ঈদের নামাজ পড়ছে জিম্বাবুয়ের মুসলিমরা। ছবি : সংগৃহীত।

আফ্রিকা মহাদেশের দক্ষিণাঞ্চলীয় দেশ জিম্বাবুয়ে। প্রাচীন নাম দক্ষিণ রোডেশিয়া। স্বল্প আয়ের দেশ এই দেশ ১৯৮০ সালের ১৮ এপ্রিল যুক্তরাজ্য থেকে স্বাধীনতা অর্জন করে। মোট আয়তন ৩ লাখ ৯০ হাজার ৭৫৭ বর্গ কিলোমিটার।

দেশটির উত্তর সীমান্তে রয়েছে জাম্বিয়া, দক্ষিণে দক্ষিণ আফ্রিকা। পূর্বে মোজাম্বিক ও পশ্চিমে বোতসোয়ানা। দেশটি অর্থনৈতিকভাবে কৃষিপ্রধান। তবে খনিজসম্পদের পাশাপাশি উৎপাদন ব্যবস্থাও রয়েছে। জিম্বাবুয়েতে বেশ কয়েকটি ভাষা প্রচলিত। ইংরেজি ও আরবিরও প্রচলন রয়েছে।

জনসংখ্যা ও অন্যান্য

সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স এজেন্সির সর্বশেষ (জুলাই ২০১৮) পরিসংখ্যান অনুযায়ী জিম্বাবুয়ের মোট জনসংখ্যা প্রায় ১ কোটি ৪০ লাখ ৩০ হাজার ৩৬৮ জন। অন্যান্য ধর্মাবলম্বীর তুলনায় জিম্বাবুয়েতে মুসলিমের সংখ্যা কিছুটা কম। জিম্বাবুয়ের ইসলামিক সেন্টারের পরিসংখ্যান মোতাবেক সেদেশে মুসলমানের সংখ্যা ২ লাখের একটু বেশি।

দীর্ঘ এক শতাব্দী পর ১৯৮০ সালে জিম্বাবুয়ে ব্রিটিশ উপনিবেশবাদ থেকে স্বাধীনতা লাভ করে। স্বাধীনতা অর্জন করতে জিম্বাবুয়ের জনগণকে বিশ বছর ধরে লড়াই করতে হয়েছে। উপনিবেশ আমলে খ্রিস্টধর্ম ছিল জিম্বাবুয়ের রাষ্ট্রীয় ধর্ম। কিন্তু স্বাধীনতার পর রাষ্ট্রীয়ভাবে ধর্মনিপেক্ষতার ঘোষণা দেওয়া হয়। সে সূত্রে জিম্বাবুয়ের মুসলমানরা কোনো প্রকার বিঘ্নতা ছাড়া ধর্মচর্চা ও দ্বীনের প্রচার-প্রসারের ক্ষেত্রে ব্যাপক স্বাধীনতা লাভ করে।

যেভাবে জিম্বাবুয়েতে ইসলামের আগমন

জিম্বাবুয়েতে ইসলাম দুই পর্যায়ে আগমন করে। প্রথম পর্যায় ছিল ইউরোপীয়রা জিম্বাবুয়েতে উপনিবেশ সাম্রাজ তৈরির আগে। তখন জিম্বাবুয়ের পশ্চিমাঞ্চলীয় দেশ মোজাম্বিকের সমূদ্রপথ দিয়ে আরব-মুসলিম বণিকদের সঙ্গে স্থানীয় জিম্বাবুয়াইনদের ব্যবসায়িক সম্পর্ক গড়ে ওঠে। আরব বণিকরা তখন জিম্বাবুয়ের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় মাসুইঞ্জো শহরের ওয়ারিম্বা গোত্রের সঙ্গে ব্যবসায়িক লেনদেন করে। আরব-বণিকদের কাছে গোত্রটি তখন ইসলাম গ্রহণ করে। কিন্তু বিভিন্ন কারণে-অকারণে তাদের ব্যবসায়িক সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে যায়।

ফলে মুসলমানদের সঙ্গে সম্পর্ক অব্যাহত রাখতে না পারায় ওয়ারিম্বা গোত্রের লোকেরা ক্রমান্বয়ে ইসলাম থেকে দূরে সরতে থাকে। এক সময়ে এসে তাদের শুধু কিছু ইসলামী রীতি-নীতি ও শিক্ষা কার‌্যক্রম অবশিষ্ট ছিল। তারা গোত্রের প্রথা অনুযায়ী এসব রীতি-নীতি পালন করতো। ইসলাম পালনের ক্ষেত্রে তারা শুধু শূকরের মাংস ও অমুসলিমের জবাইকৃত জন্তুর মাংস না খাওয়া এবং সাক্ষাতে সালাম বিনিময় ও কয়েকটি সুরা মুখস্থ রাখা ইসলামের মৌলিকতা ভাবতো।

