্য সন্তুষ্টি লিখে দেন। পক্ষান্তরে মানুষ আল্লাহ তাআলার অসন্তোষমূলক এমন কথা বলে, আর সে কল্পনাও করে না যে, তা কোথায় গিয়ে পৌঁছবে, আল্লাহ তার দরুন তার সাক্ষাতের দিন পর্যন্ত তার জন্য অসন্তুষ্টি লিখে দেন। (মালিক, হাদিস : ২৬৫; আহমাদ, হাদিস : ১৫৮৫২; তিরমিজি, হাদিস : ২৩১৯; ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৩৯৬৯; ইবনে হিব্বান, হাদিস : ২৮০; সিলসিলাতুস সহিহাহ, হাদিস : ৮৮৮)

সাহল ইবনে সাদ (রা.) হতে বর্ণিত হাদিসে রাসুল (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি দুই চোয়ালের মধ্যবর্তী (অঙ্গ জিভ) এবং দুই পায়ের মধ্যবর্তী (অঙ্গ গুপ্তাঙ্গ) সম্বন্ধে নিশ্চয়তা দেবে, আমি তার জন্য জান্নাতের নিশ্চয়তা দেবো।’ (বুখারি, হাদিস : ৬৪৭৪; (তিরমিজি, হাদিস : ২৪০৯)