প্রতীকী ছবি

হিজরি নববর্ষ ১৪৪৩ সমাগত। হিজরি সন মুসলমানদের সাল। হিজরি সন চান্দ্র মাস পরিক্রমায় আবর্তিত হওয়ায় মুসলমানের জন্য এই সনের তাৎপর্য ব্যাপক। মুসলমানদের উচিত এর অনুসরণ করা। এ ক্ষেত্রে উদাসীনতা কাম্য নয়।

হিজরি সনের ব্যাপারে খোঁজখবর রাখা— উম্মতের ওপর ফরজে কিফায়া। অর্থাৎ কেউ কেউ এর খবরাখবর রাখলে সবার দায়িত্ব আদায় হয়ে যাবে। কিন্তু এ বিষয়ে যদি সবাই এবং সর্বক্ষেত্রে উদাসীনতা দেখা যায়, তাহলে প্রত্যেকেই গুনাহগার হবে। কিন্তু প্রয়োজনের কারণে অন্য ক্যালেন্ডার অনুসরণ করা অবৈধ নয়। বিশেষত খ্রিস্টাব্দ ও বঙ্গাব্দ বাংলাদেশে অনুসরণ করা হয়। এগুলোর অনুসরণে ইসলামের নিষেধাজ্ঞা নেই। 

পবিত্র কোরআনে আল্লাহ সূর্য, চন্দ্র উভয়কে হিসাব-নিকাশ ও বর্ষ গণনার জন্য সৃষ্টি করেছেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন। মহান আল্লাহ বলেন— 

উমর (রা.) যেভাবে হিজরি সন চালু করেন

হিজরতের ঐতিহাসিক ঘটনাকে স্মারক বানিয়ে ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা হজরত উমর (রা.) হিজরি নববর্ষের গোড়াপত্তন করেন। তিনিই সর্বপ্রথম মুসলমানদের জন্য পৃথক ও স্বতন্ত্র চান্দ্রমাসের পঞ্জিকা প্রণয়ন করেন। কেন একটি নতুন সন গণনা প্রথা চালু করতে হলো— এ নিয়ে বিভিন্ন অভিমত পাওয়া যায়।

আল্লামা আইনির বিবরণ দেখুন : হিজরি সন প্রণয়নের কারণ নিয়ে মতবিরোধ আছে। ইবনে সমরকন্দি বলেন, আবু মুসা আশআরি (রা.) উমর (রা.)-এর কাছে চিঠি লিখেছেন যে আপনার পক্ষ থেকে আমাদের কাছে অনেক ফরমান আসে; কিন্তু তাতে তারিখ লেখা থাকে না। সুতরাং সময়ক্রম নির্ধারণের জন্য সন গণনার ব্যবস্থা করুন। তারপর উমর (রা.) হিজরি সনের গোড়াপত্তন করেন। আল্লামা ইবনুল আসির (রহ.) ‘আল কামিল ফিত তারিখে’ এটিকে প্রসিদ্ধতম ও বিশুদ্ধতম অভিমত বলে আখ্যায়িত করেছেন। (আল কামিল ফিত তারিখ, খণ্ড ১, পৃ. ৮)

হিজরি সনের চালুর ক্ষেত্রে আরও বিবরণ

আল্লামা আইনি (রহ.) তারপর লিখেছেন, আবুল ইকজান বলেছেন, উমর (রা.)-এর কাছে একটি দলিল পেশ করা হয়, যেখানে শুধু শাবান মাসের কথা লেখা হয়। তিনি বলেন, এটি কোন শাবান! এ বছরের শাবান, নাকি আগামী বছরের শাবান? তারপর হিজরি সন প্রবর্তন করা হয়। ইতিহাসবিদ আল্লামা শিবলী নোমানি (রহ.) এ অভিমতকে প্রাধান্য দিয়েছেন। (আল ফারুক, পৃষ্ঠা ১৯৫)

আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, যখন উমর (রা.) সন প্রবর্তনের সিদ্ধান্ত নেন তখন তিনি পরামর্শসভার আহ্বান করেন। সভায় সাদ বিন আবি ওয়াক্কাস (রা.) রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর ওফাত থেকে সন গণনার প্রস্তাব দেন। হজরত তালহা (রা.) নবুয়তের বছর থেকে সন গণনার অভিমত ব্যক্ত করেন। আলী (রা.) হিজরতের ঐতিহাসিক ঘটনা থেকে বর্ষ গণনার প্রস্তাব দেন। তারপর তাঁরা সবাই আলী (রা.)-এর প্রস্তাবে ঐকমত্য পোষণ করেন। এরপর কোন মাস থেকে শুরু হবে—এ নিয়ে মতপার্থক্য দেখা দেয়। আবদুর রহমান বিন আউফ (রা.) রজব থেকে শুরু করার প্রস্তাব দেন। কেননা এটি চারটি সম্মানিত মাসের মধ্যে প্রথমে আসে। তালহা (রা.) রমজান থেকে শুরু করার কথা বলেন। কেননা এটি উম্মতের মাস। আলী (রা.) ও উসমান (রা.) মহররম থেকে শুরু করার পরামর্শ দেন। (উমদাতুল কারি : ১৭/৬৬)