প্রতীকী ছবি

পৃথিবীর সবচেয়ে শ্রুতিমধুর ও হৃদয়গ্রাহী ধ্বনি আজান। তাবৎ বিশ্বের ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে— অসংখ্য ও অগণিত মানুষের প্রাণের অনুধাবন এটি। আজানের ব্যাপারে ইসলামের গুরুত্ব অনেক বেশি। আজান শোনা ও আজানের জবাব দেওয়া— ইসলাম ইবাদত হিসেবে আখ্যা দিয়েছে।

আজান শোনা ও আজানের উত্তর দেওয়া সুন্নত। যারা আজান শুনবেন, তারা মৌখিকভাবে জবাব দেবেন। এ প্রসঙ্গে আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেন, ‘যখন তোমরা আজান শুনবে, তখন জবাবে মুয়াজ্জিনের মতো তোমরাও তা বলবে।’ (বুখারি, হাদিস: ৬১১)

আজানের সময় কিছু কাজ করা হয়। এগুলো হয়তো প্রথা হয়ে দাঁড়িয়েছে কিংবা বিদআত-কুসংস্কারে পরিণত হয়েছে। যেগুলো করার ব্যাপারে শরিয়তে কোনো ধরনের নির্দেশ দেওয়া হয়নি। পাঠকদের জানার জন্য এখানে চারটি উল্লেখ করা হলো—

এক. আজানে ‘আল্লাহু আকবার’-এর জবাবে কেউ কেউ ‘জাল্লা জালালুহু’ পড়ে থাকেন। অথচ এটার কোনো নিয়ম নেই। বরং এটি সুন্নাহপরিপন্থী। (ইমদাদুল আহকাম: ১/৪১৬)

দুই. আজানের সময় জবাব দেওয়ার সময় অনেকে ‘আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসুলুল্লাহ’-এর জবাবে ‘সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ বলে থাকে। এটিও শরিয়ত কর্তৃক অনুমোদিত নয়। কেননা এ সময় দরুদ পড়ার কোনো নির্দেশ নেই। (আলবাহরুর রায়েক: ১/২৭৩, আহসানুল ফাতাওয়া: ২/২৭৮)

বরং তখনো মুয়াজ্জিনের অনুরূপ বলাই সর্বোতভাবে সুন্নত। আর এই দরুদ পাঠ করতে হয় আজান শেষ হওয়ার পরে। (আহসানুল ফাতাওয়া : ২/২৭৮; আল-বাহরুর রায়েক : ১/২৭৩)

তিন. আমাদের দেশে আরেকটি বিষয় দেখা যায় যে— আজানে মুআজ্জিন ‘আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসুলুল্লাহ’ বলার সময় অনেকেই বৃদ্ধাঙ্গুলে চুমু খেয়ে থাকেন। এরপর চোখে-মুখে আঙ্গুল মুছেন। কেউ কেউ আবার সঙ্গে ‘কুররাত আইনি’ দোয়াও পড়ে থাকেন। অথচ শরিয়তে এর কোনো প্রমাণ-ভিত্তি নেই। সুতরাং এটিও বর্জন করা জরুরি। (আল-মাকাসিদুল হাসানা, পৃষ্ঠা ৬০৬; ইমদাদুল ফাতাওয়া : ৫/২৫৯)

চার. অনেকগুলো কুপ্রথার সঙ্গে আমাদের দেশে কিছু জায়গায় প্রচলিত আছে যে, আজানের সময় কোনো কথা-কাজে ব্যস্ত থাকলে ঈমানহারা হয়ে যেতে হয়। আবার কেউ কেউ বলে বসেন, আজানের জবাব না দিলে— ঈমান ছাড়া মৃত্যু হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। অথচ এই ধরনের কোনো বর্ণনা বা কথা হাদিসের কিতাবগুলোতে নেই। সুতরাং এটি ভ্রান্ত ধারণা ও বিশ্বাস, তাই এটিও পরিত্যাজ্য। (ফাতাওয়া মাহমুদিয়া : ৫/৪৩০