সত্তরের দশকে আরব দেশগুলোর বিভিন্ন মুসলিম ধর্ম প্রচারকরা ওয়ারিম্বা জাতি সম্মন্ধে জানতে পারে। ফলে তারা এ গোত্রের পেছনে অনেক সময় ব্যয় করে পুনরায় তাদের সঠিক ইসলাম ধর্ম নিয়ে আসার ব্যবস্থা করে।

জিম্বাবুয়ে ক্রিকেটদলের অধিনায়ক সিকান্দার রাজা। ফারাজ আকরাম নামে জাতীয়দলে আরও একজন ক্রিকেটার আছেন।

জিম্বাবুয়েতে দ্বিতীয় পর্যায়ে ইসলাম

দ্বিতীয় পর্যায়ে ইসলাম জিম্বাবুয়েতে আগমন করে উপনিবেশবাদের মাধ্যমে। তখন ব্রিটিশরা ভারতবর্ষ থেকে অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়ে আসে, যাদের সিংহভাগ ছিল মুসলিম। এছাড়াও কৃষি সংক্রান্ত বিভিন্ন কাজের জন্য তারা পার্শ্ববর্তী মোজাম্বিক ও মালাবি থেকে অনেক লোক নিয়ে আসে। তাদেরও অধিকাংশ ছিল ‍মুসলিম।

মোট তিন ধরনের জাতিগত মুসলিম রয়েছে বর্তমান জিম্বাবুয়েতে। এক. এশিয়ান বংশোদ্ভুত মুসলিম। দুই. মালাবি ও মোজাম্বিক বংশোদ্ভুত মুসলিম। তিন. ওয়ারিম্বা ও অন্যান্য গোত্রের স্থানীয় মুসলমান।

জিম্বাবুয়ের একটি মসজিদ।

গত দুই দশকে বিভিন্ন দেশের মুসলিমরা জিম্বাবুয়েতে নাগরিকত্ব নিয়ে বসবাস শুরু করায় বড় শহরগুলোতে কিছু কিছু মুসলিম এলাকা গড়ে উঠেছে। তারা সাধারণত ব্যবসা-বাণিজ্য ও চিকিৎসা ও প্রকৌশল পেশায় জড়িত।

জিম্বাবুয়েতে ধর্মীয় শিক্ষাঙ্গন

জিম্বাবুয়ের রাজধানী হারারেতে একটি ইসলামিক সেন্টার রয়েছে। সেন্টারটির নাম ‘ইকরা দারুল ইলম’। বেশ কয়েকটি সমৃদ্ধ সংস্থাও রয়েছে। এছাড়াও আরো বেশ কয়েকটি বেসরকারি সংস্থা রয়েছে। তারা বিভিন্নভাবে সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করে থাকে।

জিম্বাবুয়ের প্রধান মুফতি ইসমাইল ইবনে মুসা মেঙ্ক সারাবিশ্বে বিখ্যাত। তিনি গত কয়েক বছর ধরে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ প্রভাবশালী মুসলিমদের তালিকায় সেরা দশে স্থান পেয়েছেন।

জিম্বাবুয়ের প্রতি ৫০টি মুসলিম-পরিবার মিলে একটি ধর্মীয় শিক্ষাঙ্গন প্রতিষ্ঠা করেছে। এছাড়াও ছোট-খাটো আরো কিছু ধর্মীয় শিক্ষালয় গড়ে ওঠেছে। যেগুলোতে ক্রমাগত শিক্ষার্থীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। অন্যদিকে জিম্বাবুয়ের জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে ইসলামিক স্টাডিজ ও আরবিভাষা শিক্ষা অনুষদ চালু রয়েছে।

জিম্বাবুয়েতে ১শ’র বেশি মসজিদের পাশাপাশি কয়েকশ’ নামাজঘর আছে। প্রত্যেকটিতে বিকেলে মক্তব-শিক্ষার ব্যবস্থা রয়েছে। জিম্বাবুয়ের মুসলিম বোদ্ধারা মনে করছেন, দাওয়াত-তাবলিগ ও ধর্মীয় শিক্ষা ব্যবস্থার কার্যক্রম নিয়মতান্ত্রিকভাবে চালু থাকলে মুসলিমদের সংখ্যা ক্রমাগত বৃদ্ধি পাবে।