প্রতীকী ছবি

সদকায়ে জারিয়া কী? কাকে বলে সদকায়ে জারিয়া? অনেক মানুষ সদকা সম্পর্কে এবং সদকায়ে জারিয়া সম্পর্কে বেশ শুনলেও হয়ত সুস্পষ্টভাবে জানেন না যে, সদকায়ে জারিয়া মূলত কাকে বলে কিংবা কী। তাদের জেনে রাখার সুবিধার্থে সদকায়ে জারিয়া সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত পরিসরে আলোচনা করা হলো।

‘সদকায়ে জারিয়া’ বা ‘সাদাকাতুন জারিয়াহ্’ আরবি শব্দ। সদকা শব্দের অর্থ দান করা। আর জারিয়া শব্দের অর্থ প্রবহমান, সদাস্থায়ী প্রভৃতি। সদকায়ে জারিয়া হলো- এমন দান যার কার্যকারিতা কখনো শেষ হবে না এবং তা কিয়ামত পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে। অর্থাৎ এই পৃথিবী যত দিন থাকবে, তত দিন পর্যন্ত কবরে শুয়ে শুয়ে সদকাকারী ব্যক্তি এর সওয়াব পেতেই থাকবে। তাই প্রত্যেক মুসলমানের উচিত সদকায়ে জারিয়ার আমলের সঙ্গে নিজেকে সম্পৃক্ত রাখা। তবে দান কাউকে দেখানোর উদ্দেশ্যে নয় বরং শুধুমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের নিয়তে করতে হবে।

যে আমলের সওয়াব মৃত্যুর পরও চালু থাকবে

আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেন, ‘যখন মানুষ মারা যায় তখন তার আমল স্থগিত হয়ে যায়, কেবল তিনটি আমল ছাড়া; সদাকায়ে জারিয়া, কিংবা এমন জ্ঞান— যা থেকে মানুষ উপকৃত হয় কিংবা এমন সন্তান— যে তার জন্য দোয়া করে। (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ১৬৩১)

ইমাম নববি এই হাদিসের ব্যাখ্যায় বলেন, ‘সদকায়ে জারিয়া হলো— ওয়াক্‌ফ।’ (শারহু মুসলিম : ১১/৮৫)

আল-খাত্বীব আশ্‌-শারবিনি (রহ.) বলেন, ‘সদাকায়ে জারিয়াকে আলেমগণ ওয়াক্‌ফ হিসেবে ব্যাখ্যা করেন; যেমনটি বলেছেন রাফেয়ি। ওয়াক্‌ফ ছাড়া অন্যান্য দানগুলো জারি বা চলমান নয়।’ (মুগনিল মুহতাজ : ৩/৫২২-৫২৩)

অন্য দান ও সদকায়ে জারিয়ার পার্থক্য

সদকায়ে জারিয়া হলো— ওই দান ব্যক্তির মৃত্যুর পরেও যেই দানের সওয়াব অব্যাহত থাকে। পক্ষান্তরে যে সদকার সওয়াব অব্যাহত থাকে না; উদাহরণস্বরূপ গরিবদের খাওয়ানো সেটি সদাকায়ে জারিয়া নয়।

উপরের আলোচনার আলোকে বোঝা যায় যে, রোজাদারদের ইফতার করানো, এতিমের অভিভাবকত্ব গ্রহণ ও বৃদ্ধাশ্রমের পৃষ্ঠপোষকতা গ্রহণ (যদিও সদাকার অন্তর্ভুক্ত হোক না কেন) কিন্তু এগুলো সদাকায়ে জারিয়া নয়। কেউ এতিমদের জন্য কিংবা বৃদ্ধদের জন্য ঘর নির্মাণে অংশ গ্রহণ করতে পারে, তবে সেটা সদাকায়ে জারিয়া হবে। যতদিন এ ঘরের উপযোগিতা থাকবে, ততদিন এর সওয়াব পেতে থাকবে।

সদাকায়ে জারিয়ার প্রকার ও উদাহরণ

সদাকায়ে জারিয়ার প্রকার ও উদাহরণ অনেক। যেমন— মসজিদ নির্মাণ, গাছ লাগানো, কুপ খনন, মুসহাফ (কুরআনগ্রন্থ) ছাপানো ও বিতরণ, বই-ক্যাসেট ছাপানো ও বিতরণের মাধ্যমে ইল্‌মের প্রচার করা।

সদকায়ে জারিয়া সম্পর্কে অনেক হাদিস রয়েছে। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত এক হাদিসে রাসুল (সা.) বলেন— 

মুনযিরি (রহ.) বলেন, এর সনদ হাসান। আলবানি হাদিসটিকে ‘সহিহু সুনানে ইবনে মাজাহ’ গ্রন্থে ‘হাসান’ বলেছেন। (আত-তারগিব ওয়াত তারহিব : ১/৭৮)

সদকায়ে জারিয়ায় যেসব কাজ হতে পারে

১. রক্ত দান করার মাধ্যমে। ২. এতিমের লালন-পালনের দায়িত্ব নেওয়া। ৩. মসজিদ নির্মাণ কিংবা মসজিদের প্রয়োজনীয় আসবারের ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখা। ৪. প্রয়োজনীয় এলাকায় পানীয় জলের ব্যবস্থা করে দেওয়া। ৫. কোরআন শিক্ষা দেওয়া বা কোরআন শিক্ষা ব্যবস্থাপ করে দেওয়া।

৬. অসহায়-দুঃস্থ মানুষের চিকিৎসা সেবার ব্যবস্থায় হাসপাতাল নির্মাণ কিংবা চিকিৎসা সামগ্রীর ব্যবস্থা করে দেওয়া। ৭. কবরস্থানের জন্য জমি দান করা কিংবা জমি ক্রয়ে আর্থিক সহায়তা করা। মৃতদের সৎকারের খরচ জোগানো কিংবা বহনের জন্য এ্যাম্বুলেন্স ক্রয়ে সাহায্য করা। ৮. মুসলমানদের কল্যাণে আসে এমন ইসলামি বই-তাফসির, হাদিস, ফিকাহ শাস্ত্রের বই-পুস্তক মুদ্রণ কিংবা বিতরণে সহায়তা করা। ৯. অত্যাচারিত মুসলমান সম্প্রদায়ের পাশে দাঁড়ানো। ১০. গাছ লাগানো, যেটার ফল ও অক্সিজেনের মাধ্যমে মানুষ উপকৃত হবে।